মর্নিং ওয়াক করা দাদা পার্কে থাক, বাংলার মেয়ে দিল্লি যাক: দিলীপকে তীব্র কটাক্ষ অভিষেকের

বরাবর নারীদের বিরুদ্ধে বিদ্বেষমূলক মন্তব্য করেন বিজেপি নেতা দিলীপ ঘোষ (Dilip Ghosh)। বাংলার আরাধ্য দেবী দুর্গা থেকে শুরু করে বাংলার মহিলা মুখ্যমন্ত্রী- কেউই তাঁর কুরুচিকর মন্তব্য নিশানা থেকে বাদ যান না। সেই লোকসভা কেন্দ্রে দাঁড়িয়ে বিজেপি সাংসদ দিলীপ ঘোষকে তীব্র আক্রমণ করলেন তৃণমূলের (TMC) সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় (Abhishek Banerjee)। শনিবার, বেলদা স্টেডিয়ামে মেদিনীপুরের দলীয় প্রার্থী জুন মালিয়ায় সমর্থনে সভা করেন তৃণমূলের (TMC) সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক। সেখান থেকেই দিলীপকে কটাক্ষ করেন তিনি।

এদিন মঞ্চ থেকে মাতৃশক্তিকে সম্মান জানিয়ে অভিষেক বলেন, “মায়েরা যাঁরা বাড়ির কাজকর্ম ছেড়ে আমাদের সভায় এসেছেন, তাঁদের প্রণাম। মাতৃশক্তি না-জাগলে এ পৃথিবী জাগে না। নবজোয়ারের সময় আমি যখন অবিভিক্ত মেদিনীপুরে এসেছিলাম, প্রত্যেক বিধানসভায় পৌঁছে যাওয়ার চেষ্টা করেছি। বলেছিলাম, নারায়ণগড় দিয়ে প্রচার শুরু করব। শুরু করলাম। আমি আগে থেকে জানতাম না যে, আজই নির্বাচন ঘোষণা হবে। কী করে জানব, যে দিন নির্ঘণ্ট প্রকাশ হবে, সে দিনই আন্দোলনের পীঠস্থান মেদিনীপুরে থাকব! এটা সৌভাগ্যের। আমি বলছিলাম, বাংলা মাথা ঝোঁকাবে না। আজকের এই সভা সেটাই প্রমাণ করছে। ২০১১ সালে মা-মাটি-মানুষের সরকার তৈরি হয়েছে। তার আগে মেদিনীপুরের মানুষ সিপিএমের বিরুদ্ধে লড়াই করেছেন। আত্মবলিদান দিয়েছেন।“

তারপরেই তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ অভিষেক বলেন, “দিলীপ ঘোষ বার বার নারীশক্তিকে আক্রমণ করেছেন। মুখ্যমন্ত্রীকে নিয়ে অসম্মানজনক কথা বলেছেন। তিনি কুড়মি সম্প্রদায়কে অসম্মান করেছেন।“ বিজেপি ভোট নিয়ে চলে যায়। আর ভোটের পরে তাঁদের পাত্তা পাওয়া যায় না। অথচ সারা বছর মানুষের পাশে থাকে তৃণমূল- বার্তা অভিষেকের। তিনি বলেন, “দিলীপ ঘোষ যে জিতেছিলেন, তার পর পাঁচ বছরে সাত বিধানসভা কেন্দ্রে যদি একটা উন্নয়নমূলক বৈঠক হয়েছে বলে দেখাতে পারেন, তা হলে আমি আর ভোট চাইতে আসব না। এত বড় কথা বলে দিয়ে যাচ্ছি। অন্য দিকে দেখুন মুখ্যমন্ত্রীকে। কথা দিয়ে কথা রেখেছেন।“ দিলীপ ঘোষকে নিশানা করে অভিষেক বলেন, “দিলীপ ঘোষ কি পরিষেবা দিয়েছে আপনারা দেখেছেন। সকালবেলা খালি মর্নিং ওয়াক ওঁর কাজ। খালি মর্নিং ওয়াক করছেন। চা খান। চায়ে আপত্তি নেই। শরীরচর্চা আর মর্নিংওয়াক যিনি করছেন তাঁকে সাংসদ করবেন নাকি যে মেয়ে রাস্তায় লড়বেন, তাঁকে সং‌সদে পাঠাবেন? শপথ নিন, মর্নিং ওয়াক করা দাদা পার্কে থাক, বাংলার মেয়ে দিল্লি যাক।“

বিজেপির জুমলা ভিডিও দেখিয়ে জানান অভিষেক (Abhishek Banerjee)। মেদিনীপুর লোকসভা কেন্দ্রে মোট ৭টি বিধানসভা কেন্দ্রের মধ্যে রয়েছে পশ্চিম মেদিনীপুরের কেশিয়াড়ি, দাঁতন, নারায়ণগড়, মেদিনীপুর, খড়্গপুর সদর, খড়্গপুর গ্রামীণ এবং পূর্ব মেদিনীপুরের এগরা। ২০১৯ সালে এখানে সাংসদ হন বিজেপির দিলীপ ঘোষ। সেখানে তৃণমূল প্রার্থী করেছে জুন মালিয়াকে। অভিষেক বলেন, “এদের বলার ক্ষমতা নেই। খালি মিথ্যে কথা বলবে। ২০১৮ সালে জুলাই মাসে প্রধানমন্ত্রী সভা করতে এসে মেদিনীপুরে কত মিথ্যা কথা বলেছেন! একটা কাজ করেনি— দেখুন ভিডিও“।

কেন্দ্রের বঞ্চনার প্রসঙ্গে তুলে তৃণমূল সাংসদ জানান, “আমাদের বিবেকে বাধবে ৬ মাস কাজ করিয়ে কাউকে পারিশ্রমিক না-দিয়ে বার করে দিতে। এরা ১০০ দিনের কাজের বেলা তাই করেছে। অনেক হয়েছে। এদের দয়া এবং দাক্ষিণ্যে আর বাঁচব না। এঁদের কাছে আর কিছু চাইবেন না। এঁদের কাছে মাথা নীচু করে বেঁচে থাকবেন না। প্রতি বছর ২৫ হাজার কোটি টাকা খরচ করছে বাংলার মহিলাদের জন্য। এর ১০ পয়সা মোদী সরকারের নয়। তাই ১০০ দিনের কাজও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দিতে পারবেন। তাই বাংলাকে জেতান। মেদিনীপুরে জুন মালিয়াকে জয়ী করুন। আবাসের জন্য কারও উপর নির্ভর করতে হবে না। আমরা করব।“