বিজেপি ওয়াশিং মেশিনের পর্দা ফাঁস করল ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস। ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস ৪ এপ্রিল ২০২৪-এ প্রকাশিত প্রতিবেদনে দেখা যাচ্ছে, কীভাবে ২০১৪ সাল থেকে ২৫ জন বিরোধীদলে নেতার বিরুদ্ধে কেন্দ্রীয় সরকারী সংস্থা যেমন ED, CBI-সহ কেন্দ্রীয় এজেন্সির করা পদক্ষেপগুলি বিজেপিতে যোগদানের পরে বন্ধ হয়েছে। মামলা সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য, ব্যবস্থা গ্রহণের তারিখ, বিজেপিতে যোগদানের তারিখ এবং মামলার বর্তমান অবস্থা দিয়ে প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়েছে। দুর্নীতিমুক্ত সরকারের প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় আসা বিজেপির লজ্জা পাওয়া উচিত যে তারা ঠিক উল্টো কাজটি করেছে। আর এই তালিকায় জ্বলজ্বল করছে দলবদলু শুভেন্দু অধিকারীর নাম। এছাড়াও রয়েছে হিমন্ত বিশ্বশর্মা, ছগন ভুজওয়াল, নবীন জিন্দল-সহ দেশের ২৫ জন রাজনৈতিক নেতার নাম।

অর্থাৎ তৃণমূল যে বারবার অভিযোগ করে, বিজেপি হচ্ছে ওয়াশিং মেশিন। দুর্নীতিগ্রস্তরা সেখানে গেলেই সাদা হয়ে যায়, কেন্দ্রীয় এজেন্সি আর তাঁদের কোনোভাবেই কোনও মামলায় জিজ্ঞাসাবাদ পর্যন্ত করে না- এই প্রতিবেদন থেকেই তা স্পষ্ট। শুধু এই ভোটের বছরেই ৬ জন রাজনীতিক বিজেপিতে নাম লিখিয়েছেন। অথচ, তাঁরাই যখন বিরোধী দলে ছিলেন, তখন ইডি এবং সিবিআই তাঁদের বিরুদ্ধে বিরাট তৎপর ছিল। নিজের দল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দিলেই তাঁদের অতীতে কলঙ্ক ধুয়ে যাচ্ছে বলে বহুবার অভিযোগ তুলেছেন রাহুল গান্ধী থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

এক্সপ্রেস তদন্তে দেখা গিয়েছে ২০১৪ সাল থেকে কথিত দুর্নীতির অভিযোগে কেন্দ্রীয় এজেন্সিগুলির তদন্তের সম্মুখীন হয়ে ২৫ জন বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ বিজেপিতে যোগ দেন। তাদের মধ্যে ২৩ জনই হাঁফ ছেড়ে বেঁচেছেন। তালিকায় ১০ জন কংগ্রেসের থেকে বিজেপিতে যোগ দেন। এনসিপি এবং শিবসেনা থেকে চার জন নেতা। টিএমসি থেকে তিন জন। TDP থেকে দুজন; এবং SP এবং YSRCP থেকে একজন করে।

দৃষ্টান্তস্বরূপ বলা যায়, ২০১৯ সাল থেকে নারদ স্টিং অপারেশন মামলায় বাংলার বিরোধীদল নেতা শুভেন্দু অধিকারীর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের মামলা আপাতত ঠাণ্ডাঘরে চলে গিয়েছে। সে সময় তিনি তৃণমূল সরকারে থাকলেও ২০২০ সালে টিএমসি থেকে বিজেপিতে যোগ দেন শুভেন্দু অধিকারী। একইভাবে অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মা এবং প্রাক্তন মারাঠা মুখ্যমন্ত্রী অশোক চব্যনের মামলাতেও দাঁড়ি পড়ে যায়। সারদা চিটফান্ড মামলায় ২০১৪ সালে হিমন্তকে জিজ্ঞাসাবাদ এবং তাঁর বাড়িতে তল্লাশি চালায়। ২০১৫ সালে বিজেপিতে যোগ দেওয়ার আগে পর্যন্ত তাঁর বিরুদ্ধে মামলা চলেছিল। চ্যবনের ক্ষেত্রেও আদর্শ হাউজিং মামলায় সিবিআই-ইডি থমকে দাঁড়িয়ে রয়েছে।

একদিকে ইডি-সিবিআই সহ কেন্দ্রীয় এজেন্সিকে কাজে লাগিয়ে বিরোধীদের টার্গেট করার বিরুদ্ধে বিরোধীদের ক্ষোভ অন্যদিকে কেজরিওয়ালের গ্রেফতারি নিয়ে জার্মানি-আমেরিকার পর এবার রাষ্ট্রসংঘ-এর মন্তব্য। এরই মাঝে এনডিএ-তে যোগ দেওয়ার ৮ মাসের ব্যবধানে প্রফুল্ল প্যাটেলের বিরুদ্ধে এবার বন্ধ হয়েছে সিবিআই তদন্ত। তবে প্রফুল্ল প্যাটেল একা নন। মহারাষ্ট্রের ১২ জন বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ এই ২৫ জনের তালিকায় রয়েছেন। যাদের মধ্যে ১১ জন ২০২২ সালে বা তার পরে বিজেপিতে যোগ দেন। যার মধ্যে এনসিপি, শিবসেনা এবং কংগ্রেসের চারজন রয়েছেন। তালিকায় রয়েছেন শরদ পাওয়ারের ভাইপো অজিত পাওয়ারও।

পাশাপাশি অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা এবং মহারাষ্ট্রের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী অশোক চৌহ্বানের বিরুদ্ধেও মামলাগুলি আটকে আছে। পাঞ্জাবের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ক্যাপ্টেন অমরিন্দর সিং-এর ছেলে রনিন্দর সিং-ও ২০২০ সালে ইডির জেরার মুখে পড়েন। ২০২১ সালের নভেম্বরে বাবা অমরিন্দর কংগ্রেস ছাড়েন। ২০২২-এর সেপ্টেম্বর অমরিন্দর বিজেপিতে যোগ দেন। তারপর থেকে সেই মামলার তদন্ত আপাতত হিমঘরে। অন্যদিকে ১০০-কোটির বেশি দুর্নীতির অভিযোগে ইডি ২০১৬-এর মার্চ-এ মহারাষ্ট্রের তৎকালীন মন্ত্রী, ছগন ভুজবলকে গ্রেফতার করে। দু বছর জেল খাটার পর ২০২৩-এর জুলাইয়ে অজিত পাওয়ারের সঙ্গে এনডিএতে যোগদান করেন তিনি। তাঁর বিরুদ্ধেও মামলা চলছে ‘স্লো মোশেন’ মুডে।

এছাড়াও তালিকায় রয়েছে কংগ্রেস থেকে বিজেপিতে যোগ দেওয়া অর্চনা পাতিল। ঝাড়খণ্ডের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী মধু কোডার স্ত্রী গীতা কোডা। কংগ্রেস থেকে এনডিএতে যোগ দেওয়া বাবা সিদ্দিকী। জ্যোতি মির্ধা ২০২৩ সালে কংগ্রেস থেকে বিজেপিতে যোগ দেন। দলবদলের তালিকায় রয়েছেন টিডিপির সুজানা চৌধুরী। ২০১৯ সালে তিনি বিজেপিতে যোগ দেন। YSRCP থেকে ২০২৩ সালে বিজেপিতে যোগ দিয়েছিলেন কে গীতা। পাশাপাশি কংগ্রেসের দিগম্বর কামাত ২০২২ সালে কংগ্রেস থেকে বিজেপিতে যোগ দেন। অর্থাৎ নিজের দল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দিলেই তাঁদের অতীতে কলঙ্ক ধুয়ে যাচ্ছে বলে প্রকাশিত হয়েছে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের ওই প্রতিবেদনে।

আরও পড়ুন- এজেন্সিকে ব্যবহার করে বাংলাকে টার্গেট করেছে বিজেপি, ভোট বাক্সে জবাব দেবেন জনতা: শশী পাঁজা
