তৃণমূলের প্রতিশ্রুতি পূরণ, বিজেপির ভাঁওতা: প্রথমদফায় উত্তরে এটাই Key Factor

জয়িতা মৌলিক

কোচবিহার, জলপাইগুড়ি, আলিপুরদুয়ার- এই তিন কেন্দ্র দিয়েই শুরু হচ্ছে এবারের লোকসভার ভোটগ্রহণ। তার আগে বেশ কিছুদিন এই তিন জেলায় ঘুরেছে ‘বিশ্ব বাংলা সংবাদ’। আর তাতেই দেখা যাচ্ছে, হাওয়া জোড়াফুলের পালে। প্রধান কারণ হল ভোট না পেয়েও উত্তরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Mamata Bandopadhyay) সরকারের উন্নয়ন। আর উল্টোদিকে যে পদ্মফুলে আশীর্বাদ দিয়েছিলেন ভোটাররা, সেই দলের ভোটপাখিরা জিতে এলাকা ছেড়ে উড়ে গিয়েছেন। সুখে-দুঃখে কখনওই তাঁদের পাশে পাওয়া যায়নি। আর এটাই ভোটারদের মন ঘোরানোর চাবিকাঠি।

গত লোকসভা নির্বাচনে (Lok Sabha Election) এই তিনটি আসনেই জিতেছিল বিজেপি (BJP)। কোচবিহারে নিশীথ প্রামাণিক ভোটে জিতে শুধু সাংসদ হয়েছেন তাই নয়, কেন্দ্রের প্রতিমন্ত্রীও হয়েছেন। অথচ এলাকার উন্নয়ন তো দূর অস্ত, রাজ্যের বকেয়া আটকে দেওয়ার পিছনে তাঁর হাত রয়েছে বলে অভিযোগ। এই বিদায়ী সাংসদকেই ফের প্রার্থী করেছে বিজেপি। তাঁর সঙ্গে টক্কর তৃণমূলের (TMC) জগদীশচন্দ্র বসুনিয়ার। কংগ্রেস বাম জোটের প্রার্থী ফরওয়ার্ড ব্লকের নীতিশচন্দ্র রায়।

জলপাইগুড়িতেও লোকসভা কেন্দ্রে বিদায়ী সাংসদকেই টিকিট দিয়েছে বিজেপি। তাদের প্রার্থী জয়ন্তকুমার রায়ের বিরুদ্ধে তৃণমূল প্রার্থী করেছে ধূপগুড়ির বিধায়ক নির্মলচন্দ্র রায়কে। এখানে সিপিএমের প্রার্থী যুবনেতা দেবরাজ বর্মণকে।

আলিপুরদুয়ারে আবার জেতা সাংসদকে পাল্টে দিয়েছে গেরুয়া শিবির। সেখানে বিজেপি প্রার্থী করেছে বিধায়ক এবং বিধানসভার চিফ হুইপ মনোজ টিগ্গাকে। এখানে সাংসদ ছিলেন জন বার্লা। তিনি নির্দল হয়ে দাঁড়াবেন এমন শোনা গিয়েছিল। যদিও শেষ মুহূর্তে সিদ্ধান্ত বদল করে গেরুয়া আঁকড়ে রয়েছেন তিনি। এখানে বিজেপির লড়াই তৃণমূলের প্রার্থী প্রকাশচিক বরাইকের সঙ্গে। তিনি তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ। বাম-কংগ্রেস জোট প্রার্থী আরএসপি-এর মিলি ওঁরাও।

গতবার এই তিনটি আসনেই বিজেপি জয় পেলেও, ভোটের পরে বিজেপির সাংসদের আর এলাকায় দেখা যায়নি। যে চা বাগানের উন্নতির কথা বলে ভোট নিয়েছিল পদ্ম শিবির, তার কোনও প্রতিফলনই তাঁদের কাজে হয়নি। অথচ ভোট না পেলেও উন্নয়নে বিন্দুমাত্র কসুর করেননি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের টাকা দেওয়ার যে প্রতিশ্রুতি মমতা দিয়েছিলেন তা পালন করেছেন শুধু তাই নয়, তা দ্বিগুণ করেছেন।

রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে বাংলার গরিব মানুষকে ১০০ দিনের কাজ করিয়েও টাকা দেয়নি মোদি সরকার। সেই ৫৯ লক্ষ জব কার্ড হোল্ডারকে কাজের টাকা দিয়েছে রাজ্য সরকার। একুশের নির্বাচনে বাংলায় ভরাডুবি হবার পর আবাসের টাকাও ছাড়েনি কেন্দ্র। মুখ্যমন্ত্রী প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন নির্বাচন মিটে গেলে এ বছরের মধ্যেই প্রথম কিস্তির টাকা পাবেন বৈধ তালিকাভুক্তরা।

আলিপুর দুয়ারে রয়েছে ৬৮টি চা বাগান। এই চা বাগানের উন্নয়ন, ন্যূনতম মজুরি বৃদ্ধির নানা প্রতিশ্রুতি দিয়ে আগেরবার ভোট নিয়েছিল বিজেপি। কিন্তু বাস্তবে তার কোনটাই করেনি। অথচ মুখ্যমন্ত্রীর উদ্যোগে চা সুন্দরী প্রকল্প, চা-শ্রমিকদের জমি পাট্টা প্রদান, চা বাগানে হাসপাতাল, মহিলা চা শ্রমিকদের শিশুদের ক্রেশ- সবটাই হয়েছে। ফল অবশ্য ইতিমধ্যেই পেয়ে গিয়েছে পদ্মশিবির। ২০২৩ সালের পঞ্চায়েত ভোটে এই লোকসভা কেন্দ্রের চা বাগান অধ্যুষিত ৩৯টি গ্রাম পঞ্চায়েতে একটিতেও জিততে পারেনি বিজেপি।

কোচবিহার ও আলিপুরদুয়ার এই দুটো জেলাই রাজবংশী অধ্যুষিত। বিজেপি নেতারা তাদের উন্নয়নে ফিরেও দেখেননি। অথচ রাজবংশীর পরিষদ গঠন, রাজবংশী ভাষার বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন- রাজবংশীদের উন্নয়নে সব রকম উদ্যোগ নিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

সার্বিক উন্নয়নের নিরিখে উত্তরে বিজেপিকে বলে বলে গোল দিয়েছে তৃণমূল। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Bandopadhyay) প্রতিশ্রুতি দিলে সে প্রতিশ্রুতি রাখেন- সেই বিশ্বাস তৈরি হয়েছে। একই সঙ্গে যে কোনও সমস্যায় এইসব জেলার মানুষ পাশে পেয়েছেন খোদ মুখ্যমন্ত্রীকে। তার সাম্প্রতিকতম উদাহরণ জলপাইগুড়ি, আলিপুরদুয়ার, কোচবিহারে বিধ্বংসী মিনি টর্নেডো। দুর্যোগের রাতে বিমানে অত্যন্ত ঝুঁকি নিয়ে বিপর্যস্ত মানুষের পাশে পৌঁছে যান মমতা। ঘটনাস্থল থেকে শুরু করে হাসপাতাল, ত্রাণ শিবির- সারারাত ধরে ঘুরে বেড়ান তিনি। পরের দিন হাসপাতালে অসহায় আহত শিশু ও তার পরিবারের পাশে গিয়ে দাঁড়ান তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। অথচ বিজেপি নেতাদের সেই ফুরসৎ হয়নি একবার বিপর্যস্ত মানুষের পাশে গিয়ে দাঁড়ানোর। তাঁরা ব্যস্ত ছিলেন দিল্লি থেকে হেভিওয়েট নেতাদের নিয়ে এসে প্রচার সভা করা আর তাতে ভিড় জমানোর প্রতিযোগিতায়। এই সবগুলিই এই তিন জেলার নির্বাচনে জয়ের Key Factor হয়ে উঠবে।




Previous articleসকাল থেকে লম্বা লাইন, নির্বিঘ্নেই ভোট গ্রহণ শুরু উত্তরের তিন জেলায়
Next articleদেশের ২১ রাজ্যে ভোট গ্রহণ শুরু, রেকর্ড সংখ্যক ভোটদানের আবেদন প্রধানমন্ত্রীর