তৃণমূল-সহ বিরোধীদের আপত্তি উড়িয়ে ১ জুলাই থেকে দেশে চালু হচ্ছে নয়া আইন

লোকসভা ও রাজ্যসভায় বিল নিয়ে আলোচনায় অংশও নেয়নি বিরোধী দলগুলি। শুধু সংসদের ভিতরে নয়, বাইরেও তা নিয়ে সমান প্রতিবাদ জানিয়েছে বিরোধীরা।

আগামিকাল থেকেই গোটা দেশে চালু হচ্ছে ভারতীয় ন্যায় সংহিতা-সহ নতুন তিন অপরাধমূলক আইন। বিরোধীদের আপত্তিকে পাত্তা না দিয়ে এই তিন আইন কার্যকর করছে মোদি সরকার। ১ জুলাই থেকে ভারতীয় আইন ব্যবস্থা থেকে পুরোপুরি মুছে যাবে ব্রিটিশ আমলে তৈরি হওয়া নিয়মগুলি। তার বদলে চালু হবে স্বাধীনতার ৭৫ বছর পার করা ভারতের নতুন আইন। কেন্দ্রের দাবি, এত দিন আইনে সাজার কথা বলা ছিল। এ বার নতুন আইনের নামের মধ্য দিয়েই সাধারণ মানুষ যাতে ন্যায় পান সেই চেষ্টা করা হয়েছে। সংসদে এই বিল পেশ হওয়ার পর থেকেই শুরু হয় বিরোধিতা। লোকসভা ও রাজ্যসভায় বিল নিয়ে আলোচনায় অংশও নেয়নি বিরোধী দলগুলি। শুধু সংসদের ভিতরে নয়, বাইরেও তা নিয়ে সমান প্রতিবাদ জানিয়েছে বিরোধীরা।

সদ্য শেষ হওয়া লোকসভা নির্বাচনের প্রচার পর্বেও তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধীর বক্তব্যে বারাবর শোনা গিয়েছে এই আইন কার্যকর করা নিয়ে ক্ষোভ। মমতা এখনই এই আইন কার্যকর যাতে না হয় সেই আবেদন করে প্রধানমন্ত্রীকে চিঠিও লেখেন। এই আইন বাতিলের দাবিতে আইনি রাস্তাতেও হেঁটেছিল বিরোধীরা। সুপ্রিম কোর্টে মামলাও হয়। এত বিতর্কের মধ্যেও সংসদের দুই কক্ষেই পাশ হয়ে যায় তিন অপরাধমূলক আইনের বিল। ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে সেই বিলে সই করেন রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু। আর চলতি বছরের ফ্রেব্রুয়ারিতে কেন্দ্রীয় সরকার জানিয়ে দেয়, কবে থেকে দেশে এই তিন নতুন আইন কার্যকর হবে। ভারতীয় বিধানে ন্যায়দণ্ডের কাছে সবাইকে সমান চোখে দেখার কথা বলা রয়েছে।
১৮৬০ সালে তৈরি ভারতীয় দণ্ডবিধি-র পরিবর্তে হয়েছে ‘ভারতীয় ন্যায় সংহিতা’। ১৮৯৮ সালের ফৌজদারি দণ্ডবিধি-র নতুন রূপ ‘ভারতীয় নাগরিক সুরক্ষা সংহিতা’ এবং ১৮৭২ সালের ভারতীয় সাক্ষ্য আইন-এর বদলে কার্যকর হচ্ছে ‘ভারতীয় সাক্ষ্য অধিনিয়ম’।জানা গিয়েছে, ন্যায় সংহিতায় নতুন ২০টি অপরাধ চিহ্নিত করা হয়েছে। আর ভারতীয় দণ্ডবিধিতে থাকা ১৯টি বিধান বাদ পড়েছে ন্যায় সংহিতায়। একই সঙ্গে ৩৩টি অপরাধের জন্য কারাদণ্ডের সাজার মেয়াদ বৃদ্ধি করা হয়েছে। ৮৩টি অপরাধের জন্য জরিমানার পরিমাণও আগের তুলনায় বৃদ্ধি পেয়েছে। আবার ২৩টি এমন অপরাধ চিহ্নিত করা হয়েছে, যেখানে একটি বাধ্যতামূলক সর্বনিম্ন শাস্তির কথা বলা রয়েছে ন্যায় সংহিতায়।
হত্যা, আত্মহত্যায় প্ররোচনা দেওয়া, আক্রমণ, গুরুতর আঘাতের মতো অপরাধগুলির জন্য ভারতীয় দণ্ডবিধিতে যে বিধানগুলি ছিল সেগুলি বজায় থাকছে নতুন আইনেও। এ ছাড়াও এই ক্ষেত্রে সংগঠিত অপরাধ, সন্ত্রাসবাদ, গণহত্যার মতো অপরাধ নতুন করে জোড়া হয়েছে। নতুন আইনে নারী সুরক্ষা এবং নারীদের সঙ্গে ঘটা বিভিন্ন অপরাধের ক্ষেত্রে বিধি আরও কঠোর করা হয়েছে।চুরি, ডাকাতি, প্রতারণার মতো অপরাধের জন্য ভারতীয় দণ্ডবিধিতে যে বিধানগুলি ছিল সেগুলিই নতুন আইনে থাকছে। এ ছাড়াও এই ক্ষেত্রে সাইবার অপরাধ এবং আর্থিক প্রতারণার মতো নতুন অপরাধ যুক্ত করা হয়েছে। এত দিন দেশে গণপিটুনির ক্ষেত্রে কোনও আলাদা আইন ছিল না। এ বার এমন অপরাধে কারও মৃত্যু হলে মৃত্যুদণ্ড পর্যন্ত সাজার কথা বলা রয়েছে। কংগ্রেস-সহ অন্য বিরোধী দলগুলিও তাড়াহুড়ো করে বিল পাশের বিরোধিতা করেছিল। কিন্তু বিল পাশ করাতে বেগ পেতে হয়নি মোদীদের। এ বার সেই নতুন আইনই বলবৎ হতে চলেছে দেশে।

 

Previous articleবেড়াতে গিয়ে ঝাড়গ্রামে গণপিটুনিতে মৃত্যু তরুণের! চিকিৎসাধীন জখম বন্ধুও
Next articleবিজেপিমুক্ত মহারাষ্ট্র গঠনের ডাক! বিধানসভা ভোটের আগেই ‘মাস্টারস্ট্রোক’ পাওয়ারের