মুসলিম বাবার হিন্দু কন্যা, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির অনন্য গল্প আরশাদ – রাজকুমারীর

এক ছাদের তলায় গীতা পাঠ আর আজান গড়ে তুলল অপত্য স্নেহের সম্পর্ক। মানুষের সঙ্গে মানবতার এক অমর গাঁথা সৃষ্টি হল।

রক্তের সম্পর্কে তাঁরা একে অন্যের কেউ নন, তবে ভালবাসার সম্পর্কে মুসলিম বাবা আরশাদের তাঁর হিন্দু মেয়ে হলেন রাজকুমারী সুন্দরীবালা। একাত্তরের গণহত্যায় বেঁচে যাওয়া ছোট্ট শিশুর ধর্ম বা জাত নিয়ে বিশেষ কোনও মাথাব্যথা ছিল না গ্রামের এক সাধারণ কৃষক আরশাদ আলি মোড়লের। হত্যাযজ্ঞের একদিন পর লাশের স্তূপের মাঝে নিজের বাবার মৃতদেহ খুঁজতে এসেছিলেন। স্পন্দনহীন সারিসারি প্রাণের মাঝে শিশুর কান্না শুনে থমকে যান। বাবাকে খুঁজে পাননি আরশাদ, কিন্তু কন্যা সন্তানকে ঘরে নিয়ে গেলেন বিনা দ্বিধায়।

বিশ্বজুড়ে যখন সাম্প্রদায়িক অস্থিরতার জেরে একের পর এক প্রাণ চলে যাচ্ছে, ঠিক তখনই খুলনা জেলার চুকনগর গ্রামের ভদ্রা নদীর পাড় সংলগ্ন এলাকার ছোট্ট একটা ঘটনা ভিজিয়ে দেয় চোখ, নাড়িয়ে দেয় সবার মন। সময়টা ১৯৭১ সালের ২০ মে। মুক্তিযুদ্ধের সবচেয়ে বর্বরতম গণহত্যা সংঘটিত হয়েছিল এইস্থানে। নির্বিচারে একসঙ্গে ১০ হাজার নর-নারী ও শিশুকে সেদিন হত্যা করেছিল পাকিস্তান। আর তখনই ছ’মাসের রাজকুমারীকে খুঁজে পেয়েছিলেন আরশাদ। শিশুটি যে মহিলার বুকের কাছে হামাগুড়ি দিচ্ছিল তাঁর মৃতদেহের উপরে জ্বলজ্বল করছিল লাল সিঁদুর। আরশাদ বুঝেছিলেন এ কন্যাসন্তান হিন্দু ঘরের। তাইতো সনাতন ধর্মের কথা মাথায় রেখে মেয়েটির নাম রাখেন রাজকুমারী সুন্দরীবালা। এক ছাদের তলায় গীতা পাঠ আর আজান গড়ে তুলল অপত্য স্নেহের সম্পর্ক। মানুষের সঙ্গে মানবতার এক অমর গাঁথা সৃষ্টি হল। রাজকুমারী বড় হওয়ার পর হিন্দু রীতি মেনেই তাঁকে পাত্রস্থ করেন আরশাদ। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির সঙ্গে ভালবাসার মিশেলে এমন এক বাস্তব গল্প তৈরি করলেন দুই ভিন্নধর্মী বাবা-মেয়ে যা সত্যিই শেখার মতো।

Previous articleরবিবাসরীয় সকালে প্রচারে ঝড়, ময়দানে শাসক দলের প্রার্থীরা
Next article৮-১১-র বেশি প্রার্থী খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না! সোমে তালিকা প্রকাশ প্রদেশ কংগ্রেসের