যাদবপুরে বামের ভোট রামে টানার কৌশলী বার্তা মোদির

২০১১ সালে রাজ্যে রাজনৈতিক পালাবদলের পর থেকে সিপিএম তথা বামেদের রক্তক্ষরণ শুরু হয়েছিল। সেই ক্ষরণ এমন এক জায়গায় পৌঁছে গিয়েছে, যে ২০২৯ সালের লোকসভা ও একুশের বিধানসভা ভোটে খাতা খুলতে পারেনি বামেরা। তবে সিপিএমের সামান্য কিছু সংগঠন এখনও রাজ্যের যে জায়গাগুলিতে এখনও বেঁচে আছে, তার মধ্যে একটি যাদবপুর। এই কেন্দ্রে একসময় সিপিএমের রথী-মহারথীরা শাসন করেছেন। শেষবার এই যাদবপুর থেকেই সিপিএমের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য।

ফলে বিধানসভায় শূন্য হলেও যাদবপুরে সিপিএমের ভোট ব্যাঙ্ক এখনও ইর্ষণীয়। সেকারণেই এদিন বারুইপুরের সভা মঞ্চ থেকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সিপিএম সমর্থকদের উদ্দেশে একটি কৌশলী বার্তা দেন। “শত্রুর শত্রু বন্ধু” এই ফর্মুলা থেকে বাম সমর্থকদের বিজেপিকে ভোট দেওয়ার আর্জি জানান।

মোদি ভালই জানেন, বাংলায় বিজেপির যে ভোট ব্যাঙ্ক তৈরি হয়েছে সেটা আদপে বামের ভোট রামের আসার সৌজন্যেই হয়েছে। কারণ, গত কয়েক বছরে সিপিএম বুঝে গিয়েছে তাদের পক্ষে তৃণমূলের মোকাবিলা সম্ভব নয়, তাই নিজেদের নাক কেটে পরের যাত্রা ভঙ্গ করতে গিয়ে ভোট বিজেপির বাক্সে ট্রান্সফার করেছে। যার সুবাদে আজ তারা বাংলায় শূণ্য!

কিন্তু এবার যাদবপুরে সিপিএম স্বচ্ছভাবমূর্তির নতুন প্রজন্মের নেতা সৃজন ভট্টাচার্যকে লড়াইয়ের ময়দানে নামিয়েছে। প্রাক্তন ছাত্রনেতা সৃজন বিরোধী প্রার্থী হিসেবে এ রাজ্যের প্রধান বিরোধী দল বিজেপিকে কড়া চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়েছেন। প্রচারে বলে বলে বিজেপি প্রার্থী অনির্বাণ গঙ্গোপাধ্যায়কে দশ দিয়েছে সিপিএমের সৃজন। ফলে যাদবপুর কেন্দ্রে বিজেপি নয়, তৃণমূল প্রার্থী সায়নী ঘোষের মূল প্রতিপক্ষ হওয়ার দৌড়ে এগিয়ে সৃজন! সেই জায়গা থেকেই আতঙ্কে ভুগছে বিজেপি।

আরও পড়ুন- “আপনেরা কেমেন আছেন’, “আপনেদের আমার ভালবাস”! বাংলা বলে হাসির খোরাক মোদি

যাদবপুর কেন্দ্রে প্রচারে আসার আগে বঙ্গ বিজেপি সেটা বুঝেই মোদিকে অঙ্কের হিসেবটা বুঝিয়ে দিয়েছে। মোদিও বুঝেছেন, এই কেন্দ্রে বামের ভোট রামে না এলে জয় তো দূরের কথা, জামানত বাজেয়াপ্ত হয়ে যেতে পারে বিজেপি প্রার্থীর। তাই এদিন বারুইপুরের সভা থেকে বাম সমর্থকদের উদ্দেশ্যে মোদির বার্তা, “সিপিএম এখানে ভোটে লড়ছে তৃণমূলকে মদত দিতে।” নিজের দাবির সপক্ষে মোদি বলেন, “সিপিএমকে ভোট দিলে কী হবে? সেই তো দিল্লিতে গিয়ে দিদির হাত ধরবে। ওদের তো একটাই দোকান, ইন্ডিয়া অ্যালায়েন্স ! তা হলে কেন নিজেদের ভোটটা নষ্ট করবেন। ৬ দফার ভোটে তো স্পষ্ট হয়েই গেছে, আমরাই ক্ষমতায় ফিরছি।”

উল্লেখ্য, ২০০৯ এবং ২০১৪ সালের লোকসভা ভোটে যাদবপুর লোকসভা আসনে দ্বিতীয় স্থানে ছিল সিপিএম। ২০১৯ সালের অবশ্য বামেদের ভোট ব্যাঙ্কে ধস নামে । ওই ভোটে বামেদের ১৫.০৫ শতাংশ ভোট কমেছিল এবং বিজেপির ১৫.১৪ শতাংশ ভোট বেড়েছিল। ২০১৯ সালের লোকসভা ভোটে তৃণমূলের প্রাপ্ত ভোটের হার ছিল ৪৭.৯১ শতাংশ। বিজেপি ও সিপিএমের প্রাপ্ত ভোটের হার ছিল যথাক্রমে ২৭.৩৬ শতাংশ এবং ২১.০৪ শতাংশ। কিন্তু এবার পরিস্থিতি অনেকটাই আলাদা। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একটি বড় অংশের দাবি, যাদবপুরের লড়াই মূলত তৃণমূল আর সিপিএমের মধ্যে। কারণ, এই কেন্দ্রে এবার বামের ভোট রামে যাওয়ার সম্ভাবনা অনেকটাই কম! তাই ভোটের তিনদিন আগে মোদিকে এনে যাদবপুরের মাটিতে সিপিএম সমর্থকদের বার্তা দিল পদ্ম শিবির!

 

 

Previous article“আপনেরা কেমেন আছেন’, “আপনেদের আমার ভালবাস”! বাংলা বলে হাসির খোরাক মোদি
Next articleটিম ইন্ডিয়ার কোচের পদে এগিয়ে গম্ভীর :সুত্র