পুলিশের সাহায্য চেয়েও পাননি, মণিপুরের নির্যাতিতাদের বয়ানে চাঞ্চল্য

এরপর উন্মত্ত মেইতিরা এসে এক মহিলার বাবাকে গাড়ি থেকে বের করে সেখানেই কুপিয়ে খুন করে। হামলা শুরু হতেই পালিয়ে যায় পুলিশ

দুই নির্যাতিতা নারীর ভাইরাল ভিডিও মণিপুর (Manipur) থেকে গোটা দেশের মনে ২০২৩ সালে একটা চরম আতঙ্ক তৈরি করেছিল। মূল ঘটনার প্রায় দুমাস পরে কুকি (Kuki-Zo) গোষ্ঠীর মহিলাদের উপর নির্যাতনের সেই ঘটনা প্রকাশ্যে আসে। দীর্ঘ টালবাহানার পরে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সিবিআই (CBI)-এর হাতে তদন্তভার যায়। সিবিআই তদন্তে অক্টোবরেই চার্জশিট জমা পড়েছিল। আর সেই চার্জশিটেই প্রকাশ করা হয়েছে বিস্ফোরক তথ্য। নগ্ন অবস্থায় উন্মত্ত মেইতি (Meitei) গোষ্ঠীর জনতার সঙ্গে পথে হাঁটার আগে তাঁরা সাহায্য চেয়েছিলেন পুলিশের। এমনকি একটি পুলিশের জিপসি ভ্যানে উঠে বসলেও তাঁদের রক্ষা করার বদলে উন্মত্ত মেইতি যুবকদের হাতে তাঁদের তুলে দেয় পুলিশই।

লোকসভা নির্বাচনের (Loksabha Election) আবহে মণিপুরে প্রথম ও দ্বিতীয় দফার নির্বাচন হয়েছে। অশান্তি ও শূন্য ভোটের সাক্ষীও থেকেছে উত্তর পূর্বের এই রাজ্য। এরই মধ্যে প্রকাশ্যে এসেছে মণিপুরের ভয়ঙ্কর সেই নারী নির্যাতনের গোপণ তথ্য যা তদন্তে পেয়েছে খোদ কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। সিবিআই-এর চার্জশিট অনুযায়ী, মণিপুরের থৌবল (Thoubal) জেলার চূড়চাঁদপুরের (Churachandpur) সেই ভয়ঙ্কর হিংসার ঘটনার দিন গ্রামের উন্মত্ত মেইতি গোষ্ঠীর আক্রমণ থেকে বাঁচতে গ্রামের প্রধান সহ আটজন একটি জঙ্গলের মধ্যে ঢুকে পড়ে। সেখানে তাঁদের ধরে ফেলে হামলাকারীরা। সেখানে এক পরিবারের দুই মহিলা, যাঁরা সম্পর্কে ঠাকুমা ও নাতনি, তাঁদের পরিবারের এক পুরুষ, তাঁদের সঙ্গে এক ব্যক্তি ও তাঁর দুই কন্যা ও গ্রামের প্রধানকে আলাদা করে দেয় হামলাকারীরা।

এরপর আক্রান্ত দুই মহিলা ও দুই পুরুষ কোনও মতে একটি পুলিশের জিপসি (Gypsy) গাড়ির সামনে পৌঁছয়। গাড়িতে তখন দুই পুলিশকর্মী ছিলেন। বাকি তিন বা চার পুলিশকর্মী বাইরে দাঁড়িয়ে ছিলেন। গোটা ঘটনাই হয়তো এড়ানো যেত যদি পুলিশ সেই সময় সঠিক পদক্ষেপ নিত। তবে চাঞ্চল্যকর, পুলিশকে গাড়ি চালাতে বললে তারা জানায় গাড়ির চাবি হারিয়ে গিয়েছে। তার একটু পরেই পুলিশের গাড়িটি চালিয়ে নিয়ে প্রায় হাজার জনের উন্মত্ত জনতার সামনে এনে ফেলে আক্রান্তদের। প্রাণের ভয়ে আক্রান্ত চারজন পুলিশকে গাড়ি চালিয়ে সেখান থেকে বেরিয়ে যেতে বললে পুলিশ তাঁদের চুপ করে থাকতে বলে। এরপর উন্মত্ত মেইতিরা এসে এক মহিলার বাবাকে গাড়ি থেকে বের করে সেখানেই কুপিয়ে খুন করে। হামলা শুরু হতেই পালিয়ে যায় পুলিশ। তারপর গাড়িটি প্রবল ঝাঁকিয়ে সেখান থেকে তিনজনকে বের করে। অন্য পুরুষটিকে মাটিতে ফেলে মারধর চলে। সেই সময়ই অভিযুক্ত মেইতি যুবকরা ছিঁড়ে ফেলে আক্রান্ত কুকি মহিলাদের পোশাক। এরপরই গোটা দেশের হাড়হিম করা নির্যাতনের ঘটনা ঘটে।

গোটা ঘটনা জঙ্গলে লুকিয়ে থেকে যে আক্রান্ত মহিলা দেখেছিলেন, তাঁর বয়ান চার্জশিটে উল্লেখ করেছে সিবিআই। লোকসভা নির্বাচন প্রক্রিয়ার মধ্যে বারবার বিভিন্ন রাজ্যে মহিলাদের সম্মান নিয়ে সুর চড়ানো নরেন্দ্র মোদির মুখে এক বছর পরেও মণিপুর নিয়ে কোনও কথা শোনা যায়নি। বিরোধীদের চাপে বিচার পাচ্ছেন মণিপুরের নির্যাতিতারা। অথচ যে পুলিশকর্মীরা নিশ্চিৎ অন্যায় জেনেও তার দিকেই মণিপুরের নারীদের ঠেলে দিয়েছিলেন, তাঁদের নিয়ে কোনও কথা আজও বিজেপির কোনও নেতা বা প্রধানমন্ত্রীর মুখে শোনা যায়নি। অথচ এই অভিযোগ কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার রিপোর্টেই উঠে এসেছে।

Previous articleএকনজরে আজকের পেট্রোল-ডিজেলের দাম 
Next articleটানা বৃষ্টিতে বিপর্যস্ত কাশ্মীর, ভূমিধসে মৃত ২২