কাঁথির কোনও পরিবার জঙ্গিদের আশ্রয় দেয়নি তো? প্রশ্ন তুলে তদন্তের দাবি কুণালের

বেঙ্গালুরুতে (Bengaluru) বিস্ফোরণ বাংলা থেকে গ্রেফতার দুই সন্দেহভাজন সন্ত্রাসবাদী। ওই ঘটনায় মুজাম্মিল শরিফ নামে আগেই একজনকে গ্রেফতার (Arrest) করে তাকে মূল চক্রী বলে দাবি করেছিল এনআইএ (NIA)। পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের সহযোগিতায় জাতীয় তদন্তকারী সংস্থার হাতে এবার গ্রেফতার হল আরও দুই সন্দেহভাজন জঙ্গি। আর সেই নিয়ে শুরু হয়ে গিয়েছে রাজনৈতিক আকচা-আকচি। মুখ খুলেছেন মুখ্যমন্ত্রী স্বয়ং।

সকালে টুইটের পর বিকেলে সাংবাদিক বৈঠকে বাংলার পুলিশকে সম্পূর্ণ কৃতিত্ব দিয়ে সরব হলেন তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষও (Kunal Ghosh)। তাঁর দাবি, দেশবিরোধী কার্যকলাপ রোখার দায়িত্ব কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাগুলির। জঙ্গিরা কোথায় পালাচ্ছে, কোথায় লুকোছে, তার প্রাথমিক তথ্য সরবরাহ করতে হবে কেন্দ্রীয় সংস্থাগুলিকেই। বেঙ্গালুরু থেকে তারা পালিয়ে এসেছে। ধরা পড়েছে এখানে, সেটাই রাজ্য পুলিশের কৃতিত্ব। এনআইএ একা ধরেনি। যৌথ অভিযানে সম্ভব হয়েছে। শুধু তাই নয়, কাঁথির একটি দলবদলু বিজেপি পরিবার জঙ্গিদের আশ্রয় দিয়ে থাকতে পারে বলেও মনে করছেন তিনি। তাই পরবর্তী ধাপে যেন সেই পরিবারকে তদন্তের আওতায় নিয়ে আসার কথাও বলেন তিনি। কুণাল ঘোষ নাম না করলেও, তাঁর ইঙ্গিত ছিল কাঁথির শুভেন্দু অধিকারীর পরিবারের দিকেই, এমনটি মনে করছে সংশ্লিষ্ট মহল।

কুণাল ঘোষ বলেন, “এনআইএ খবর দেয় রাজ্য পুলিশকে। মাত্র ২ ঘণ্টায় সমস্ত প্রস্তুতি নিয়ে ফেলে রাজ্য পুলিশ। তারপর এনআইএ এবং রাজ্য পুলিশ যৌথ অভিযান করে গ্রেফতার করে দুই জঙ্গিকে। এনআইএ বিবৃতি দিয়ে স্বীকার করে নিয়েছে রাজ্য পুলিশের সহযোগিতার কথা। আমরা রাজ্য পুলিশকে কৃতিত্ব দিচ্ছি এই কারণেই যে, তাঁরা কেন্দ্রীয় সংস্থার কাছ থেকে তথ্য পাওয়ার পরই দ্রুত গতিতে নেটওয়ার্ক কাজে লাগিয়ে গ্রেফতারি সহযোগিতা করে।”

বিরোধীদের কুৎসার জবাব দিতে গিয়ে কুণাল বলেন, “বিজেপি বা বিরোধীরা যা বলছে তা হাস্যকর। কারণ গোটা দেশে বিভিন্ন রাজ্যে এই ধরনের জঙ্গিরা ছড়িয়ে পড়েছে। অতীতেও তার উদাহরণ আছে। বিভিন্ন বিস্ফোরণে বিজেপির লোকেরাও ধরা পড়েছে, সেই উদাহরণও আছে। ফলে কে কোথায় চলে যাচ্ছে সেটা কেন্দ্রীয় এজেন্সির মনিটর করে সেই রাজ্যের পুলিশকে জানানোর কথা।”

জঙ্গিরা বাংলায় পালিয়ে এসে কাঁথিতেই বা কেন গা ঢাকা দিয়েছিল, তা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেন কুণাল ঘোষ। বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন তুলে তৃণমূল নেতা বলেন, “কাঁথিতে কেন গা ঢাকা দিয়েছিল? কাঁথি কোন পরিবারের এলাকা, তাঁদের কাছে কী আশ্রয় নেওয়ার জন্য সুবিধা পেয়েছিল? সেই পরিবারের গ্যারান্টি পেয়েই কী কাঁথিতে গিয়েছিল? ওই পরিবার তো এইসব কাজের সঙ্গে যুক্ত। এই বিষয়গুলিও তদন্তের আওতায় আনা উচিত।”

এই ইস্যুতে সিপিএমকে জবাব দিয়ে কুণাল বলেন, “সিপিএমের সমালোচনা করার কোনও অধিকার নেই। ওদের আমলে লালবাজার থেকে ঢিল ছোঁড়া দূরত্বে আরডিএক্স-এর বিস্ফোরণে বাড়ি উড়ে গেল বউবাজারে। জঙ্গিদের সেই বিস্ফোরণে হতাহত ছিল শতাধিক। বাম জমানায় বরানগর থেকে আরডিএক্স বোঝাই ট্রাক উদ্ধার হয়েছিল। সেগুলি সিপিএম ভুলে গিয়েছে? আর এখন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পুলিশ তথ্য পাওয়ার ২ ঘণ্টার মধ্যে অভিযুক্তদের গ্রেফতার করল। এটা রাজ্য পুলিশের কৃতিত্ব। এর মধ্যে রাজনীতি নেই। কিন্তু বাংলায় কেন জঙ্গি আসছে, সেই প্রশ্নের কোনও ভিত্তি নেই। বিজেপির এক সন্ন্যাসিনীর বিস্ফোরণ কাণ্ডে গ্রেফতারের অভিযোগ আছে।”

কাঁথি পালানোর আগে কলকাতার দুটি হোটেলে ভুয়ো পরিচয় দিয়ে উঠেছিলেন বেঙ্গালুরু বিস্ফোরণ কাণ্ডে যুক্ত দুই জঙ্গি। এ প্রসঙ্গে কুণাল ঘোষ বলেন, “প্রতিদিন অজস্র পর্যটক রাজ্যের হোটেলগুলিতে আসছেন, থাকছেন। হোটেলে আসা ভিজিটরস পিছু তো পুলিশ দেওয়া সম্ভব নয়! এটা তো নতুন নয়, বিভিন্ন রাজ্যের এই ঘটনা অতীতেও দেখা গিয়েছে। ভুয়ো পরিচয়ে দিয়ে আত্মগোপন করে থাকাদের অন্য রাজ্যেও গ্রেফতার হতে দেখা গিয়েছে। আর কোনও জনবহুল জায়গায় কোনও অপরাধী হোটেলে গা ঢাকা দিয়ে আছে কিনা বের করতে হলে প্রতিদিন পুলিশকে হোটেলে নজরদারি চালাতে হবে। পর্যটকদের তল্লাশি করতে হবে। যা বাস্তবে সম্ভব নয়। রামনবমীতে বন্দুক নিয়ে মিছিল করা সুমিত সাউকে তো অন্য রাজ্য থেকে ধরে আনতে হয়েছিল। ধরে এনেছিল এই রাজ্যের পুলিশ। বেঙ্গালুরুর পাশে তো পশ্চিমবঙ্গ নয়। ফলে বিস্ফোরণ ঘটিয়ে অতদূর থেকে যখন বিভিন্ন রাজ্য পেত্রিয়ে বাংলায় আসছিল, তখন কেন্দ্রীয় এজেন্সি কেন ধরতে পারল না? কেন কর্ণাটক আর বাংলার মাঝে অপরাধীদের অন্য রাজ্যের পুলিশ ধরতে পারল না? এত দক্ষ যখন এজেন্সি মাঝপথে ধরতে পারল না কেন! আসলে বাংলাকে কালিমালিপ্ত করার চেষ্টা।”

বিজেপি আইটি সেলের প্রধান অমিত মালব্যকেও (Amit Malviya) তোপ দাগেন তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক। তাঁর কথায়, “অমিত মালব্য আগে বলুন, এখনও কেন পুলওয়ামা কাণ্ডের সমাধান হল না। বেঙ্গালুরু বিস্ফোরণ কাণ্ডে বিজেপির লোক ধরা পড়েছে। মাওবাদী এলাকার বিস্ফোরণে জওয়ান নিহত হচ্ছেন, তখন অমিত মালব্য আঙুল চুষছে! বেশি কথা না বলে, ক্ষমতা থাকলে ডায়মন্ড হারবারে গিয়ে ভোট দাঁড়ান!”

Previous articleলোকসভা ভোটের ময়দানে এবার ইন্দিরা গান্ধীর হত্যাকারীর ছেলে! কোন দলের প্রার্থী জানেন?
Next articleদূর্গতদের পাশে দাঁড়ানোর অনুমতি কেন দিল না কমিশন? প্রশ্ন শশী পাঁজার