এক মঞ্চে আসুন, কে ঠিক কে ভুল প্রমাণ হয়ে যাবে: মোদিকে চ্যালেঞ্জ মমতার

আমার বেদ-বেদান্ত কোরাণ-পুরাণ-বাইবেল-ত্রিপিটকও আছে। ইফতারেও যাই, গির্জাতেও যাই। আর দুর্গাপুজো নিয়ে তো আমরা গর্ববোধ করি

মোদিজি বাংলা সম্পর্কে বলতে আসেন। আমিও দেশ সম্পর্কে কম জানি না। একদিন আসুন না, কে ঠিক কে ভুল প্রমাণ হয়ে যাবে।রাজি আছেন? চ্যালেঞ্জ অ্যাকসেপ্ট করবেন? আমি কিন্তু রাজি আছি। বৃহস্পতিবার উত্তর কলকাতার প্রার্থী সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের সমর্থনে বউবাজারের জনসভা থেকে সরাসরি প্রধানমন্ত্রীকে চ্যালেঞ্জ ছুড়লেন তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এদিন তিনি বলেন, আমি মোদিবাবুকে আপনি-আজ্ঞে করে বলছি, প্লিজ, আসুন। আপনি জায়গা ঠিক করুন। আমাকে যেখানে যেতে বলবেন, আমি যাওয়ার জন্য প্রস্তুত। একটা মঞ্চ তৈরি করুন। সেখানেই কে ঠিক, কে ভুল ঠিক হয়ে যাবে।
এদিন মোদিকে কটাক্ষ করে তৃণমূল নেত্রী বলেন, আপনার সঙ্গে টেলি প্রম্পটার থাকুক, তাতে আমার আপত্তি নেই। তা না হলে তো আপনি আবার বলতে পারেন না! দেখে বলতে হয়। আমি কিন্তু একা থাকব। আপনার সঙ্গে প্রয়োজনে ১০টা অফিসারকেও ডেকে নিতে পারেন। সাংবাদিকদের দাঁড় করিয়ে দিন। জীবনে তো কোনওদিন প্রেস কনফারেন্স করেননি। এবার সাংবাদিকরা তাঁদের মতো প্রশ্ন করবেন, আপনি উত্তর দেবেন, আমিও উত্তর দেব। রাজি আছেন? চ্যালেঞ্জ অ্যাকসেপ্ট করবেন?
এদিন মমতা সাফ বলেন, আপনি মুখ্যমন্ত্রী থেকে প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন পার্টির জন্য। আর আমি মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার আগে দুবার রেলমন্ত্রী ছিলাম, কয়লামন্ত্রী ছিলাম, যুব-ক্রীড়া মন্ত্রী ছিলাম, মহিলা ও শিশু কল্যাণমন্ত্রী ছিলাম। আমি সাত-সাতবার এমপি ছিলাম। আমি দেশটাকে আপনার থেকে বেশি চিনি। আমি হিংসা করে রাজনীতিতে আসিনি। তিনি বলেন, বাবরি মসজিদ ধ্বংসের পর কলকাতায় তখন সব পালিয়ে গিয়ছিল। কোনও নেতাকে রাস্তায় দেখিনি। সিপিএম তখন ছিল ক্ষমতায়। রাইটার্স বিল্ডিংয়ে ছুটে গিয়েছিলাম। জ্যোতিবাবুকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম, বলুন, কোনও সহযোগিতা করতে হবে কি না? আমি সমস্ত কমিউনিটিকে ফেস করেছি। সবাই যখন ঘুমিয়ে ছিল, আমি তখন ঘুরে বেড়াতাম। তখন যুব রাজনীতি করতাম। তখন আমি ইয়ুথ স্পোর্টস মিনিস্টার ছিলাম। পদত্যাগও করেছিলাম। বাড়িতে খাবারের প্যাকেট তৈরি করতাম রিলিফের জন্য। একদিন মাদারের সঙ্গে দেখা হয়েছিল। মাদার তখন লরেটোর সামনে দাঁড়িয়েছিলেন। মাদার আমাকে দেখে অবাক। মমতা যখন এ কথা বলছেন, তখন মঞ্চে হাজির ফিরহাদ হাকিম থেকে কুণাল ঘোষ, নয়না বন্দ্যোপাধ্যায়, মদন মিত্র, শান্তনু সেন, পরেশ পালের মতো হেভিওয়েট সব তৃণমূল নেতারা। প্রকাশ্য সভা থেকে মমতার প্রশংসায় পঞ্চমুখ হতে দেখা যায় সুদীপকেও।
এরপর তিনি বলেন, যে যত পারেন আমাকে গালাগালি দিন আমার গায়ে আর ফোস্কা পড়বে না। ওসব আর ম্যটার করে না। আমাকে ম্যাটার করে মানুষ। মানুষ যদি আমাকে ভুল বোঝে আমি সবথকে দুঃখ পাব সেদিন। আমি কাউকে ভয় পাই না, শুধু মানুষকে ভয় পাই। মানুষ যেদিন বলবে আমি সেদিন চলে যাব মাথা নত করে।
এদিন প্রধানমন্ত্রীকে নিশানায় তিনি আরও বলেন, আমরা কখনও বলতে পারি জগন্নাথ দেবও কারোকে গুরু মানতেন। কখনও বলছে আমার কোনও বায়োলজিক্যাল বার্থ নয়। ওঁর এই মন্তব্যের অর্থ আমি ঠিক বুঝলাম না। আমাদের সবার তো মা-বাবা আছে। কিন্তু উনি কী বলতে চাইলেন, আমি অন্তত বুঝিনি। যদি সত্যিই জগন্নাথ দেব কোনও রাজনৈতিক ব্যক্তিকে তাঁর গুরু মেনে থাকেন, তাঁর নামে একটা মন্দির করে দেওয়া উচিত। মন্দির করে দিলে তাঁর একটা ফোটোও থাকবে। সেখানে ফুল, তুলসি, চন্দনও দেওয়া হবে। ভোগ রান্নাও হবে। আমরা দেবতা মানি কাদের? দেব-দেবতা বলে হয় না, কাজের মধ্য দিয়ে তৈরি হয়। আমার অবশ্য একটা সুবিধা আছে সর্বধর্ম সমন্বয় করি। আমার বেদ-বেদান্ত কোরাণ-পুরাণ-বাইবেল-ত্রিপিটকও আছে। ইফতারেও যাই, গির্জাতেও যাই। আর দুর্গাপুজো নিয়ে তো আমরা গর্ববোধ করি।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, বাংলা নিয়ে গর্ব করেন না। এই বাংলা না থাকলে ১৯৪৭ সালে স্বাধীনতা আসত না। বাংলার মাটি থেকে আন্দোলন জাগরণের ফলেই স্বাধীনতা এসেছিল। বাবা সাহেব আম্বেদকর প্রথম এমপি নির্বাচিত হয়েছিলেন বাংলা থেকে। দিল্লিতে যখন ফিডোব্যাট মিডনাইট হচ্ছে গান্ধীজি ছিলেন বেলেঘাটায়। হিন্দু-মুসলমানে যাতে দাঙ্গা না হয় সেখানে বসেছিলেন। অনশন ভেঙেছিলেন। বাংলা ছিল আগে ভারতবর্ষের রাজধানী।
এদিন বিজেপির পাসাপাশি সিপিএমকেও একহাত নেন মমতা। বলেন, বিজেপিকে সবথেকে বেশি মদত দেয় বামেরা। সিপিআইএমকে ক্ষমা করবেন না। আগামী ২৯ তারিখ কলকাতা উত্তরে ও ৩০ তারিখ কলকাতা দক্ষিণে পদযাত্রা করবেন বলে ঘোষণা করেন মমতা। বলেন, বাংলায় কোন ধর্মের বিভেদ নেই। বাংলা কাউকে অসম্মান করে না। তার স্পষ্ট কথা, কুৎসার জবাব কুৎসায় দিতে চাই না। তিনি বলেন, ২৬ হাজার চাকরি খেয়েছে বিজেপি। আসলে বিজেপি বিভেদের রাজনীতি করে। বোমা ফাটাবো বলে চাকরি খেয়ে নিল। এদিন ওবিসি সার্টিফিকেট বাতিল নিয়েও সরব হন মমতা। বলেন, সবার সার্টিফিকেট বহাল থাকবে। মানুষের মধ্যে ভাগাভাগি করবেন না।





Previous articleকেন্দ্রে অ-বিজেপি সরকার আসবেই! ‘জুমলাবাজি’ প্রকাশ্যে এনে ‘মোদি বিদায়ের’ ডাক দেশ বাঁচাও গণমঞ্চের
Next articleটি-২০ বিশ্বকাপে ভারত-পাক ম্যাচের টিকিট দাম ১৭ লক্ষ টাকা, সোশ্যাল মিডিয়ায় আইসিসিকে একহাত ললিত মোদির