চমক কলকাতা উত্তরে: একসময় সতীর্থরাই এবার যুযুধান প্রতিপক্ষ!

জয়িতা মৌলিক

কলকাতা উত্তর কেন্দ্র ২০২৪-এর লোকসভা নির্বাচনে হয়তো বাংলার মধ্যে অন্যতম বিতর্কিত এবং আলোচিত আসন। নির্বাচন ঘোষণার আগের থেকেই এই কেন্দ্রে প্রার্থী হওয়া নিয়ে শাসকদলে বেশ টানাপড়েন চলেছে। শেষ পর্যন্ত দলবদলও হয়েছে। আর যখন কলকাতা উত্তরের প্রার্থী তালিকা সামনে এলো- তখন সেটা অভিনব। এই আসনে শাসক-বিরোধী সবাই একসময়ের সতীর্থ। অর্থাৎ এককালের রাজনৈতিক ‘বন্ধু’রাই এখন যুযুধান প্রতিপক্ষ।

এক নজরে কলকাতা উত্তর কেন্দ্রের প্রার্থীরা:

তৃণমূল- সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়
বিজেপি- তাপস রায়
বাম-কংগ্রেস জোট- প্রদীপ ভট্টাচার্য

১৯৯৮ সালে কলকাতা উত্তর-পশ্চিম কেন্দ্র থেকে প্রথমবার লোকসভা ভোটে জয়ী হন তৃণমূলের (TMC) সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় (Sudip Banerjee) তখন তিনি কংগ্রেসে। তিন বার এই কেন্দ্রে জয়ী হন সুদীপ। ২০০৯-এর আসন পুনর্বিন্যাসে কলকাতা উত্তর এই লোকসভা আসন হয়। সাতটি বিধানসভা কেন্দ্র – চৌরঙ্গি, এন্টালি, বেলেঘাটা, জোড়াসাঁকো, শ্যামপুকুর, মানিকতলা, কাশীপুর-বেলগাছিয়া- সব কেন্দ্রেই গত বিধানসভা নির্বাচনে জয়ী হয়েছিল তৃণমূল। এবার সেই কলকাতা উত্তর কেন্দ্রের সব প্রার্থীরা একসময় ছিলেন সতীর্থ।

ছাত্র রাজনীতি থেকে উঠে এসেছেন তাপস রায় (Tapas Ray)। ছাত্র পরিষদের দাপুটে নেতা ছিলেন। বঙ্গ রাজনীতিতে একসময়ে সোমেন মিত্রের অনুগামী হিসেবে পরিচিত ছিলেন। এরপর কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দেন তাপস। বরানগর কেন্দ্রে তিনবারের বিধায়ক তিনি। ৬৯ বছরের তাপস যে সময় কংগ্রেসে ছিলেন বর্তমানে ৭৫ বছর বয়সী সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ও সেই সময় ছিলেন কংগ্রেসেই (Congress)। তবে তাঁর বিচরণ বেশিরভাগ সময়ই ছিল দিল্লিত। ইন্দিরা গান্ধী এবং পরবর্তীকালে রাজীব গান্ধীর ঘনিষ্ঠ বৃত্তেই ছিলেন সুদীপ। কংগ্রেসের ভরাডুবি বুঝতে পেরে পরবর্তীকালে তিনি যোগ দেন তৃণমূলে। তবে তৃণমূলের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক সব সময় এক রকম ছিল না। মাঝে জোড়াফুল ছেড়ে আবার হাতে হাত রাখেন সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় (Sudip Banerjee)। কিন্তু সেই মধুচন্দ্রিমা বেশি দিন হয়নি। ফের মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছেই ফিরতে হয় তাঁকে।

বরাহনগর বিধানসভার প্রাক্তন বিধায়ক-মন্ত্রী তাপস রায় কিছুদিন আগে গর্জে উঠেছিলেন তাঁর সহকর্মী ও দলের উত্তর কলকাতার সাংসদ সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে। সুদীপের ‘বিজেপি-যোগ’ ও সাংসদের নির্দেশেই তাঁর বাড়িতে ইডি হানার অভিযোগও করেছিলেন তাপস। তবে তৃণমূলের প্রার্থী তালিকা প্রকাশের আগেই বিধায়ক পদ থেকে দল- সবকিছু ত্যাগ করে তাপস যোগ দেন পদ্মশিবিরে। কংগ্রেস থেকে তৃণমূল, তৃণমূল থেকে বিজেপি।

আরও পড়ুন: গরমে পুড়ছে বাংলা, আজই কালবৈশাখীর সম্ভাবনা!

এখনও সব আসনে বাম-কংগ্রেস সমঝোতা হয়নি। তবে এক সময়ের দুই সতীর্থের বিরুদ্ধে কলকাতা উত্তর কেন্দ্রে আরেক প্রাক্তন সতীর্থকেই প্রার্থী করেছে বাম-কংগ্রেস জোট। ৭৯ বছর বয়সী কংগ্রেস প্রার্থী প্রদীপ ভট্টাচার্যের (Pradip Bhattacharya) সমর্থনে একসঙ্গে পথে নেমেছে বাম কংগ্রেস। প্রদীপ ভট্টাচার্য হয়ে ভোট চেয়েছেন চেয়ারম্যান বিমান বসু। সাতের দশক থেকে একটানা কংগ্রেসের থেকে গিয়েছেন প্রদীপ ভট্টাচার্য। একসময় প্রদেশ কংগ্রেসের সভাপতিও হয়েছিলেন। সিদ্ধার্থশংকর রায়ের আমলে ছিলেন পশ্চিমবঙ্গের শ্রম প্রতিমন্ত্রী। তিনি যখন বাংলায় এবং দিল্লিতে দাপিয়ে কংগ্রেস করছেন, তখন তাঁর দলের তরুণ তুর্কি সুদীপ-তাপ সবারই যোগ উত্তর কলকাতায়। দল বদলের কোনও ইতিহাস নেই প্রদীপ ভট্টাচার্যের।

এই তিন প্রাক্তন সহযোদ্ধার লড়াইয়ে এখন জমজমাট কলকাতা উত্তর লোকসভা কেন্দ্র। সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় প্রচার শুরু করেছেন বেশ কয়েকদিন হল। তাপস রায়কে এখনও সেভাবে রাস্তায় দেখা যায়নি শুধু দোলের দিন ছাড়া। প্রদীপ ভট্টাচার্যের হয়ে রাস্তায় নেমেছেন বিমান বসু-সহ বাম নেতারা। এখন প্রচারে প্রার্থীরা প্রাক্তন সতীর্থদের বিরুদ্ধে কতটা বিষ উগরে দেন সেটাই দেখার।




Previous articleচেতলায় পুরনো বাড়ির কার্নিশ ভেঙে বিপত্তি!
Next articleআজ কী ঘটেছিল?