হাতরাসে মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে ১২৬, আদালতে সিবিআই তদন্তের আর্জি

উত্তরপ্রদেশের হাতরাসের ধর্মীয় অনুষ্ঠানে পদপিষ্ট হওয়ার ঘটনায় এখনও পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১২৬। যার মধ্যে ১০০-র বেশি মহিলা এবং ৭ জন বাচ্চা আছে। উত্তরপ্রদেশ সরকার জানিয়েছে, পদদলিত হয়ে মারা যাওয়া বেশিরভাগ নিহতদের শনাক্ত করা হয়েছে। গুরুতর জখম আরও ৩০ জন। ফলের মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। এদিকে ছোট পরিসরে কীভাবে এত পুণ্যার্থীদের সমাগমের অনুমতি দিয়েছিল প্রশাসন? এমন মর্মান্তিক দুর্ঘটনার গোটা বিষয়টিকে ঘিরে নানা মহলে প্রশ্ন উঠছে। একাধিক ধারায় মামলা দায়ের করে তদন্ত শুরু করেছে উত্তরপ্রদেশ পুলিশ। কিন্তু ধর্মগুরু নারায়ণ সাকার হরির (ভোলে বাবা) বিরুদ্ধে এখনও পর্যন্ত কোনও মামলা দায়ের করেনি পুলিশ। অন্যদিকে, হাতরাসের ঘটনায় সিবিআই তদন্তের আর্জি জানিয়ে এলাহাবাদ হাইকোর্টে মামলা করেছেন এক আইনজীবী।

জানা গিয়েছে, এই ঘটনার জেরে ওই বাবা গ্রেফতার শীঘ্রই গ্রেফতার হতে পারে। নারায়ণ সাকার হরি নিজেকেই ‘গডম্যান’ বলে ঘোষণা করেছিলেন। যার আসল নাম সুরজ পাল। তিনি এখন ফুলরাই গ্রাম থেকে প্রায় ১০০ কিলোমিটার দূরে মাইনপুরীতে তাঁর ‘আশ্রমে’ ছিলেন। যেখানে তিনি হাজার হাজার ভক্তদের উপস্থিতিতে এই অনুষ্ঠানটি করেছিলেন।

ইতিমধ্যেই পুলিশের বড় কর্তার হাথরসের ঘটনাস্থলে পৌঁছে তদন্ত শুরু করেছেন। কিছু অফিসাররা নারায়ণ সাকার হরির আশ্রমে আছেন। এছাড়াও হাথরসে ফরেনসিক টিম এবং ডগ স্কোয়াডও রয়েছে। উত্তরপ্রদেশের প্রাদেশিক আর্মড কনস্ট্যাবুলারি (PAC), ন্যাশনাল ডিজাস্টার রেসপন্স ফোর্স (NDRF), এবং স্টেট ডিজাস্টার রেসপন্স ফোর্স (SDRF) এর টিমও এখনও ঘটনাস্থলে রয়েছে।

অনুষ্ঠানের আয়োজকরা জানিয়েছেন, হাথরসের ঘটনাটি মঙ্গলবার দুপুরে ঘটে। বিপুল পরিমাণে লোক জড়ো হওয়ায় জায়গাটি ছোট পড়ে যায়। সৎসঙ্গে যোগ দেওয়া এক মহিলা জানান, অনুষ্ঠান শেষের পর সবাই যেতে শুরু করলে পদদলিত এই মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে। কর্মকর্তারা আরও জানিয়েছেন, ‘সৎসঙ্গ’-এর পরে, ভক্তরা গুরুর পা স্পর্শ করতে ছুটে আসেন, যার ফলে একটি ছোট এলাকায় একটি বড় ভিড় তৈরি হয়। উত্তরপ্রদেশের বিভিন্ন জেলা এবং পার্শ্ববর্তী রাজ্যগুলি থেকে ভক্তরা ‘সৎসঙ্গে’ এসেছিলেন। ঘটনা তদন্তে উচ্চপর্যায়ের কমিটি গঠন করা হয়েছে।

মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ জানিয়েছেন, প্যানেলের নেতৃত্বে রয়েছেন অ্যাডিশনাল ডিরেক্টর জেনারেল অফ পুলিশ, আগ্রা এবং আলিগড় কমিশনার। এছাড়া ইতিমধ্যে সৎসঙ্গে আয়োজকদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে। এফআইআর অনুসারে, ৮০ হাজার লোকের অনুমতি দেওয়া হয়েছিল কিন্তু সেখানে ২.৫ লাখেরও বেশি ভক্ত অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়েছিল।

এফআইআর থেকে জানা গিয়েছে, অনিয়ন্ত্রিত ভিড় অনুষ্ঠানস্থল থেকে বেরিয়ে আসার সময়, মাটিতে বসে থাকা ভক্তরা পিষ্ট হয়ে যায়। রাস্তার অপর পাশে জল এবং কাদা ভরা মাঠের ভিড়কে আয়োজক কমিটি লাঠি দিয়ে জোর করে থামিয়ে দেয়, যার কারণে ভিড়ের চাপ বাড়তে থাকে এবং মহিলা, শিশু এবং পুরুষরা পিষ্ট হতে থাকে।

এছাড়া আরও জানা গিয়েছে, টনায় উপস্থিত পুলিশ ও প্রশাসনিক আধিকারিকরা যথাসম্ভব চেষ্টা করেছিল এবং আহতদেরকে উপলব্ধ সংস্থান দিয়ে হাসপাতালে পাঠিয়েছিল। কিন্তু আয়োজকদের কোনও সহযোগিতা করা হয়নি। এই সব কারণেই আয়োজকদের বিরুদ্ধে নতুন ফৌজদারি কোড ভারতীয় ন্যায় সংহিতা (বিএনএস) এর ১০৫, ১১০, ১২৬(২), ২২৩ এবং ২৩৮ ধারার অধীনে অভিযোগ আনা হয়েছে।

আরও পড়ুন: গোয়েন্দার চাকরি ছেড়ে সোজা ধর্মপ্রচারক! যোগীরাজ্যের ‘ভোলে বাবা’-র আসল পরিচয় জানেন?

 

Previous articleBreakfast news: ব্রেকফাস্ট নিউজ
Next articleনাম নেই FIR-এ! রাত পেরলেও অধরা ‘ভোলেবাবা’, আশ্রম থেকে খালি হাতেই ফিরল পুলিশ