ঐতিহাসিক পদক্ষেপ: নির্বাচনী বন্ড নিয়ে সুপ্রিম রায়কে স্বাগত জানালেন বিরোধীরা

নির্বাচনী বন্ড নিয়ে সুপ্রিম রায়কে একযোগে ‘স্বাগত’ জানালেন দেশের বিরোধী নেতারা। আদালতের নির্দেশকে ঐতিহাসিক আখ্যা দিয়ে বিরোধীদের তরফে বলা হয়েছে, যারা এতদিন বিজেপিকে টাকা দিয়েছে, এখন দেখার তাঁদের বিরুদ্ধে ইডি সিবিআই পদক্ষেপ করে কিনা। প্রসঙ্গত, নির্বাচনী বন্ডের মাধ্যমে আয়ের নিরিখে গত কয়েক বছরে সর্বোচ্চ স্থানে রয়েছে ভারতীয় জনতা পার্টি।

বৃহস্পতিবার নির্বাচনী বন্ডকে সম্পূর্ণ বেআইনি ঘোষণা করে শীর্ষ আদালতের তরফে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, নির্বাচনী বন্ড তথ্য জানার অধিকার (আরটিআই) আইনকে লঙ্ঘন করছে। নির্বাচনী বন্ডে স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন তোলার পাশাপাশি প্রধান বিচারপতি জানান, ভারতীয় স্টেট ব্যাঙ্ক (এসবিআই) এই ধরনের বন্ড দেওয়া বন্ধ করবে। ২০১৯ সালের ১২ এপ্রিল থেকে নির্বাচনী বন্ড সংক্রান্ত যা যা তথ্য এসবিআইয়ের কাছে জমা পড়েছে, তা আগামী ৬ মার্চের মধ্যে জমা দিতে হবে নির্বাচন কমিশনে। এবং আগামী ৩১ মার্চের মধ্যে কমিশনকে অনুদান সংক্রান্ত তথ্য তাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করতে হবে। আদালতের এই নির্দেশ আসার পর তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ তথা তথ্য জানার অধিকার নিয়ে দীর্ঘ দিন কাজ করা সাকেত গোখলে তাঁর পোস্টে লেখেন, “নির্বাচনী বন্ডকে বেআইনি ঘোষণা করা খুব সম্ভবত গত পাঁচ বছরের মধ্যে সুপ্রিম কোর্টের সবচেয়ে ঐতিহাসিক রায়।” বৃহস্পতিবার সুপ্রিম কোর্টের একটি নির্দেশকে উদ্ধৃত করে তিনি জানান, মার্চের মাঝামাঝি সময়ের আগেই নির্বাচন কমিশনকে নির্বাচনী বন্ডের মাধ্যমে টাকা দেওয়া ব্যক্তি এবং সেই টাকার প্রাপক যে রাজনৈতিক দলগুলি, তাদের নাম প্রকাশ করতে হবে। তার পরই বিজেপিকে কটাক্ষ করে তিনি লেখেন, “যে সমস্ত অনুদানদাতা ব্যক্তি এবং সংস্থা বিজেপিকে টাকা দিয়েছে, তাঁদের বিরুদ্ধে ইডি-সিবিআই পদক্ষেপ করেছে কি না, সেটাই এখন দেখার।”

পাশাপাশি সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি এক্স হ্যান্ডলে লেখেন, “সুপ্রিম কোর্টের সর্বসম্মতিক্রমে দেওয়া রায় আমাদের যুক্তিগুলিকে গুরুত্ব দিয়েছে দেখে আমি খুশি।” কংগ্রেস নেতা জয়রাম রমেশ এক্স হ্যান্ডলে লেখেন, “দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর এই রায়কে আমরা স্বাগত জানাচ্ছি এবং এই রায় নোটের উপরে ভোট তত্ত্বকে ফের প্রতিষ্ঠিত করবে।” একই সঙ্গে জয়রাম জানান, তিনি আশা করেন যে, ভিভিপ্যাট নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলির সঙ্গে আলোচনায় বসার ব্যাপারে নির্বাচন কমিশনের অনীহার বিষয়ে সুপ্রিম কোর্ট হস্তক্ষেপ করবে।

উল্লেখ্য, ২০১৮ সাল থেকে চালু হয় এই নির্বাচনী বন্ড। কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী থাকাকালীন ২০১৮ সালে প্রয়াত অরুণ জেটলি নির্বাচনী বন্ডের কথা ঘোষণা করেছিলেন। à§§ হাজার, ১০ হাজার, à§§ লক্ষ, ১০ লক্ষ এবং à§§ কোটি টাকা মূল্যের গুণিতকে এই বন্ড বিক্রি করত এসবিআই। এই বন্ড কিনে রাজনৈতিক দলগুলিকে দিত কর্পোরেট সংস্থাগুলি। রাজনৈতিক দল তা ভাঙিয়ে দলের অ্যাকাউন্টে নিত। বিদেশীরাও রাজনৈতিক দলগুলিকে সহজে টাকা পাঠাতে পারত এই প্রক্রিয়ায়। বাড়তি সুবিধা ছিল এই পদ্ধতিতে ব্যক্তি বা সংস্থা ১০০ শতাংশ কর ছাড় পেত। তবে ব্যাঙ্ক বা রাজনৈতিক দল কোনও তরফেই এই দাতার নাম-পরিচয় প্রকাশ্যে আসত না। এবার সেই নিয়মে ‘দাড়ি’ পড়ল শীর্ষ আদালতের নির্দেশে।