তুমি রবে নীরবে: কথায়-গানে-কবিতায় মৌ রায়চৌধুরীকে স্মরণ

আছে দুঃখ, আছে মৃত্যু, বিরহদহন লাগে।
তবুও শান্তি, তবু আনন্দ, তবু অনন্ত জাগে॥

কোথাও প্রত্যক্ষভাবে নেই। কিন্তু ছড়িয়ে রয়েছেন সবখানে। স্মরণসভায় সবার মধ্যেই যেন উপস্থিত ছিলেন টেকনো ইন্ডিয়া গ্রুপ-এর কো চেয়ারপারসন, সিস্টার নিবেদিতা ইউনিভার্সিটির গভর্নিং বডি সদস্য, আজকাল দৈনিকের ডিরেক্টর মৌ রায়চৌধুরী (Mou Ray Chowdhury)। বৃহস্পতিবার, মিলনমেলা প্রাঙ্গণে একটি মনোজ্ঞ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে স্মরণ করা হল মৌ রায়চৌধুরীকে। কথায়, গানে, কবিতায়- তাঁর টুকরো টুকরো স্মৃতিচারণ করলেন বিশিষ্টরা।  এই উপলক্ষ্যে একটি স্মারক পুস্তিকা প্রকাশ করা হয়।

রাজ্যের মন্ত্রী ইন্দ্রনীল সেন (Indranil Sen), সাংসদ দোলা সেন (Dola Sen), তৃণমূল নেতা জয়প্রকাশ মজুমদার (Jayprakash Majumder), রাজ্যের মন্ত্রী বেচারাম মান্না। ছিলেন সাহিত্যিক-সাংবাদিক রঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়, পরিচালক গৌতম ঘোষ, পত্রভারতীর কর্ণধার ত্রিদিব চট্টোপাধ্যায়, বাচিকশিল্পী ব্রততী বন্দ্যোপাধ্যায়, প্রণতি ঠাকুর, সঙ্গীতশিল্পী সৈকত মিত্র, জয়তী চক্রবর্তী, শোভন গঙ্গোপাধ্যায়, সাহেব চট্টোপাধ্যায়, চিত্রশিল্পী শুভাপ্রসন্ন-সহ সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষজন। সবার কথাতেই উঠে এসেছে মৌ রায় চৌধুরীর হাসিখুশি প্রাণবন্ত উজ্জ্বল উপস্থিতির কথা গান কবিতা লেখা এই সবকিছুতেই পারদর্শী ছিলেন সত্যম-পত্নী।ব্রততী বন্দ্যোপাধ্যায়ের জানান, তাঁর সঙ্গে পারিবারিক সম্পর্ক ছিল মৌয়ের। দুজনেরই সংস্কৃতির প্রতি প্রেম, সেই যোগাযোগকে আরও নিবিড় করেছিল। সাজগোজের ব্যাপারেও দুজনের বিস্তার কথা হতে বলে স্মৃতিচারণায় জানান ব্রততী।গৌতম ঘোষ জানান, একেবারে দাদা-বোনের সম্পর্ক ছিল মৌ রায়চৌধুরীর সঙ্গে। তাঁর ছবি ‘শঙ্খচিলে’র প্রযোজক ছিলেন মৌ। রাষ্ট্রপতি পুরস্কার পাওয়ার পরে মৌয়ের উচ্ছ্বাস আজও ভুলতে পারেন না পরিচালক গৌতম ঘোষ (Goutam Ghosh)।

মৌয়ের এই হঠাৎ চলে যাওয়া মানতেই পারছেন না রঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর কথায়, কিছু কিছু সময় ভাষা হারিয়ে যায়। তাঁকে দিয়ে অনেক ভালো ভালো কাজ করিয়ে নিয়েছিলেন মৌ রায়চৌধুরী। এখন তারই স্মৃতি রোমন্থন করছেন রঞ্জন।

জয়তী চক্রবর্তী জানান, এভাবে যে কোনদিন মৌদির কথা বলতে হবে তা, তিনি দুঃস্বপ্নেও ভাবেননি। জয়তীর গান খুবই পছন্দ করতেন মৌ। নিজেও ছিলেন সঙ্গীতশিল্পী। ফলে গান নিয়ে বহু গল্প-আড্ডা হত তাঁদের। সু-রাঁধুনি ছিলেন মৌ। নানা পদ রেঁধে খাওয়াতেন জয়তীকে। একসঙ্গে বিদেশে বিশ্ববঙ্গ সম্মেলনেও গিয়েছিলেন তাঁরা। কথা বলতে গিয়ে আবেগ জড়িয়ে আসে জয়তীর কণ্ঠে।

অনুষ্ঠানের সংগীত পরিবেশন করেন সৈকত মিত্র, শোভন গঙ্গোপাধ্যায়, জয়তী চক্রবর্তী, সাহেব চট্টোপাধ্যায়-সহ বহু শিল্পী। আবৃত্তি করেন ব্রততী বন্দোপাধ্যায়, প্রণতি ঠাকুর প্রমূখ। স্মৃতিচারণ করেন গৌতম ঘোষ-সহ বিশিষ্টরা।

৭ মে মাত্র ৫৩ বছর বয়সে মৃত্যু হয় মৌ রায়চৌধুরীর।রেখে গেলেন স্বামী সত্যম রায়চৌধুরী (Satyam Ray Chowdhury), পুত্র দেবদূত, অগনিত সহকর্মী ও অনুরাগীদের। সাহিত্য- সংস্কৃতির প্রতি মৌ রায়চৌধুরীর (Mou Ray Chowdhury) গভীর অনুরাগ সর্বজনবিহিত। কবি হিসেবে তার সুখ্যাতি ছিল। রবীন্দ্রনাথ ছিলেন মৌ রায়চৌধুরীর প্রাণসখা। অপূর্ব গানের গলা ছিল মৌয়ের। তবে, সবচেয়ে যে গুণটির জন্য তিনি জনপ্রিয় ছিলেন, তাহলে তাঁর মিষ্টি স্বভাব। সবাইকে আপন করে নেওয়ার, সবার সঙ্গে মিশে যাওয়ার অসাধারণ ক্ষমতা ছিল তাঁর। এদিন তাঁর স্মরণসভার অনুষ্ঠানে অসংখ্য কাট-আউট আর ছবিতে তাঁর হাসি মুখ দেখে একটাই কথা বলা যায়, তুমি রবে নীরবে।






Previous articleএবার আন্তর্জাতিক ফুটবলে নতুন কার্ড, দেখা যাবে কোপা থেকে
Next articleপরের আইপিএল-এ কি খেলবেন মাহি? মুখ খুললেন চেন্নাই-এর সিইও