হিটলারি মানসিকতা, এজেন্সিরাজ একদিন শেষ হবে: বিতর্ক সভায় সরব মমতা

একদিকে দেশের গণতন্ত্র ভূলুণ্ঠিত, মানুষের বাকস্বাধীনতা নেই, বিরোধিতা করলেই কথায় এজেন্সি দিয়ে শাসানি, বিচার ব্যবস্থাও রাজনৈতিক চাপের মুখে। বর্তমান বিজেপি সরকারের শাসনে দেশের ভয়াবহ এই অবস্থা নিয়ে সরব হলেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। একইসঙ্গে আশার আলো দেখিয়ে তিনি জানালেন, এই হিটলারি মানসিকতা, এই এজেন্সিরাজ একদিন শেষ হবে। মানুষ মাথা উচু করে বাঁচবে।

শনিবার শহরে এক বিতর্ক অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেখানে বিতর্কের বিষয় ছিল, “ভারতের নয়া সংবিধানের প্রয়োজন নেই।” বিতর্ক অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে উঠে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “কেউ কেউ বলছেন দেশের নতুন সংবিধান প্রয়োজন, কিন্তু আমি তা মনে করি না।” এরপরই সংবিধান প্রণেতা বাবা সাহেব আম্বেদকরের প্রসঙ্গ তুলে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “আমি গর্ববোধ করি সংবিধান প্রণেতা বাবা সাহেব আম্বেদকর বাংলা থেকে প্রথম নির্বাচিত সাংসদ। তিনি আমাদের পথ দেখিয়েছেন এবং অনুপ্রাণিত করেছেন। এই সংবিধানে তার আদর্শ বৈচিত্র্যের মধ্যে ঐক্য জাগ্রত করার জন্য কঠোর পরিশ্রম করেছেন। এখানে স্বাধীনতা যেমন রয়েছে তেমনই রয়েছে লাগামছাড়া পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের পথ। দেশের শিরদড়া আমাদের সংবিধান। আমাদের দেশে একাধিক রাজ্য, ভিন্ন ভিন্ন জাতি, ভাষা, মানুষ, আমাদের প্রত্যেককে ‘অধিকার’ দিয়েছে আমাদের সংবিধান।” তবে সাম্প্রতিক পরিস্থিতিতে যা চলেছে তা অত্যন্ত ‘ভয়াবহ’ বলে উল্লেখ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। আর এই ঘটনায় তিনি আঙুল তুলেছেন দেশের বর্তমান শাসকদল বিজেপির দিকে।

মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “বর্তমানে যা চলছে তা অত্যন্ত ভয়াবহ। একজন সাধারণ মানুষ হিসেবে আমি তা কখনই সমর্থন করি না। আপনি কী খাবেন, কী পরবেন, কী ভাষায় কথা বলবেন সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে। মানুষের কথা বলার অধিকার কেড়ে নেওয়া হচ্ছে। সবাই দেখছে দেশে কি চলছে। কেউ মুখ খুলতে পারছে না। বিচার ব্যবস্থাকে সম্মান জানিয়েই বলছি, রাজনৈতিক চাপের মুখে দেশের বিচার ব্যবস্থার একাংশও। ‘সংবিধান’ যা এতদিন ছিল মানুষের জন্য তা এখন হয়ে উঠেছে এজেন্সি নির্ভর, এজেন্সি দ্বারা চালিত। প্রতিবাদ করলেই বাড়িতে ইডি চলে আসছে। সংবাদমাধ্যমকে নিয়ন্ত্রণ করছে একটি দল। ওদেরও সত্য বলার অধিকার নেই। কারণ সত্য বললেই রাজনৈতিক কোপে ওদের ব্যবসা ক্ষতির মুখে পড়বে। দেশের স্বাধীনতার পর এমন ভয়াবহ অবস্থা কখনও হয়নি। সংসদে বিরোধীদের সাসপেন্ড করে বিল পাশ করানো হচ্ছে। দেশের গণতন্ত্রকে ধ্বংস করে দিচ্ছে এরা।”

একইসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী যোগ করেন, “দেশের সংবিধানের তিনটি স্তম্ভ সাধারণ মানুষ, সংবাদমাধ্যম ও বিচার ব্যবস্থা। এরা এই তিনটি জায়গাকে দুর্বল করে দিচ্ছে। ‘বৈচিত্রের মধ্যে ঐক্য’ সংবিধানের অন্যতম সার কথাকে নষ্ট করে এরা করছে, এক দেশ এক আইন, এক দেশ এক ভোট, এক দেশ এক ভাষা। সবকিছু এককেন্দ্রিক করে তোলা হচ্ছে। এটা কখনও উচিৎ নয়। পরিবার কখনও একজনে হয়? সেখানে মা, বাবা, ভাই-বোন, অন্যান্য সদস্যরা থাকেন তবেই সেটা পরিবার। এরা ইতিহাস, ভুগোল, বিজ্ঞান সব বদলে দিচ্ছে, কোনদিন হয়ত বলবে, সূর্য, চাঁদ, তারা সব ওরা তৈরি করেছে।” তবে এর সঙ্গেই আশার আলো দেখিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “তবে দেশে এখনও কিছু মানুষ আছেন যারা কোনওদিন সত্যের পথ ছাড়বেন না। শুধুমাত্র এজেন্সি দিয়ে দেশ গঠন সম্ভব নয়। তাঁরা লড়াই করছেন। আজও প্রতি মুহূর্তে আমি লড়াই করছি। আমরা আশা রাখি এই হিটলারি মানসিকতা, এজেন্সিরাজ একদিন শেষ হবে। দেশের মানুষ মাথা উচু করে বাঁচবে।”

Previous articleঅন্তঃসত্ত্বা মহিলাকে গণধর্ষণ করে পুড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা মধ্যপ্রদেশে!
Next articleসন্দেশখালিকাণ্ড: পুলিশ রাজধর্ম পালন করছে, গণধ.র্ষণের ধারা যোগ মানেই, ঘটনা প্রমাণিত নয়: কুণাল