ফের মোদির ভুয়ো বিজ্ঞাপনের পর্দাফাঁস: আবাস যোজনার নামই শোনেননি ‘মডেল’ লক্ষ্মী!

একের পর বিজেপির ভুয়ো বিজ্ঞাপন। মোদির মিথ্যাচারের পর্দাফাঁস। আবাস যোজনায় ঘর পেয়েছেন বলে যে মহিলাকে পাশে নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর ছবি দিয়ে বিজ্ঞাপন (Advertisement) করা হয়েছে, আবাসের টাকা পাওয়া তো দূরস্ত, এর রকম কোনও প্রকল্পের নামই শোনেননি তিনি। আদপে বিহারের ছাপরা জেলার বাসিন্দা লক্ষ্মীদেবী নামের ওই মহিলা গত ফেব্রুয়ারি মাসে কলকাতার বাবুঘাটে এসেছিলেন শৌচালয়ের কাজ করতে, সেখানেই তাঁর ছবি তোলা হয়েছে বলে মনে করছেন তিনি। একটি সর্বভারতীয় সংবাদ মাধ্যমে ওই মহিলার সাক্ষাৎকার প্রকাশ হয়। আর তাতেই মোদির মিথ্যাচারের বেলুন চুপসে যায়।

এর আগেও বিজেপি সরকারের ভুয়ো বিজ্ঞাপনের (Advertisement) পর্দাফাঁস হয়েছে। বিনামূল্যে উজালা গ্যাস পেয়েছেন বলে যে মহিলাকে দিয়ে বিজ্ঞাপন করা হয়েছে, তাঁর রান্নাঘরে জ্বলে কাঠের উনুন। সেই নিয়ে প্রবল সমালোচনার মুখে পড়ে মোদি সরকার। তারপর সেই বিজ্ঞাপন সরে গেলেও ভুয়ো প্রচারের রাস্তা থেকে সরে আসেননি গেরুয়া শিবির। লোকসভা নির্বাচনের (Loksabha Election) জন্য কোটি কোটি টাকা ব্যয় করে সংবাদপত্রের প্রথম পাতায় কখনও পাতাজোড়া বা কখনও আধপাতার বিজ্ঞাপন দেওয়া হচ্ছে। আর সেখানেও মিথ্যের বেসাতি। প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার একটি বিজ্ঞাপন কলকাতা এবং আশেপাশের প্রভাত খবর, সানমার্গ এবং অন্যান্য অনেক সংবাদপত্রের সংস্করণে প্রকাশিত হয়। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির (Narendra Modi) হাসি মুখের ছবির পাশাপাশি বিজ্ঞাপনে এক মহিলার ছবি। ‘আত্মনির্ভর ভারত, স্বনির্ভর বাংলা’ স্লোগান-সহ এই বিজ্ঞাপনে লেখা আছে, “আমি প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার আওতায় বাড়ি পেয়েছি। মাথার উপর ছাদ পেয়ে স্বাবলম্বী হয়েছে প্রায় ২৪ লাখ পরিবার। আসুন একসঙ্গে একটি স্বনির্ভর ভারতের স্বপ্নকে বাস্তবে পরিণত করুন।“ সংবাদপত্রের প্রথমপাতার অর্ধেক অংশে ছাপা বিজ্ঞাপনে যে মহিলার ছবি রয়েছে তাঁর নাম লক্ষ্মী দেবী।

৪৮ বছর বয়সী লক্ষ্মী পত্রিকায় তাঁর ছবি দেখার পর থেকেই চিন্তিত। কখন এবং কে তাঁর এই ছবি তুলেছে সে সম্পর্কেও তিনি জানেন না। তিনি গঙ্গাসাগরের সময় বাবুঘাটে শৌচালয়ে কাজ করেন। আদতে বিহারের ছাপরা জেলার বাসিন্দা লক্ষ্মীদেবী শৈশবে সপরিবারে কলকাতায় আসেন। গত ৪০ বছর ধরে তিনি কলকাতার বৌবাজার থানার মালাগা লাইন এলাকার বাসিন্দা। বিহারের চন্দ্রদেব প্রসাদকে বিয়ে করেছিলেন লক্ষ্মী। ২০০৯-এ স্বামী মারা যান। বিজ্ঞাপনে লক্ষ্মীর ছবির সঙ্গে লেখা আছে, “আমি প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার আওতায় নিজের বাড়ি পেয়েছি“। কিন্তু ওই মহিলা জানান, তাঁর নিজের কোনও বাড়িই নেই। ৫০০ টাকা ভাড়ায় পরিবারের পাঁচ সদস্যের সঙ্গে একটি বস্তির ঘরে থাকেন তিনি।

লক্ষ্মী দেবীর কথায়, তাঁর গ্রামে জমি, বাড়ি কিছুই নেই। দুই ছেলে কুরিয়ার সার্ভিসে কাজ করে। দৈনিক তাঁদের আয় ২০০ থেকে ৩০০ টাকা।
আপনি বাড়ির মালিক?
প্রশ্নের উত্তরে লক্ষ্মী বলেন, “আমার বাড়ি কোথায়? সারা জীবন ফুটপাতে কাটিয়েছেন। আমি ৫০০ টাকা ভাড়া নিয়ে একটি বস্তিতে থাকি। যেখানে আমার দুই ছেলে, এক পুত্রবধূ ও তাদের দুই সন্তান থাকে। আমরা একই বাড়িতে থাকি।“
লক্ষ্মী দেবীর পুত্রবধূ অনিতা বলেন, “আমরা অনেক কষ্টের মধ্যে বেঁচে আছি। আমরা প্রতি লিটার ১০০ টাকা দরে কেরোসিন তেল কিনে রান্না করি।

আবাস যোজনার কথাই জানেন না লক্ষ্মীদেবী বা তাঁর পরিবারের সদস্যপরা। অর্থাৎ না আছে মাথার উপর পাকা ছাদ, না আছে বিনা পয়সায় উজালা গ্যাস। শুধু মিথ্যে প্রতিশ্রুতি আর ভুয়ো বিজ্ঞাপন দিয়ে ভোট বৈতরণী পার করতে চাইছে বিজেপি। এই ভুয়ো বিজ্ঞাপনের বেলুন চুপসে দিল সংবাদ মাধ্যম।






Previous articleভোটের জন্য শহরে কমছে বাস, ভোগান্তি নিত্যযাত্রীদের
Next articleবিজ্ঞাপনে লোগো নেই! ‘জাতীয় দল’ বিজেপিকে কড়া বার্তা প্রধান বিচারপতির