গোয়েন্দার চাকরি ছেড়ে সোজা ধর্মপ্রচারক! যোগীরাজ্যের ‘ভোলে বাবা’-র আসল পরিচয় জানেন?

২০২০ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর! যোগীরাজ্য হাথরাসের (Hathras) এক দলিত কিশোরীকে গণধর্ষণের ঘটনায় উত্তাল হয়েছিল দেশ। মঙ্গলবার দুপুরে সেই হাথরাসই ফের সংবাদ শিরোনামে উঠে এল। এবার এক ধর্মীয় অনুষ্ঠানে পদপিষ্ট (Stamped) হয়ে শতাধিক মানুষের মৃত্যু হয়েছে বলে খবর। আহত হয়েছেন আরও অনেকে। ইতিমধ্যে মৃতের সংখ্যা ১২১ ছাড়িয়ে গিয়েছে বলে খবর। মঙ্গলবার হাথরসের মুঘলাগড়ি গ্রামে একটি সৎসঙ্গের আয়োজন করা হয়েছিল। অনুষ্ঠান শেষ হতেই হুড়োহুড়ি শুরু হয়। তখনই ভিড়ের চাপে প্রাণ হারান অসংখ্য পুণ্যার্থী। ইতিমধ্যে ঘটনার নিন্দায় সরব তৃণমূল কংগ্রেস। তৃণমূল সাংসদ সুখেন্দু শেখর রায় যোগী সরকারের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে প্রশ্ন তুলে বলেন, কোথায় গেল ডবল ইঞ্জিন মোদি সরকার? এই ঘটনা সরকারের উপর বুলডোজ ছাড়া কিছুই নয়। ঘটনার তদন্ত চেয়ে দোষীদের কড়া শাস্তির পক্ষে সওয়াল তৃণমূল সাংসদের।

এই সৎসঙ্গের আয়োজন করেছিলেন নারায়ণ শঙ্কর হরি ওরফে শঙ্কর বিশ্ব হরি। যিনি আবার ভক্তদের কাছে ‘ভোলে বাবা’ নামে পরিচিত। সূত্রের খবর, ইটাহ জেলার পাটিয়ালি তেহশিলে বাহাদুর গ্রামের বাসিন্দা ভোলে বাবা। সেখানেই রয়েছে তাঁর মূল আশ্রম। যদিও শুরু থেকেই সাধু ছিলেন না সুরজ। একটা সময় পর্যন্ত তিনি ইন্টেলিজেন্স ব্যুরোতে চাকরি করতেন, অন্তত এমনটাই খবর সামনে এসেছে। ২৬ বছর আগে ধর্মীয় উপদেশ দেওয়ার জন্য তিনি নাকি চাকরি ছেড়ে দেন! তারপর থেকে বাড়ি ছেড়ে গ্রামে এক ঝুপড়ি তৈরি করে সেখানেই থাকতে শুরু করেন। তবে বেশ কয়েক বছর ধরে গ্রামে গ্রামে ঘুরে ঈশ্বরের নামে প্রচার শুরু করছেন সুরজ। বর্তমানে উত্তরপ্রদেশ, হরিয়ানা, রাজস্থান এবং দিল্লি সহ গোটা দেশ জুড়ে তাঁর শিষ্যের সংখ্যা কম নয়। আধুনিক যুগের ধর্মগুরুদের মতো ভোলে বাবাও সোশ্যাল মিডিয়া থেকে দূরে থাকেন। কোনও সোশ্যাল প্ল্যাটফর্মেই তাঁর কোনও অফিসিয়াল অ্যাকাউন্ট নেই। বেশিরভাগ সময়ই তাঁকে সাদা পোশাকে দেখা যায়। তবে সোশ্যাল মিডিয়ায় ভোলে বাবার কোনও অ্যাকাউন্ট নেই। তাঁর ভক্তদের দাবি, সমাজে বিভিন্ন স্তরে তাঁর অনুপ্রেরণা কাজ করে।

উত্তরপ্রদেশের আলিগড়ে প্রতি মঙ্গলবার ভোলে বাবার নামে ধর্মীয় অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। সেখানে জড়ো হন হাজার হাজার ভক্ত। সেখানে ভক্তদের খাবার এবং পানীয় জলের ব্যবস্থাও করা হয়। দায়িত্বে থাকেন স্বেচ্ছাসেবীরা। অতিমারির সময় জমায়েতে যখন নিষেধাজ্ঞা ছিল, তখনও ভোলে বাবার অনুষ্ঠানে জড়ো হতেন শয়ে শয়ে মানুষ। সেই নিয়ে বিতর্কও তৈরি হয়েছিল। তবে মঙ্গলবারের ঘটনা সবকিছুকেই ছাপিয়ে গেল। প্রত্যক্ষদর্শীদের একাংশের দাবি, সৎসঙ্গের জন্য যে প্যান্ডেল বাঁধা হয়েছিল, তা ব্যারিকেড ছিল। পাখার ব্যবস্থা করা হয়নি। প্যান্ডেল খোলামেলা থাকলেও আর্দ্রতা এবং গরমের কারণে সকলেই গরমে হাঁসফাঁস করছিলেন। ফলে সৎসঙ্গ শেষ হওয়ার পরেই মানুষ হুড়মুড়িয়ে মাঠের বাইরে বেরোনোর চেষ্টা করেন। কিন্তু আসা-যাওয়ার জন্য যে গেট তৈরি হয়েছিল, সেটিও অত্যন্ত সঙ্কীর্ণ হওয়ার কারণে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়। অনেকে মাটিতে পড়ে যান। বাকিরা তাঁদের উপর দিয়েই বাইরে বেরোনোর চেষ্টা করেন। তাতেই মারা গিয়েছেন শতাধিক ভক্ত।

সূত্রের খবর, ধর্ম প্রচারের টাকায় বিভিন্ন জায়গায় সৎসঙ্গের আয়োজন করেন ভোলে বাবা। প্রতি মঙ্গলবার উত্তরপ্রদেশের আলিগড়ে ভোলে বাবার অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। কয়েক লক্ষ ভক্ত সমাগমের সেইসব সৎসর্গে। মঙ্গলবার তেমনই এক অনুষ্ঠানে ঘটে যায় মর্মান্তিক ঘটনা। প্রচন্ড গরমের মধ্যেই এদিন চলছিল এই সৎসঙ্গ অনুষ্ঠান। এর মধ্যে অনুষ্ঠান শেষ হতেই হুড়মুড় করে বেরোতে যান ভক্তরা। আর তখনই পদপিষ্ট হয়ে প্রাণ হারান শতাধিক মানুষ।

Previous articleচুঁচুড়া স্টেশনে থামলই না বর্ধমান লোকাল! যাত্রীদের নামাতে ফের ফিরল আগের স্টেশনে
Next articleআগামী শনিবার পর্যন্ত ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস দক্ষিণবঙ্গে! উত্তরে পরিস্থিতি আরও খারাপ হওয়ার আশঙ্কা