আত্মতুষ্টির জায়গা নেই: পুরুলিয়ায় দলের নেতৃত্বকে রাস্তায় নেমে প্রচারের নির্দেশ তৃণমূল সভানেত্রীর

নির্বাচনে জয়ের জন্য বড় ভূমিকা নিতে হবে দলের কর্মীদের। সেই বার্তাই কাশিপুর বিধানসভা কেন্দ্রের হুড়া লোধুকড়া শিবমন্দিরের মাঠ থেকে দিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়

২০১৯ লোকসভা নির্বাচনে জঙ্গলমহলের একাধিক আসনে জেতে বিজেপি। কিন্তু পুরুলিয়ায় কোনও উন্নয়নই করেননি বিদায়ী বিজেপি সাংসদ জ্যোতির্ময় সিং মাহাতো। অন্যদিকে রাজ্যের উন্নয়নের বার্তা দিয়েই এবার সেই আসন জিতিয়ে আনার চ্যালেঞ্জ রাজ্যের শাসকদলের। নির্বাচনের প্রচারপর্বে পুরুলিয়ায় (Purulia) প্রথম জনসভা থেকে কর্মীদের সেই বার্তাই দিলেন তৃণমূল সভানেত্রী। সেই সঙ্গে নির্বাচনের কাজে আরও সময় দেওয়ার বিষয়েও সতর্ক করে দিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee)।

ষষ্ঠ দফায় ২৫ মে পুরুলিয়ায় লোকসভা নির্বাচন (Loksabha Election 2024)। উত্তরের জেলা থেকে নির্বাচনী প্রচারের প্রথম পর্বের পরেই পুরুলিয়ায় প্রচারে আসেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এবার এই কেন্দ্রে তৃণমূলের প্রার্থী শান্তিরাম মাহাতো (Santiram Mahato)। ২০১৯ সালে লোকসভার প্রার্থী হিসাবে পরাজিত হলেও তাঁর উপরই ভরসা রেখেছে এবার তৃণমূল। তার প্রধান কারণ পুরুলিয়ায় তৃণমূলের উন্নয়ন। জয়ের পরেও যে বিজেপি এখানে কোনও কাজ করেনি, তা জনসভা থেকে তুলে ধরেন মমতা। তিনি বলেন, “ভোট তো দিয়ে দেখলেন সাংসদ কিছু করেছেন? আগেরবারও পুরুলিয়ায় মিথ্যে বলে গিয়েছিল।” সেই সঙ্গে গোটা বিজেপির ভাঁওতা তুলে ধরতে উদাহরণ তুলে ধরেন,”আসার সময় দুটো মাটির বাড়িতে বিজেপির পদ্মফুল ও একটা বাড়িতে তৃণমূলের জোড়াফুল দেখলাম। যারা এখনও মাটির বাড়িতে থাকেন তাঁদের বাড়ি কেন্দ্র সরকার করেনি। মে মাসে à§§à§§ লক্ষ মানুষের ঘর রাজ্য দেবে।” পাশাপাশি সতর্ক করেন, “মাটির বাড়িতে যারা এখনও পদ্মফুল আঁকছেন তাঁদের বলি ওটা পদ্মফুল নয় ওটা ভাঁওতা।”

জঙ্গলমহল ও পুরুলিয়ায় বিজেপির বিগত নির্বাচনগুলিতে জয়ের একটা বড় ফ্যাক্টর ছিল আদিবাসী কুড়মি ভোট। এই নির্বাচনের আগে কুড়মিরা আস্থা রেখেছেন তৃণমূলের উপরেই। রাজ্যের উন্নয়নেই তা সম্ভব হয়েছে। পুরুলিয়ার উন্নয়ন, সংস্কৃতিকে তুলে ধরতে রাজ্য সরকারের উদ্যোগের উল্লেখ করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, “ছৌশিল্পীদের প্যারিসে (Paris) পাঠিয়েছিলাম। তাঁরা বাংলাকে এক নম্বরে এনে দিয়েছিলেন। তাই এখানে ছৌ অ্যাকাডেমি করা হয়েছে।” সেই সঙ্গে বাংলার মুখ্যমন্ত্রী রাজ্যের আদিবাসী সম্প্রদায়ের মানুষের সঙ্গে বিজেপি শাসিত রাজ্যের আদিবাসী সম্প্রদায়ের মানুষের পার্থক্য তুলে ধরে বলেন, “মাওবাদী হত্যায় যারা মারা গিয়েছিল সবাইকে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়েছে। এবং চাকরিও দেওয়া হয়েছে। আজকে দেখছেন মণিপুর জ্বলছে। আদিবাসীদের ওপর অত্যাচার হচ্ছে। মেয়েদের মা বোনেদের সম্মান নেই। উত্তরপ্রদেশেও তাই। রাজস্থানেও তাই। গুজরাটেও তাই। সারা ভারতবর্ষে তাই। একমাত্র দলিত ভাইবোনেরা সম্মান পায় বাংলায়।” পরে তিনি আরও বলেন, “আমরা নোটিফিকেশন করেছি আদিবাসীদের জমি আদিবাসীদের হাতেই থাকবে। তাদের জমি যেন কেউ কেড়ে না নেয়। তার কারণ তারাই অরণ্যের সবচেয়ে বড় সম্পদ।”

তবে নির্বাচনে জয়ের জন্য বড় ভূমিকা নিতে হবে দলের কর্মীদের। সেই বার্তাই কাশিপুর বিধানসভা কেন্দ্রের হুড়া লোধুকড়া শিবমন্দিরের মাঠ থেকে দিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মঞ্চে উপস্থিত জেলার শীর্ষ নেতৃত্বদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, “নেত্রীবৃন্দ আরও বেশি করে সময় দিন। প্রচারে বেশি সময় দিতে হবে। ইলেকশনে আত্মতুষ্টির জায়গা নেই।” সেই সঙ্গে নির্বাচনে সক্রিয় ভূমিকা নেওয়া কর্মীদের আটকানোর জন্য বিজেপির ষড়যন্ত্রের মধ্যে কীভাবে কাজ করতে হবে তারও পরামর্শ দেন তিনি। নির্বাচনী এজেন্ট হিসাবে একাধিক কর্মীদের বেছে রাখার পরামর্শ দেন তিনি।