আইলিগ চ্যাম্পিয়ন মহামেডান, ছাড়পত্রও পেয়ে গেল আইএসএল-এর

দু’বছর আগে আই লিগ জয়ের খুব কাছাকাছি এসেও স্বপ্নপূরণ হয়নি।

আইলিগ চ্যাম্পিয়ন মহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব। এদিন শিলং লাজংকে ২-১ গোলে হারিয়ে আই লিগ চ্যাম্পিয়ন হয় সাদা-কালো ব্রিগেড। আর এর সুবাদে ইতিহাসে মহামেডান স্পোর্টিং। ১৩৩ বছরের পুরনো শতাব্দীপ্রাচীন ক্লাব প্রথমবার আই লিগ জিতল। সেই সঙ্গে লিগ জিতে সরাসরি আগামী মরশুমের আইএসএলে খেলার ছাড়পত্রও পেয়ে গেল মহামেডান।

এক ম্যাচ হাতে রেখেই স্বপ্নপূরণ। চিন্তা ছিল শিলংয়ের মাঠে লাজংয়ের প্রত্যাঘাত ও বিপক্ষের সমর্থনপুষ্ট গ্যালারি নিয়ে। সব চাপ সামলে অ্যালেক্সিস গোমেজ ও এভগিনি কোজলভের দু’টি বিশ্বমানের গোলে বাজিমাত করে সাদা-কালো ব্রিগেড। লিগ চ্যাম্পিয়ন হওয়ার জন্য এক পয়েন্ট দরকার ছিল। লাজংকে ২-১ গোলে হারিয়ে পুরো তিন পয়েন্ট নিয়েই খেতাব নিশ্চিত করে মহামেডান। ২৩ ম্যাচে মহামেডানের সংগ্রহ ৫২ পয়েন্ট। দ্বিতীয় স্থানে থাকা শ্রীনিধি ডেকান বাকি দুই ম্যাচ জিতলেও আর তাদের ধরতে পারবে না। এই জয়ের পরেই মহামেডান সচিব ইস্তিয়াক আহমেদকে ফোন করে আই লিগ জয়ের জন্য শুভেচ্ছা জানিয়েছেন ক্রীড়ামন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস। তিনি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেও লিগ জয়ের খবর জানিয়েছেন। রবিবার সন্ধ্যায় কলকাতায় ফিরছে ভারতসেরা মহামেডান। ১৩ এপ্রিল যুবভারতীতে দিল্লির বিরুদ্ধে শেষ ম্যাচের পর হবে আসল উৎসব।

শিলংয়ে শেষ বাঁশি বাজার সঙ্গে সঙ্গেই মহামেডান কোচ, ফুটবলার, সাপোর্ট স্টাফরা মাঠেই উৎসবে মেতে ওঠেন। কলকাতায় রেড রোডের ধারে মহামেডান তাঁবুতে তখন উৎসবের রাত। কর্তারা সদস্য, সমর্থকদের জন্য ক্লাব তাঁবুতেই বড় পর্দায় খেলা দেখার বন্দোবস্ত করেছিলেন। টেনশন ছিল, শিলংয়ের মাঠে খেলা ছিল বলেই। কেউই চাননি, ১৩ এপ্রিল শেষ ম্যাচ পর্যন্ত খেতাব জয়ের অপেক্ষা বাড়াতে। খেলা শেষ হতেই মিষ্টিমুখ, আতসবাজির রোশনাই মহামেডান তাঁবুতে। মহামেডান তাঁবুতে যেন অকাল দীপাবলি। সদস্য-সমর্থকরা উল্লাসে মেতে ওঠেন। সেই সঙ্গে শুরু আই লিগ জয়ের উৎসবের পরিকল্পনা ছকার কাজও।

এদিকে খেতাব নিশ্চিত হতেই মাঠে নেমে ডেভিড, বিকাশ সিং, মহম্মদ ইরশাদ, অ্যালেক্সিসরা উৎসবে মেতে ওঠেন। ড্রেসিংরুমে নাচ-গানে সেলিব্রেশনে মাতেন কোজলভ, ডেভিডরা। এই জয়ের পর ম্যানেজার তথা ফুটবল সচিব দীপেন্দু বিশ্বাস বলেন, ‘‘চোখে জল ধরে রাখতে পারছি না। এতদিনের পরিশ্রম সার্থক হল। কোচ, ফুটবলাররাই হিরো। ওরাই ক্লাবকে এত বড় সাফল্য এনে দিয়েছে। ইনভেস্টর বাঙ্কারহিলকে নিয়ে এবার আমাদের আইএসএলের জন্য আরও ভাল দল তৈরি করতে হবে।’’ দ্রুততম গোলে জয়ের নায়ক অ্যালেক্সিস বলেছেন, ‘‘এই সাফল্য মহামেডানের সমর্থকদের উৎসর্গ করছি। আইএসএলেও মহামেডানের হয়ে খেলতে চাই।’’

দু’বছর আগে আই লিগ জয়ের খুব কাছাকাছি এসেও স্বপ্নপূরণ হয়নি। এবার আন্দ্রে চেরনিশভের ছেলেরা তা সম্ভব করে দেখালেন। ইস্টবেঙ্গল কোনও দিন আই লিগ জেতেনি। তবে জাতীয় লিগ পেয়েছে তিনবার। দুই প্রধান ফ্র্যাঞ্চাইজি ফি দিয়ে আইএসএলে নাম লেখালেও মহামেডান এএফসি রোডম্যাপ মেনে যোগ্যতা অর্জন করে খেলতে নামছে দেশের সর্বোচ্চ লিগে।

এদিন ম্যাচের শুরুটা দুর্দান্ত করেছিল মহামেডান। কিক অফ হওয়ার মাত্র ৪৭ সেকেন্ডের মাথায় অসাধারণ গোল করে মহামেডানকে এগিয়ে দিয়েছিলেন আর্জেন্টাইন স্ট্রাইকার অ্যালেক্সিস গোমেজ। লাজং গোলকিপার চালিউ কিছুটা এগিয়ে থাকায় মাঝমাঠ থেকে উঁচু শট মারেন গোমেজ। গোলকিপার দ্রুত পিছিয়েও বল ক্লিয়ার করতে পারেননি। এরপর দ্রুত ম্যাচ ধরে নেয় লাজং। ১৫ মিনিটে পেনাল্টি থেকে গোলশোধ করে দেয় তারা। গোল করেন ডগলাস টার্ডিন। প্রথমার্ধের বাকি সময়টা মহামেডান রক্ষণকে কাঁপিয়ে দিয়ে অন্তত তিনটি সহজ সুযোগ নষ্ট করে লাজং। যার মধ্যে একটি শট পোস্টে লেগে ফেরে। মহামেডান গোলকিপার পদম ছেত্রী গোলের নিচে দুর্ভেদ্য ছিলেন। অন্তত দু’টি ক্ষেত্রে নিশ্চিত গোল বাঁচান তিনি। ভাগ্য সুপ্রসন্ন ছিল মহামেডানের। না হলে প্রথমার্ধেই পিছিয়ে পড়তে পারত আন্দ্রে চেরনিশভের দল।

দ্বিতীয়ার্ধে আক্রমণ-প্রতিআক্রমণে খেলা হয়। তবে ৬২ মিনিটে সুপারসাব কোজলভের অসাধারণ গোল মহামেডানকে এগিয়ে দেয়। শেষ পর্যন্ত ২-১ স্কোরলাইনেই খেলা শেষ হয়। স্বপ্নপূরণের আনন্দে ভেসে যায় সাদা-কালো শিবির।

আরও পড়ুন- আগামিকাল লাল-হলুদের সামনে বিএফসি, প্লে-অফে টিকে থাকতে তিন পয়েন্ট লক্ষ্য ইস্টবেঙ্গলের

Previous articleমোদির পর রাজ্যে ভোটপ্রচারে এবার অমিত শাহ, বালুরঘাটে সভা ১০ তারিখ
Next articleদেবের সমর্থনে ঘাটালে রবিবাসরীয় রোড-শো অভিষেকের, জনজোয়ারে ভাসবে রাস্তা