নাটকের ভর্তুকিতে কেন্দ্রের কোপ! ত্রয়োবিংশ নাট্যমেলার উদ্বোধনে সরব ব্রাত্য

আজ চিন্তাশীল মানুষের সাংস্কৃতিক ভাবনাতে রাজনীতির নামে যেভাবে আঁচড় কাটতে চাইছে কেন্দ্র, সংস্কৃতিবান বাংলা তা মেনে নেয় না।

নাটকের দর্পণে সমাজের প্রতিফলন ঘটে। এই জলের আলপনা যেন প্রতিমুহূর্তে সৃষ্টি আর বিলুপ্তির রূপান্তরে বাঁচার রসদ দিয়ে যায়। এই সংস্কৃতির মাধ্যমে রাজনৈতিক প্রাসঙ্গিকতা উঠে এলেও নাটকে যেন কখনও রাজনীতির কোপ না পড়ে। বিদ্বজনের এই আশা আজ প্রশ্নচিহ্নের মুখে। একদিকে দল-মত নির্বিশেষে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee) বাংলার জেলায় জেলায় নাটকের সুদূরপ্রসারী বিস্তারে দুহাত উজাড় করে দিয়েছেন। তাই ত্রয়োবিংশ নাট্যমেলার (23rd Theatre Festival) উদ্বোধনে এসে তৃণমূল বিরোধী হিসেবে পরিচিত বিখ্যাত নাট্য ব্যক্তিত্ব আর এই নাট্যমেলার উদ্বোধক কৌশিক সেনও (Kaushik Sen) অকপটে স্বীকার করলেন, এ রাজ্য শিল্পকে স্বাধীনতা দেয়। কিন্তু যেভাবে কেন্দ্র ক্রমাগত রাষ্ট্রকে মধ্যযুগের দিকে ঠেলে দিচ্ছে তার বিরুদ্ধে গর্জে ওঠা দরকার। রবীন্দ্রসদনের মঞ্চে তাই সরব শিক্ষামন্ত্রী, নাট্যকার, অভিনেতা ব্রাত্য বসু (Bratya Basu)। তাঁর কথায়, অসহিষ্ণুতার সংস্কৃতি আমাদের দেশের নয়। তবু আজ চিন্তাশীল মানুষের সাংস্কৃতিক ভাবনাতে রাজনীতির নামে আঁচড় কাটতে চাইছে কেন্দ্র, সংস্কৃতিবান বাংলা তা মেনে নেয় না।

জেলায় জেলায় নাট্যমেলার পর শনিবার কলকাতার রবীন্দ্রসদন প্রেক্ষাগৃহে নাটকের মহোৎসবের উদ্বোধন। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্যোগে রাজ্য সরকারের তথ্য ও সংস্কৃতি দফতরের তত্ত্বাবধানে ত্রয়োবিংশ নাট্যমেলার আয়োজন করেছে পশ্চিমবঙ্গ নাট্য অ্যাকাডেমি (Paschimbongo Natya Academy)। এদিন উপস্থিত ছিলেন কৌশিক বসাক ( সংস্কৃতি অধিকর্তা, তথ্য ও সংস্কৃতি দফতর), শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু, সেচমন্ত্রী পার্থ ভৌমিক (Partha Bhowmik), বিশিষ্ট নাট্য ব্যক্তিত্ব ও উৎসবের উদ্বোধক কৌশিক সেন, অর্পিতা ঘোষ (Arpita Ghosh), পশ্চিমবঙ্গ নাট্য অ্যাকাডেমির সভাপতি দেবশঙ্কর হালদার (Debshankar Haldar), দেবকুমার হাজরা (সচিব, তথ্য ও সংস্কৃতি দফতর)। আজ থেকে আগামী ১৩ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত তিলোত্তমার বুকে একগুচ্ছ নাটক দেখার সুযোগ পাবেন শহরবাসী। এবারে নাট্য মেলায় মোট ২৪২ টি দল অংশ নিয়েছে। অ্যাকাডেমি সূত্রে জানা যাচ্ছে আগামী দশ দিন ধরে শিশির মঞ্চ, মধুসূদন মঞ্চ, গিরিশ মঞ্চ, বিশ্ববাংলা কনভেনশন সেন্টার (নিউটাউন), ইউনিভার্সিটি ইনস্টিটিউট অডিটোরিয়াম এবং তৃপ্তি মিত্র নাট্যগৃহ ভবনে পূর্ণদৈর্ঘ্য থেকে শুরু করে অন্তরঙ্গ স্বল্পদৈর্ঘ্যের সব ধরনের নাটক দেখার সুযোগ থাকছে। পাশাপাশি পথনাটিকা, পুতুল নাটক, মূকাভিনয় এবারের অন্যতম বিশেষ আকর্ষন হতে চলেছে। এদিন নৈহাটি ব্রাত্যজনের পরিচালনায় উদ্বোধনী নাটক ‘দায়বদ্ধ ‘ উপস্থাপিত হয়।

এছাড়াও গগনেন্দ্র শিল্প প্রদর্শনশালায় তাপস সেনের শতবর্ষ উপলক্ষে তাঁকে শ্রদ্ধা জানিয়ে বিশেষ প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়েছে। আলোর জাদুকর বলতেন, “পঞ্চাশ বছর ধরে মঞ্চের উপর আলো অন্ধকার রং নিয়ে খেলা করতে থাকা আমিও আজ এই মহাবিশ্ব -মঞ্চের রং আলো অন্ধকারের রহস্যময়তার দোরগোড়ায় থমকে দাঁড়িয়েছি এক অবুঝ শিশুর মুগ্ধ বিস্ময় নিয়ে।” তাঁর কাজ সত্যিই শিক্ষণীয়।

এদিন সেচমন্ত্রী নিজে উদ্বোধনী নাটকে অংশগ্রহণ করেন। নাটককে গ্রাম থেকে গ্রামান্তরে যেভাবে ছড়িয়ে দিয়েছে বর্তমান রাজ্য সরকার তার জন্য মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ধন্যবাদ জানান তিনি। টিভি আর ওয়েব সিরিজের মাঝে নিজের অস্তিত্ব নিয়ে নাটক যেভাবে লড়াই করছে, তাতে শিল্পী এবং সরকারের সহায়তাকে কুর্নিশ জানিয়েছেন মন্ত্রী।বিশিষ্ট নাট্য ব্যক্তিত্ব কৌশিক সেন তৃণমূল বিরোধী হিসেবে পরিচিত মুখ। কিন্তু এদিন তিনি বলেন এই সরকার সংস্কৃতির জন্য যা করছে তা প্রশংসনীয়। থিয়েটার মানেই তো সমষ্টিগত অবস্থান তাই একাকিত্বের যন্ত্রণা থেকে বেরিয়ে আসতে এই মাধ্যম যে একমাত্র মুক্তির উপায়, সেকথাও শোনা যায় তাঁর মুখে। নাটকের জলসাঘরে সকলের উপস্থিতি এই মাহেন্দ্রক্ষণের গরিমা আরও বাড়িয়ে দিল বলেই মত দেবশঙ্কর হালদারের। অর্পিতা ঘোষ নাটকের উন্নয়নে নাট্য অ্যাকাডেমির স্বপ্ন ও পরিকল্পনার কথা সবার সামনে তুলে ধরেন। তবে এদিন নিজের বক্তব্যে নাট্যপ্রেমী মানুষের আশঙ্কার কথা , অস্তিত্ব সংকটের নেপথ্য লড়াইকে বক্তব্যের প্রাসঙ্গিকতায় সুন্দরভাবে তুলে ধরলেন শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু। তিনি যে সুবক্তা তা সবার জানা , কিন্তু এদিন ভালবাসার নাট্যজগতে যেভাবে কেন্দ্রের কুঠারাঘাত নেমে আসছে তার তীব্র সমালোচনা করেন তিনি। সফোক্লিস থেকে অপেরা থিয়েটার বা পার্থেননের উৎসব কিংবা মেষপালকের পোশাকে দর্শকের আবেগের কথা স্মরণ করিয়ে ব্রাত্য বলেন, জন্মলগ্ন থেকেই নাটক আসলে উৎসব। কিন্তু এই সৃজনশীল সৃষ্টিকেও পঙ্গু করতে চাইছে দেশের শাসকরা। তাই নাটকের ভর্তুকি বন্ধের বিরোধিতায় কেন্দ্রীয় সরকারকে তীব্র আক্রমণ করেন শিক্ষামন্ত্রী। তিনি স্পষ্ট জানান নাট্য সংস্কৃতিকে বঞ্চিত করার রাজনীতি কোনভাবেই বরদাস্ত করবেন না বাংলার সৃষ্টিশীল মানুষ।


Previous articleএকা লড়লেন অনুষ্টুপ, দ্বিতীয় দিনের শেষে ২১৩ রানে পিছিয়ে বাংলা
Next articleঅমা.নবিক আচরণ কলকাতা বিমানবন্দরে! প্রতিব.ন্ধী মহিলাকে হুইল চেয়ার ছেড়ে হাঁটার নির্দেশ