কয়েকদিন আগেই রাজ্যপালের পরামর্শ উপেক্ষা করেই দুই তৃণমূল বিধায়ক সায়ন্তিকা বন্দ্যোপাধ্যায় ও রেয়াত হোসেন সরকারকে শপথ বাক্য পাঠ করিয়েছিলেন বিধানসভার অধ্যক্ষ। এর পর মঙ্গলবারই বিধানসভায় শপথ নিলেন চার নতুন বিধায়ক। রাজভবনের আপত্তি সত্ত্বেও চারজন নতুন বিধায়ককেই শপথ বাক্য পাঠ করালেন অধ্যক্ষ বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়। শপথ নিলেন মানিকতলার বিধায়ক সুপ্তি পাণ্ডে, রানাঘাট দক্ষিণের বিধায়ক মুকুটমণি অধিকারী, রায়গঞ্জের বিধায়ক কৃষ্ণ কল্যাণী এবং বাগদার বিধায়ক মধুপর্ণা ঠাকুর।মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপস্থিতিতে মঙ্গলবার রাজ্য বিধানসভায় শপথ নিলেন চার বিধায়ক। শপথগ্রহণের সময় অনুপস্থিত থাকল বিজেপির পরিষদীয় দল। তাদের দাবি, সংবিধান মেনে শপথ হচ্ছে না। যদিও মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়ে দিয়েছেন, সংবিধান মেনেই শপথগ্রহণ হচ্ছে। এটা ভারত এবং বাংলার ইতিহাসে নজির হয়ে রইল। সংবিধানে শপথগ্রহণ নিয়ে কী রয়েছে, তা বিধানসভায় পড়েও শোনান মুখ্যমন্ত্রী মমতা।
মঙ্গলবার দুপুরে প্রথমে শপথ নেন রায়গঞ্জের নতুন নির্বাচিত বিধায়ক কৃষ্ণ কল্যাণী। এর পর হরিচাঁদ এবং গুরুচাঁদ ঠাকুরের নামে শপথ নেন রানাঘাট দক্ষিণের বিধায়ক মুকুটমণি। হরিচাঁদ এবং গুরুচাঁদের নামে শপথ নেন বাগদার বিধায়ক মধুপর্ণাও। শপথের পর মুখ্যমন্ত্রীকে পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করেন তিনি। শেষে শপথ নেন মানিকতলার বিধায়ক সুপ্তি পান্ডে। আগের দুজনের মতো এই চার জনের শপথগ্রহণ নিয়েও রাজভবনের সঙ্গে টানাপড়েন শুরু হয় বিধানসভার। তার মাঝেই সোমবার, বিধানসভায় অধিবেশন শুরুর দিন স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়ে দিয়েছিলেন, মঙ্গলবারই রীতি মেনে শপথ নেবেন চার বিধায়ক।
জানা গিয়েছে, সোমবারও রাজভবন থেকে কোনও ইতিবাচক জবাব আসেনি। তারপরই এই ব্যবস্থা নেওয়া হয়। বিরোধী বিজেপি দাবি করে, সংবিধান মেনে শপথগ্রহণ হচ্ছে না। সেই দাবি উড়িয়ে দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী সাফ জানান, পাঁচটি ধারা মেনেই স্পিকার শপথগ্রহণ করিয়েছেন বিধায়কদের। তাঁর কথায়, পাঁচ ধারাকে হাতিয়ার করে স্পিকার শপথগ্রহণ করিয়েছেন। আমি সাত বারের সাংসদ। তিন বারের বিধায়ক। আমাদের সংবিধান যেমন রয়েছে, কনভেনশনও আছে। গণতন্ত্রকে বাঁচাতে এই দুয়ের মেলবন্ধনের নজির ভারতে রয়েছে। এর পর জনাদেশের কথাও মনে করিয়ে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি জানান, লোকসভা ভোটে এনডিএ ৪৬ শতাংশ ভোট। ইন্ডিয়া ৫১ শতাংশ ভোট পেয়েছে। মানুষের জনাদেশ স্পষ্ট। ভোটদাতাদের ধন্যবাদও দিয়েছেন তিনি।
স্পিকার বলেন, শপথ যে হবে, তা আগেই জানানো হয়েছিল। রেয়াত হোসেন সরকার এবং সায়ন্তিকা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিষয়ে চিঠি এসেছিল যে তাঁরা নাকি অংশগ্রহণ করতে পারবেন না। কিন্তু আইন অনুযায়ী তারা অধিবেশনে যোগ দিতে পারবেন। চার বিধায়কের শপথ বিধানসভার রুল অনুযায়ী করা হবে। এই বিষয়ে যথাযথ রুলিং আছে। এই চার বিধায়কের শপথ হল ন্যাচরাল জাস্টিস, তাঁদের এলাকার মানুষের জন্য।
এদিকে সায়ন্তিকা এবং রেয়াতকে রাজ্যাপাল সিভি আনন্দ বোসের চিঠি পাঠানোর প্রসঙ্গও উঠে আসে মুখ্যমন্ত্রীর ভাষণে। দুই বিধায়ককে চিঠি পাঠিয়ে রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস জানিয়েছেন তাঁদের শপথ অসংবিধানিক ভাবে হয়েছে। এ ক্ষেত্রে দুই বিধায়কের ৫০০ টাকা জরিমানা হতে পারে বলেও জানানো হয়েছে চিঠিতে। এই প্রসঙ্গে মমতা নাম না করে রাজ্যপালের উদ্দেশে বলেন, লাইনে থেকে কথা বলুন। আপনি কোনও রাজনৈতিক দলের সদস্য নন। আপনার বিরুদ্ধে কে জরিমানা দেবেন? ৫০০ টাকার ফাইন কেন চাই? টাকার খুব দরকার? নাকি জলপানের জন্য টাকা লাগবে? আমরা জলপানের ব্যবস্থা করে দিতে পারি।
এদিন মুখ্যমন্ত্রীর অভিযোগ, রাজ্যপালের কারণেই নতুন বিধায়কদের এক মাস সময় নষ্ট হয়েছে। তাঁর কথায়, দুই বিধায়ক রাজ্যপালকে চিঠি দিয়ে বিধানসভায় শপথ নিতে চেয়েছিলেন। স্পিকার রাজ্যপালকে ২৭ জুন আবার চিঠি দিয়ে আবেদন জানান। এক মাস একদিন পর শপথ নিয়েছেন চার জন। তাঁদের একটা মাস নষ্ট হয়ে গেল। রাজ্যপাল ডেপুটি স্পিকারকে দায়িত্ব দিয়েছেন। কিন্তু ডেপুটি স্পিকার অক্ষমতা জানিয়ে স্পিকারকে শপথগ্রহণ করাতে বলেছেন। তাতে ভুল কোথায়? স্পিকারের উপস্থিতি ডেপুটি স্পিকার শপথগ্রহণ করাতে চাননি। সাধারণত রাজ্যপাল স্পিকারকে শপথের দায়িত্ব দেন। সংবিধানে শপথগ্রহণ নিয়ে কী রয়েছে, তা বিধানসভায় পড়েও শোনান মমতা। তাঁর কথায়, আইন মেনেই চার বিধায়ক শপথ নিয়েছেন।