BJP জিতলে হারাবে আদিবাসীদের অধিকার! পুরুলিয়ায় সতর্ক করলেন অভিষেক, তীব্র আক্রমণ ‘পলাতক’ সাংসদকে

পুরুলিয়ায় দাঁড়িয়ে আদিবাসীদের পাশে থাকার বার্তা দিলেন তৃণমূলের (TMC) সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দোপাধ্যায় (Abhishek Banerjee)। মঙ্গলবার, বাঘমুন্ডিতে দলীয় প্রার্থী শান্তিরাম মাহাতর সমর্থনে প্রচার সভা থেকে বিজেপির (BJP) বিদায়ী সাংসদ জ্যোর্তিময় সিং মাহাতকে ধুয়ে দেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক। তাঁর কথায়, আগেরবার জিতে বাংলার বকেয়া বন্ধ করে দিয়েছিলেন বিজেপ সাংসদ। এবার জিতলে লক্ষ্মীর ভাণ্ডারও বন্ধের হুমকি দিয়েছেন বিজেপি নেত্রী- জানান অভিষেক। এর পরেই আশঙ্কা প্রকাশ করে দিলেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক বলেন, ফের ক্ষমতায় এলে অভিন্ন দেওয়ানি বিধি (Uniform Civil Code) চালু করবে মোদি সরকার। আর তাতে খর্ব হবে আদিবাসীদের অধিকার।

এদিন সভা মঞ্চ থেকে পুরুলিয়ার বর্তমান বিজেপি সাংসদ জ্যোর্তিময় সিং মাহাতকে নিশানা করেন অভিষেক। পুরুলিয়ার ঝাড়খন্ড সীমানা ঘেঁষা তুলিনের জনসভা থেকে তীব্র আক্রমণ করেন তিনি। বলেন, এই সাংসদ বছরে ১০ মাস রাঁচিতে থাকেন, তার ২ মাস পুরুলিয়ায়। এখন ভোটের সময় এলাকায় এসেছেন ভোট চাইতে। অভিষেক বলেন, “কুড়মিদের জাতিসত্ত্বার বিষয়ে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। পাঁচ বছর হয়ে গেল, প্রধানমন্ত্রীর কথা ছেড়ে দিন, এলাকার সাংসদ যিনি ২ লক্ষের বেশি ভোটে জিতেছেন, তিনিও কিছু করেননি। কোভিডের সময় সাংসদ পলাতক। এক বছরে ১০ মাস থাকে রাঁচিতে। আর এখন ভোট চাইতে এসেছে’। সঙ্গে হুঁশিয়ারি, ‘বিজেপি জিতবে না, জিতবে তৃণমূল।“ তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক বলেন, এই নির্বাচনে তৃণমূল প্রার্থী শান্তিরাম মাহতকে জেতালে আগামী ৩-৪ মাসের মধ্যে প্রতি বিধানসভায় সাংসদের একটি করে কার্যালয় করে দেবেন তিনি। সেখানে প্রতিনিধিরা থাকবেন মানুষের সমস্য়া শোনা ও সমাধানের জন্য।

অভিষেক প্রশ্ন তোলেন, জেলার জন্য কী করেছেন বিজেপি সাংসদ! কটাক্ষ করে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক বলেন, একটা কাজ অবশ্য করেছেন, সাংসদ হয়েই একশো দিনের কাজের টাকা বন্ধ করে দিয়েছেন। ওর আগে সাংসদ ছিলেন তৃণমূলের। তখন কিন্তু একশো দিনের কাজ বন্ধ হয়নি। পুরুলিয়ায় লক্ষীর ভান্ডার পাচ্ছেন ৬ লক্ষ৬৩হাজার মহিলা। এটা রাজ্য দেয়। ওদের বন্ধ করার ক্ষমতা নেই। অভিষেক আশ্বাস দেন, তৃণমূল কংগ্রেস যতদিন থাকবে ততদিন লক্ষীর ভান্ডার প্রকল্প কেউ বন্ধ করতে পারবে না। কোচবিহারের বিজেপির এক নেত্রীর বক্তব্য শুনিয়ে অভিষেক বলেন, পুরুলিয়ায় ৬জন বিজেপির বিধায়ক আছেন। তবু এখানে এমন কোনও মহিলা নেই যিনি লক্ষ্মীর ভাণ্ডার পাননি।

বিজেপির বিভাজনের রাজনীতি নিয়েও সরব হন অভিষেক। দুদিন আগে পুঞ্চায় সভা করতে এসে শুভেন্দু অধিকারী বলেছিলেন আদিবাসী কুড়মি সমাজের প্রার্থী অজিত প্রসাদ মাহাত দাঁড়িয়েছেন তৃণমূলের সুবিধা করে দিতে। ওই সভায় কংগ্ৰেস প্রার্থী নেপাল মাহাতকেও কদর্য ভাষায় আক্রমণ করেছিলেন তিনি। অভিষেকের কথায়, ভোটে সবাই দাঁড়াতে পারেন। আমরা ব্যক্তি আক্রমণে বিশ্বাস করি না।

তপশিলি মানুষ, আদিবাসীদের পাশে থাকার বার্তা দেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক। তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, বিজেপি জিতলে দেশে অভিন্ন দেওয়ানি বিধি (Uniform Civil Code) চালু করবে। বলেন, “অভিন্ন দেওয়ানী বিধি কার্যকর হলে আদিবাসী, কুড়মি, ভূমিজ, তফশিলি মানুষরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। আদিবাসীদের জঙ্গলের অধিকার চলে যাবে। আদিবাসী, ভূমিজদের বঞ্চিত করেছে। বাংলা জুড়ে ৫৯ লক্ষ মানুষের ১০০ দিনের টাকা বন্ধ করে রেখেছে বিজেপি। জাতিসত্ত্বার আন্দোলনকে এরা স্বীকৃতি দেয়নি।“ এর জেরে আদিবাসীদের অধিকার, তাদের স্বাতন্ত্র সবই হারিয়ে যাবে। আদিবাসী বিরোধী বিজেপিকে হটানোর ডাক দেন অভিষেক।

শান্তিরাম মাহাতর প্রশংসা করে অভিষেক বলেন, যে মানুষটা ১৯৭৯ সালে প্রথম বিধায়ক হয়েছেন, মন্ত্রী হয়ে জেলায় অসংখ্য উন্নয়নমূলক কাজ করেছেন তিনি। সেই প্রবীণ মানুষটিকে ২৫মে ভোটের দিন ৪নম্বর বোতাম টিপে জেতানোর আবেদন জানান তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক। বলেন, বিজেপি রামের নামে ভোট চাইতে এলে বলবেন, দেব শান্তি’রাম’কে দেব। মঞ্চে তখন ছিলেন দলের পুরুলিয়া জেলা পর্যবেক্ষক তন্ময় ঘোষ, জেলা তৃণমূল কংগ্রেস সভাপতি সৌমেন বেলথরিয়া, জেলা তৃণমূলের প্রচার কমিটির চেয়ারম্যান সুজয় বন্দ্যোপাধ্যায়, মন্ত্রী সন্ধ্যারানি টুডু, বিধায়ক সুশান্ত মাহাত-সহ তৃণমূল নেতৃত্ব।





Previous articleলোকসভা নির্বাচনের প্রচারে পূর্ব মেদিনীপুরে বিশেষ নজর, একগুচ্ছ জনসভা মমতা- অভিষেকের!
Next articleমোদি গ্যারান্টি 420, ছুঁলেই ‘440’ ভোল্ট: কল্যাণীতে তোপ মমতার