নিরক্ষর মা-বাবার মেয়ে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী! অনুপ্রেরণার আরেক নাম সীমা কুমারী

যাঁর মা-বাবা নিরক্ষর, দিনমজুর চাষি পরিবারে অভাব অনটনের সংসার সেখান থেকে বড় হয়ে ওঠা মেয়েটা কি কখনও আকাশে ওড়ার স্বপ্ন দেখতে পারে?

মেয়ে হয়ে জন্মানো কি অপরাধ? গরিব পরিবারের কন্যা সন্তান হয়ে জন্মানো মানেই কি স্কুলের গণ্ডি পেরানোর আগেই বিয়ে করে সন্তানের মা হওয়া? মেট্রোপলিটন শহরে এই প্রশ্নগুলো হাস্যকর মনে হতে পারে, কিন্তু ঝাড়খণ্ডের ওরমানঝির দাহু (Dahu, Jharkhand)) গ্রামে এভাবেই মেয়েদের জীবন বদলে যাওয়া সিদ্ধান্ত নির্ধারিত হয়। যাঁর মা-বাবা নিরক্ষর, দিনমজুর চাষি পরিবারে অভাব অনটনের সংসার সেখান থেকে বড় হয়ে ওঠা মেয়েটা কি কখনও আকাশে ওড়ার স্বপ্ন দেখতে পারে? যে গ্রামে অশিক্ষার হার ৯৫ শতাংশ সেখানকার লড়াকু মেয়েটা আজ বিশ্বের অন্যতম সেরা বিশ্ববিদ্যালয় হার্ভার্ড (Harvard University) থেকে ইংলিশ এবং অর্থনীতি নিয়ে পড়াশনা করছে। নিজের যোগ্যতায় পৃথিবীর সেরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে স্কলারশিপ অর্জন করেছে। আপনি কি চেনেন সীমা কুমারীকে (Seema Kumari)? সমাজমাধ্যমে তাঁকে কুর্নিশ জানিয়েছেন স্বয়ং প্রিয়াঙ্কা চোপড়া জোনাস (Priyanka Chopra Jonas)।

জীবন মানে লড়াই করে গন্তব্যে পৌঁছে যাওয়া। আর মেয়ে হয়ে জন্মালে এক ধাপ পিছিয়ে থেকেই বোধহয় লড়াইটা করতে শিখিয়েছে সমাজ। শুভ বুদ্ধি সম্পন্ন মানুষের দীর্ঘদিনের প্রচেষ্টায় আজ সমাজে মহিলাদের অবস্থার পরিবর্তন হলেও দেশের প্রত্যন্ত কিছু গ্রামে প্রদীপের নিচে অন্ধকারটুকু মুছে যায়নি। দাহু হল সেই রকম এক গ্রামের নাম। সীমা ছোটবেলা থেকেই ফুটবল খেলতে ভালবাসতেন। যেখানে স্কুলের গণ্ডি পেরানোর আগেই মেয়েদের বিয়ে দিয়ে দেওয়া হয়, সেখানে পড়াশোনার পাশাপাশি গ্রামের ছেলেদের সঙ্গে ফুটবল খেলাটা যে চালিয়ে যাওয়া যাবে না এটা খুব সহজেই ধারণা করা যায়। কিন্তু সীমা নাছোড়বান্দা। সে জেদি, লড়াকু, আপোষহীন এক দুরন্ত মানসিকতার অধিকারী। তাই থামতে শেখেননি, যুদ্ধের ময়দানে পিছিয়ে আসা তাঁর ধাতে নেই। তাই ইচ্ছে শক্তির ডানায় ভর করে আকাশে ওড়ার স্বপ্নকে কখনোই বিসর্জন দেননি সীমা। তবে ২৫ বছর বয়সী সেই মেয়েটা ভারতের অত্যন্ত গরিব এক পরিবার থেকে কী করে আমেরিকার সেরা বিশ্ববিদ্যালয়ে পৌঁছে গেল সেটা জানলে অবাক হবেন।

কেমব্রিজের (Cambridge) হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার স্বপ্ন দেখেন অনেকে। এখানে সুযোগ পাওয়া মুখের কথা নয়। পরিসংখ্যান বলছে ১০০ জনের মধ্যে ৬ জন পড়তে পারে আর সেখানেই এই গরীব পরিবারের মেয়েটা স্কলারশিপ পেয়ে বিনামূল্যে পড়াশোনা করছেন! নিরক্ষরতা আর কুসংস্কারে ঘেরা গ্রামে বড় হয়ে উঠেছেন সীমা। পড়াশোনার পাশাপাশি চমৎকার ফুটবল খেলেন তিনি। সাহস করে ২০১২ সালে YUVA ফুটবল টিমের হয়ে ময়দানে নেমে সকলকে অবাক করে দেন। YUVA আসলে একটি আন্তর্জাতিক এনজিও। এই সংস্থা বিগত পনেরো বছর ধরে ঝাড়খণ্ডের দুঃস্থ মেয়েদের নিয়ে কাজ করছে। শিক্ষার পাশাপাশি স্বনির্ভরতার পাঠ পড়াচ্ছে তাঁদের। একটা সময় টাকার অভাবের সীমার পড়াশোনা বন্ধ করে দেওয়া হয়। সেই সময় এই মেয়ে নিজের গরজে YUVA-র স্কুলে ভর্তি হন এবং ফুটবল খেলে পড়াশোনার টাকা জোগাড় করেন। পরবর্তীতে সীমা ওই এনজিও থেকে ফুটবল কোচ হয় ট্রেনিং দিতে শুরু করেন বাকি মেয়েদের।

২০১৮ সালে ওই NGO-র সুবাদে ওয়াশিংটনে এবং ২০১৯ সালে ইংল্যান্ডের কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় দুটো গুরুত্বপূর্ণ এডুকেশনাল সেমিনারের জন্য সিলেক্ট হয়েছিলেন ।বিশেষ অ্যাকাডেমিক এক্সচেঞ্জ এর জন্য এক বছর আমেরিকায় থাকার সুযোগ পেয়েছিলেন। সীমার পরিবারে তিনিই প্রথম যে ইউনিভার্সিটিতে পড়াশোনা করছেন। ভারতের অশোকা, আমেরিকার মিডলমেরি কলেজ, ইংল্যান্ডের ত্রিনিটি কলেজে পড়ার সুযোগ পেয়েছিলেন সীমা। কিন্তু তিনি বেছে নেন হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়কে। এখানে স্কলারশিপ পেয়ে সম্পূর্ণ বিনামূল্যে ইংলিশ এবং অর্থনীতি নিয়ে পড়াশোনা চালিয়ে যাচ্ছেন। দাহু গ্রামের লড়াকু মেয়েটা স্বপ্ন দেখেন নিজের এলাকার মহিলাদের উন্নয়নের। শুধু বিয়ে করে ঘর সংসার করাটাই একটা মেয়ের কাজ বা তার জীবন হতে পারে না। তাই গ্রামের মহিলাদের বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে সীমার। একটি সংস্থাও গড়ে তুলতে চান তিনি। পড়াশোনা শিখে মেয়েরা আর্থিকভাবে সাবলম্বী হয়ে উঠুক এই লক্ষ্যে এগিয়ে চলেছেন ২৫ বছরের সীমা কুমারী।


Previous articleলক্ষাধিক টাকার মহাপ্রসাদ নষ্ট!বিস্ফোরক অভিযোগ পুরীর গুণ্ডিচা মন্দিরের সেবায়েতের
Next articleনাইট রাইডার্সে নতুন দায়িত্বে বাংলার ঝুলন , উচ্ছ্বসিত বাংলার প্রাক্তন বোলার