মোদি সরকারের ভাঁওতার বাজেটের সমালোচনায় লোকসভায় অভিষেকই যেন ‘বিরোধী দলনেতা’!

মঙ্গলবারের কেন্দ্রীয় বাজেটের সমালোচনায় বুধবার সংসদে হুংকার দিলেন তৃণমূলের (TMC) সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক তথা সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় (Abhishek Banerjee)। শুধু বাংলার বিষয় নিয়েই নয়, সারা দেশের উপর বাজেটের সামগ্রিক প্রভাব নিয়েই এদিন মোদি সরকারের বিরোধিতায় সরব হন তৃণমূল সাংসদ। রাজনৈতিক মহলের মতে, লোকসভায় অভিষেকই যেন বিরোধী দলনেতা।এদিন, লোকসভার অধিবেশনে দাঁড়িয়ে বাজেট নিয়ে তীব্র আক্রমণাত্মক ভঙ্গিতে মোদি সরকারের বঞ্চনা আর প্রতারণার জবাব দেন অভিষেক। একেবারে ইস্যু ধরে ধরে মোদি সরকারের জনবিরোধী বাজেটের সমালোচনা করেন অভিষেক। দেশবাসীর সঙ্গে প্রতারণা করা থেকে প্রতিশ্রুতিভঙ্গ- ‘BUDGET’ বর্ণের ব্যাখ্যা করে লোকসভায় প্রতিবাদের ঝড় তোলেন তৃণমূলের (TMC) সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক। ৫৩ মিনিট ৪০ সেকেন্ডের বক্তৃতা কাঁপিয়ে দেয় নড়বড়ে এনডিএ সরকারকেও। এদিন সংসদে অভিষেকের বক্তৃতা শুনে মনে হচ্ছিল সংসদে বিরোধী পক্ষের নেতা পরপর যুক্তি তুলে ধরে চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছেন নড়বড়ে মোদি সরকারের অপদার্থতা। একইসঙ্গে অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন এবং প্রধানমন্ত্রীর মিথ্যাচারকে পয়েন্ট তুলে সবার সামনে প্রকাশ করে দেন অভিষেক। এককথায় এই বাজেটকে বললেন দিশাহীন। বাজেটের ইংরেজি অক্ষরের প্রতিটি শব্দ ধরে ব্যাখ্যা করলেন আসলে বাজেটকে মোদি সরকার কোনও ছেলেখেলার পর্যায়ে নিয়ে গিয়েছেন। কুর্সি বাঁচানোর তাগিদে যেভাবে দুই শরিককে নির্লজ্জভাবে তোষামোদ করা হয়েছে বাজেটে তারও কড়া সমালোচনা করেছেন অভিষেক।

সংসদেও ডবল ইঞ্জিনের সরকারের প্রসঙ্গ তোলেন অভিযোগ। বলেন, উত্তরপ্রদেশে বারবার সংখ্যালঘুদের টার্গেট করা হয়। উসকানিমূলক মন্তব্য করে সংখ্যালঘুদের উপর অত্যাচার চলে উত্তরপ্রদেশ ও উত্তরাখণ্ডের মতো ডবল ইঞ্জিন রাজ্যগুলিতে। বাংলার মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ধর্ম যার যার, উৎসব সবার। বিজেপি এটাকে সমর্থন করে না। গোটা দেশের এটা জানা উচিত, লোকসভা হোক কিংবা রাজ্যসভা, এমনকী কোনও রাজ্যের বিধানসভাতেও বিজেপির কাছে একজনও মুসলিম সাংসদ কিংবা বিধায়ক নেই। পতাকার রঙে বৈচিত্র্য থাকলেই হয় না, সংসদে কতজন ভিন্ন ধর্মের সদস্য আছে সেটাই মূল বৈচিত্র্য।

কলকাতায় উড়ালপুল ভেঙে পড়ার পর প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, ‘অ্যাক্ট অফ গড নয়, অ্যাক্ট অফ ফ্রড’। প্রধানমন্ত্রীর সেই কথার জবাব দিয়ে লোকসভায় এক এক করে পরিসংখ্যান তুলে ধরেন অভিষেক (Abhishek Banerjee)। মোরবিতে ১৪১ জন মারা গেলেন, গুজরাত-দিল্লি-জবলপুরে বিমানবন্দরের ছাদ ভেঙে গেল, প্রথম বর্ষাতেই রামমন্দিরের ছাদ ফুটো হয়ে জল পড়তে লাগল, উত্তরকাশীতে ১৭ দিন শ্রমিকরা ভেঙে পড়া সুড়ঙ্গে আটকে রইলেন, বালেশ্বরে ট্রেন দুর্ঘটনায় ৩০০ জন মারা গেলেন, কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেস দুর্ঘটনায় ন’জন মারা গেলেন, এগুলো কী?

নোটবন্দি ও কালো টাকা নিয়েও কেন্দ্রকে নিশানা করেন অভিষেক। বলেন, ২০১৬ সালে নোটবন্দি করে ৫০০-১০০ টাকার নোট বাতিল করা হয়। কালো টাকা মুছে যাওয়ার পরিবর্তে জালনোট বেড়েছে। ২০২২ সালে ৫০০ টাকার জালনোট ছিল ২০০ শতাংশের বেশি, ২০০০ টাকার নোট ৫৪ শতাংশ। রোদে লাইনে দাঁড়িয়ে মারা গেলেন ১৩০ জন।

যেভাবে এদিন অভিষেক সংসদে দাঁড়িয়ে সারাদেশের আওয়াজ তুলে ধরেছেন সেটা দেখে রাজনৈতিক মহলের মত, তাঁর ভূমিকা বিরোধী দলনেতার মতই সরব, প্রতিবাদী।






Previous articleসংসদে প্রথম দিনেই অভিজিতের শব্দ চয়ন নিয়ে তোলপাড় লোকসভা
Next articleনিট কেলেঙ্কারি কেন্দ্রীয় সরকারের ব্যর্থতার প্রমাণ, কটাক্ষ অভিষেকের