তৃণমূলের এত দৈন্যদশা আসেনি যে রাজ্যপালকে কলঙ্কিত করে জিততে হবে: শশী পাঁজা

রাজ্যপালকে মহিলার শ্লীলতাহানির জন্য রক্ষাকবচ দেয়নি সংবিধান। তৃণমূল কংগ্রেসের এত দৈন্যদশা আসেনি যে রাজ্যপালকে কলঙ্কিত করে ভোটে জিততে হবে

বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি রাজভবনে আসার কিছু সময় আগেই রাজ্যপাল সি ভি আনন্দ বোসের বিরুদ্ধে শ্লীলতাহানির অভিযোগ তুলেছেন এক মহিলা। পুলিশের কাছে তিনি নিজেকে রাজভবনের অস্থায়ী কর্মী বলে জানিয়েছেন। মহিলার দাবি, রাজভবনে দু’বার খোদ রাজ্যপালের হাতেই শ্লীলতাহানির শিকার হয়েছেন তিনি। বৃহস্পতিবার রাতেই বিবৃতি দিয়ে মহিলার ওই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন রাজ্যপাল। আনন্দ বোসের বিবৃতি ছিল, ‘‘সত্যের জয় হবেই। সাজানো অভিযোগে আমি ভয় পাই না। আমাকে অপবাদ দিয়ে কেউ ভোটের ফয়দা খুঁজলে, ঈশ্বর তাঁদের করুণা করুন। তবে বাংলার দুর্নীতি এবং হিংসার বিরুদ্ধে কেউ আমার লড়াই থামাতে পারবে না।’’ এই আবহে রাজভবন বিবৃতি দিয়ে জানাল, রাজভবনে অশুভ উদ্দেশ্যে কার্যকলাপ চালাচ্ছে একটি রাজনৈতিক দল।

শুক্রবার সাংবাদিক বৈঠক করে তারই জবাব দিলেন রাজ্যের নারী শিশু এবং সমাজ কল্যাণ মন্ত্রী শশী পাঁজা। তাঁর দাবি, রাজ্যপালকে মহিলার শ্লীলতাহানির জন্য রক্ষাকবচ দেয়নি সংবিধান। তৃণমূল কংগ্রেসের এত দৈন্যদশা আসেনি যে রাজ্যপালকে কলঙ্কিত করে ভোটে জিততে হবে।

শশী পাঁজার কথায়, “আজ আমরা কীসের সম্মুখীন হচ্ছি ! যাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠছে তিনি এই রাজ্যের রাজ্যপাল। আর যিনি অভিযোগ করছেন তিনি রাজ্যপালের তৈরি করা পিস রুমের একজন অস্থায়ী মহিলা কর্মী। একবার নয়, দু’দুবার তাঁর উপর শারীরিক নির্যাতন করেছেন রাজ্যপাল। একজন মহিলা অস্থায়ী কর্মী চেয়েছিলেন তাঁর চাকরি স্থায়ী হোক ৷ তার বদলে এ ধরনের ঘটনা সামনে আসায় আমরা স্তম্ভিত।”

শশী পাঁজা আরও বলেন, রাজ্যপালের পদটি অত্যন্ত গরিমাপূর্ণ। তাঁর পদের একটা মর্যাদা রয়েছে, তাঁর বিরুদ্ধে এ ধরনের অভিযোগ ওঠা রাজভবনের প্রতি মানুষের আস্থা নাড়িয়ে দিতে পারে বলে মত রাজ্যের মন্ত্রীর । রাজ্যপাল এই ঘটনাকে অস্বীকার করায় তার বিরুদ্ধেও সরব হয়েছেন শশী পাঁজা ৷ তিনি বলেন, “আপনি সন্দেশখালি গিয়েছিলেন । সেখানে আপনি বলেছিলেন, নারীর অসম্মান করা যায় না । আপনি যাঁদের অভিযোগ শুনেছিলেন, তাঁরা কি জানেন আপনার বিরুদ্ধেও একই অভিযোগ রয়েছে। গতকাল ওই মহিলা কাঁদতে কাঁদতে আরও কয়েকটি নাম বলেছেন। আমি সেই নামগুলোতে যেতে চাই না। অর্থাৎ যিনি পিস রুম খুলেছিলেন, ওয়ার রুম খুলেছিলেন – তিনি এই বিষয়টি অস্বীকার করতে গিয়ে বলছেন তৃণমূল কংগ্রেসের নাকি কোনও ষড়যন্ত্র আছে । কোনও রাজনৈতিক উদ্দেশ্য আছে।

শশী পাঁজা স্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দেন, “তৃণমূল কংগ্রেসের কোনও উদ্দেশ্য নেই । আপনি এই ধরনের কথাগুলি বলে ওই মহিলাকে আরও তাচ্ছিল্য করছেন । আমি মনে করি না রাজভবনের ভিতরে কোনও মহিলার অভিযোগ আর রাজভবনের বাইরে কোনও মহিলার এ ধরনের অভিযোগের মধ্যে কোনও ফারাক থাকে । দেশের আইন কোনওভাবেই দুটো ঘটনাকে আলাদা করে দেখতে পারে না । দুটোই গর্হিত অপরাধ।”

এ দিন ভারতীয় সংবিধানের প্রসঙ্গ তুলে ধরে শশী পাঁজা বলেন, “সংবিধানের ৩৬১ নম্বর ধারায় বলা হয়েছে, রাজ্যপালের কাজকর্ম এবং তাঁর পারফরম্যান্স নিয়ে রাজ্যপাল থাকাকালীন কোনও প্রশ্ন তোলা যায় না। কিন্তু কোনও মহিলার শ্লীলতাহানির ঘটনা কীভাবে তাঁর দায়িত্ব কর্তব্যের অংশ হতে পারে । কীভাবে একজন রাজ্যপাল সংবিধানকে আড়াল করে একজন মহিলার উপর শারীরিক নির্যাতন করতে পারেন । তাঁদের কাছ থেকে সেক্সুয়াল ফেভার চাইতে পারেন । তৃণমূল কংগ্রেসের এত দুর্দিন আসেনি তাঁকে ঢাল করে নির্বাচনে জিততে হবে । প্রশ্ন উঠছে হেয়ার স্ট্রিট থানা রাজ্যপালের বিরুদ্ধে এফআইআর নিতে পারেন কি পারেন না তা নিয়ে । একজন মহিলার বিরুদ্ধে অপরাধ হয়েছে । কীসের বিনিময়ে তাও বলেছেন । এরপরেও যদি তাঁর এফআইআর না-নেওয়া হয়, তিনি যদি বিচার না পান তাহলে কোথায় যাবেন তিনি ? আর এই জায়গা থেকে আমরা মনে করি নিরপেক্ষ তদন্ত হওয়া উচিত ঘটনাটা নিয়ে।”