তন্ত্রসাধনার জন্যই কী মরতে হল দুর্গাকে? ওয়াটগঞ্জকাণ্ডে নয়া মোড়

তান্ত্রিকদের দেহটুকরো করার ভিডিও দেখত সে, বলে জানা যায়। কোনও মহিলাকে খুন করে দেহ নিয়ে সাধনা করলে সব সমস্যা মিটে যাবে, এরকম ধারণা ছিল তার

ওয়াটগঞ্জ খুনের ঘটনায় এবার তন্ত্র যোগ! সিসিটিভি ফুটেজ দেখে তেমনটাই সন্দেহ পুলিশের। গ্রেফতার নীলাঞ্জন সরখেলকে জিজ্ঞাসাবাদ ও ফরেনসিক রিপোর্টে এবার শহরের বুকে তন্ত্র-যোগে মহিলা খুনের দিকেই মোড় নিচ্ছে ওয়াটগঞ্জ দেহ উদ্ধারের ঘটনা। দেহ থেকে মাথা আলাদা করার ধরণ, ঠাকুরঘরে রক্তের দাগ, দেহ ফেলার কায়দা ও মোবাইলে দেখা নীলাঞ্জের ভিডিও সেই দিকেই ইঙ্গিত করছে।

যে বাড়িতে দুর্গা সরখেলকে খুন করা হয়, সেই বাড়িতেই শুক্রবার যান ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞরা। সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ দেখেই দুর্গার দেহের বাকি অংশের খোঁজ পান তদন্তকারীরা। শুক্রবার বিকেলে একটি ঝোপ থেকে দুর্গার দেহের বাকি কাটা অংশ উদ্ধার করে পুলিশ। বাড়ি থেকে পাওয়া যায় রক্তমাখা করাত ও কাটারি। যেগুলি খুনে ব্যবহৃত হয়েছিল বলে অনুমান পুলিশের। তদন্তে উঠে আসে দুর্গাকে ঠাকুরঘর লাগোয়া একটি ঘরে খুন করা হয়। খুনের পর হাত ধুয়ে ফেলে নীলাঞ্জন। দু জায়গাতেই মিলেছে রক্তের দাগ। তদন্তে জানা গিয়েছে, ভাইয়ের স্ত্রীকে মদ্যপান করিয়ে বেহুঁশ করার পর ঠাকুরঘর লাগোয়া ওই ঘরের সামনে নিয়ে এসে প্রথমে তাঁর গলায় কাটারি দিয়ে কোপ মারা হয়। এইভাবে প্রথমে ধড় ও মুণ্ড আলাদা করা হয়। তারপর কাটারি ও করাত দিয়ে দেহের বাকি অংশ কাটা হয়।

সিসিটিভি ফুটেজের মাধ্যমেই উঠে আসে যে, তন্ত্রসাধনার সঙ্গে জড়িত ছিল নীলাঞ্জন সরখেল। তান্ত্রিকদের দেহটুকরো করার ভিডিও দেখত সে, বলে জানা যায়। তদন্তে জানা যায় যে, কোনও মহিলাকে খুন করে দেহ নিয়ে সাধনা করলে সব সমস্যা মিটে যাবে, এরকম ধারণা ছিল তার। আর তাই, সে তান্ত্রিকদের কায়দায় দুর্গার দেহ কেটে আলাদা করে। তারপর দেহাংশের সামনে বসে তন্ত্রসাধনা করে। সাধনার পর প্লাস্টিকের প্যাকেটে দেহাংশগুলি ভরে ঘরটি জল দিয়ে ধুয়ে ফেলে সে। তারপর প্রথমে দুর্গার মুণ্ড, পা, বুক ওয়াটগঞ্জের একটি পরিত্যক্ত বাড়ির পাঁচিলের পাশে ফেলে আসে। পরে অন্য জায়গায় ফেলা হয় দুটি হাত, পেট ও পায়ের পাতা। খুনে ব্যবহৃত দুটি অস্ত্রের পাশাপাশি ঠাকুরঘর থেকে মিলেছে রক্তমাখা জামাকাপড় ও দেহ পাচারে ব্যবহৃত সাইকেলটিও।

দেহাংশ নিয়ে তন্ত্রসাধনার বিষয়ে তথ্য জানতে চলছে তদন্ত। কোনও তান্ত্রিককে নীলাঞ্জন সেই সময় ফোন করেছিল কিনা তা জানতে তার ফোনের কল ডিটেল্স দেখা হচ্ছে বলে পুলিশ সূত্রে খবর।
যদিও, পুরো বিষয়টিই অস্বীকার করেছে মৃত দুর্গা সরখেলের ভাসুর নীলাঞ্জন সরখেল।