লোকসভা নির্বাচনে বাংলায় বিপুল জয় পেয়েছে তৃণমূল (TMC)। কিন্তু তার জন্য আত্মতুষ্টিতে ভুগতে রাজি নন দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় (Abhishek Banerjee)। ফলে যেখানে দলের ফল খারাপ হয়েছে, সেখানে কড়া পদক্ষেপ করবে দল। রবিবার একুশের শহিদ তর্পণের মঞ্চ থেকে স্পষ্ট বার্তা অভিষেকের। তাঁর কথায়, “পঞ্চায়েত, পুরসভার যেসব নেতানেত্রীদের জন্য লোকসভায় যেসব অঞ্চলে দলের ফল আশানুরূপ হয়নি, যাঁরা মানুষকে বোঝাতে ব্যর্থ হয়েছেন, আগামী তিনমাসের মধ্যে দল তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে।“ অভিষেক জানান, “একমাস ফলাফল নিয়ে পর্যালোচনা করেছি। আগামী তিন মাসের মধ্যে এর ফল আপনারা দেখতে পাবেন। সে যত বড় নেতার ছত্রছায়ায় আপনি থাকুন না কেন, দল ব্যবস্থা নেবেই।“তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদকের কথায়, “পঞ্চায়েতে আপনি টিকিট পাবেন। গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান-উপপ্রধান হবেন, ভোটে জিতবেন আর লোকসভা-বিধানসভা এলে আপনারা ভাববেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় এসে একটা করে সভা করবে, প্রার্থী জিতে যাবে, এ জিনিস চলবে না। তাঁর সাফ কথা, আপনার নিজের নির্বাচনের জন্য আপনি গায়ে-গতরে যে পরিশ্রম করেন, প্রত্যেকটি নির্বাচনে তাই করতে হবে। কারণ, এই লড়াই শুধু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee) বা তৃণমূল সৈনিকের নয়, এই লড়াই বাংলার ১০ কোটি মানুষের সম্মানের লড়াই।“

এরপরেই অভিষেকের (Abhishek Banerjee) কড়া বার্তা, “যাঁরা ভাবছেন আমরা আমাদের নির্বাচন করব আর পার্টির নির্বাচনে পার্টি তার মতো বুঝে নেবে, এটা আর হবে না।“ তিনি জানান, “গত এক-দেড় মাস আমাকে কোনও রাজনৈতিক কর্মসূচিতে আপনারা দেখেননি। কারণ আমি পর্যালোচনার কাজে ব্যস্ত ছিলাম। আগামী তিন মাসের মধ্যে এর ফল দেখবেন। আমি এক কথার ছেলে। কথা দিয়ে কথা রাখি।“

এদিন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদকের মনে করিয়ে দেন, “২০২১ সালের ২১ জুলাইয়ে বলেছিলেন, যারা ২০২১-এর নির্বাচনের আগে তৃণমূলে নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে, দমবন্ধ হয়ে আসছে বলে বিজেপিতে গিয়েছিল আবার যখন ফিরে আসতে চেয়েছে তাদের দলে নিয়েছি। কথা দিয়েছিলাম যারা দলে ঢুকছে তাদের কাউকে তৃণমূলের একজন সৈনিকের উপরও ছড়ি ঘোরাতে দেব না। তিন বছর পার হয়ে গিয়েছে। এখনও তারা পারেনি।“ লোকসভায় দলের বিপুল জয়ের জন্য বাংলার মানুষকে কুর্নিশ জানান তিনি। তাঁকে ৭ লক্ষ ১০ হাজার ভোটে জেতানোর ডায়মন্ড হারবারের মানুষকেও ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন। এদিন ফের ১০০ দিনের কাজ ও আবাসের বকেয়া নিয়ে বিজেপির বিরুদ্ধে তোপ দেগেছেন অভিষেক।

তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক বলেন, আমি মনে করি তৃণমূলের কর্মীরাই তৃণমূলের শক্তি। যাঁরা নতুন তৃণমূলে এসেছেন তাঁদেরকে তৃণমূলের সংগ্রাম, নেত্রীর লড়াই, একুশে জুলাইয়ের ইতিহাস সম্পর্কে জানতে হবে। এবং যাঁরা পুরনো আছেন তাঁদেরকে নতুনদের সঙ্গে নিয়ে আগামী দিন দলকে আরও শক্তিশালী করার জন্য মাঠে নেমে লড়াই করতে হবে। সামঞ্জস্য রেখে করতে হবে। পুরনোদের অভিজ্ঞতা আর নতুনদের উৎসাহ-উদ্দীপনা দুটোই তৃণমূলের একই বৃন্তে দুটি কুসুম। একই বৃন্তে দুটি কুসুম হিন্দু-মুসলমান, একটি তার নয়নমণি আরেকটি তার প্রাণ। আমাদের নেত্রী তৃণমূল তৈরি করার সময় বলেছিলেন, আমাদের সংযত থাকতে হবে। অযথা কোনওরকম বাক-বিতণ্ডায় জড়াবেন না। বিজেপিকে ভোট দিয়ে মানুষ জেতায়নি। মানুষ আপনাদেরকে ভোট দিয়ে তৃণমূলকে জিতিয়েছে। তার কারণ আপনার পাড়ায়, আপনার গ্রামে আপনার এলাকায় মুখের ওপর সেই গরিব মানুষ আপনাকে বিশ্বাস করেছে, বিজেপিকে বিশ্বাস করেনি। আমাদের সংযত থাকতে হবে। সন্দেশখালিতে যেভাবে এই চিত্রনাট্যটা সাজিয়ে বাংলাকে ভারতবর্ষের মানুষের কাছে কলুষিত করতে চেয়েছিল।

এদিন প্রথমেই গিয়ে মঞ্চের কাছে থাকা শহিদ বেদিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান অভিষেক। মাটিতে মাথা ঠেকিয়ে প্রণাম করেন।
