নীতি আয়োগের বৈঠকে বারবার বেল বাজিয়ে বাংলার মুখ্যমন্ত্রীকে ৫ মিনিটের বেশি বলতে দেওয়া হয়নি। ওই বৈঠকে তিনি একাই বিরোধীদলের প্রতিনিধি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। এটা ইচ্ছাকৃতভাবে বিরোধীদের অপমান। শনিবার, নীতি আয়োগের বৈঠক বয়কট করে কলকাতা ফিরে গর্জে উঠলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee)। কলকাতা বিমান বন্দরে তৃণমূলের (TMC) সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে (Abhishek Banerjee) পাশে নিয়ে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে মমতা জানান, তিনি প্রথমে বিরোধীদের প্রতি বাংলার বঞ্চনা ও পরে বাংলার বকেয়া নিয়ে সরব হন। কিন্তু বারবার বেল বাজিয়ে তাঁকে থামানোর চেষ্টা করেন রাজনাথ সিং-অভিযোগ বাংলার মুখ্যমন্ত্রীর। শেষে ৫মিনিটের মধ্যেই তাঁর মাইক বন্ধ করে দেওয়া হয়।
এদিন নীতি আয়োগের বৈঠকে বাংলার প্রতি কেন্দ্রের ধারাবাহিক বঞ্চনা নিয়ে কথা বলা শুরু করেছিলেন। পাঁচ মিনিটের মধ্যে মাইক বন্ধ করে দেওয়া হয়। প্রতিবাদে মিটিং বয়কট করেন ক্ষুব্ধ মমতা (Mamata Banerjee)। বৈঠক থেকে বেরিয়ে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে মুখ্যমন্ত্রী জানান, এটা শুধু বাংলার অপমান না, বিজেপি বিরোধী সব আঞ্চলিক দলের অপমান। বিরোধীদলের মুখ্যমন্ত্রীর মধ্যে একমাত্র উপস্থিত ছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বাংলার প্রতি কেন্দ্রের ধারাবাহিক বঞ্চনা, বাজেটে রাজ্যকে বঞ্চিত করা-এই সব নিয়ে আওয়াজ তুলতেই বৈঠকে গিয়েছিলেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী। কিন্তু অভিযোগ তিনি এই বিষয় নিয়ে বলতে শুরু করার পরেই পাঁচ মিনিটের মধ্যেই মমতার মাইক বন্ধ করা হয়। প্রতিবাদে বৈঠক বয়কট করে তিনি বৈঠক ছেড়ে বেরিয়ে আসেন। বাইরে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে ক্ষোভে ফেটে পড়েন মমতা। বলেন, “বিরোধীদের মধ্যে একমাত্র আমিই বৈঠকে হাজির ছিলাম। কিন্তু বলতে দেওয়া হল না। আমি আরও কিছু বলতে চেয়েছিলাম। কিন্তু আমাকে পাঁচ মিনিটও বলতে দেওয়া হয়নি। মাইক বন্ধ করে আমাকে অপমান করা হয়েছে।“ মমতার কথায়, এটা ইচ্ছাকৃতভাবে বিরোধীদের অপমান করা!
কলকাতা বিমানবন্দরেও মমতা জানান, ছত্তিশগড়, অসম, গোয়ার মুখ্যমন্ত্রীদে কথা বলার সময় কোন বাধা দেওয়া হয়নি। তাঁর কথায়, “আমার আগে চন্দ্রবাবু নায়ডু বলেছে ২০ মিনিট। অসম, অরুণাচল, ছত্তিশগড়, গোয়ার মুখ্যমন্ত্রীরা কেউ ১৫ মিনিট বলেছে, কেউ ১৬ মিনিট বলেছে, কেউ ২০ মিনিট বলছে। আর আমারটা যেই পাঁচ মিনিটে পড়তে যাবে সঙ্গে সঙ্গে বেল টিপে টিপে ‘স্টপ’ স্টপ স্টপ’ বলে দেওয়া হল।” সেখানে একমাত্র বিরোধীদলের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে তাঁকে ৩০মিনিট বলতে দেওয়া উচিত ছিল- মত মমতার। তিনি জানান, বাজেটে বাংলাকে বঞ্চনা করা হয়েছে। অবিজেপি রাজ্যগুলির জন্য বরাদ্দ হয়নি। তিনি সবার হয়ে কথা বলতেই ওখানে গিয়েছিলেন।
নির্মলার সাফাই সম্পর্কে বাংলার মুখ্যমন্ত্রী সাফ বলে দেন, “এটা পুরোটাই শাক দিয়ে মাছ ঢাকার চেষ্টা। নিজেদের মুখ বাঁচাতে এখন শাক দিয়ে মাছ ঢাকতে চাইছে। আমি একজন সিনিয়র পলিটিসিয়ান। এতবারের জনপ্রতিনিধি তাঁকে অসম্মান করা হয়েছে। পাঁচ মিনিট হতে হতেই বার বার ঘণ্টা বাজিয়ে থামানো হয়েছে। সেটার মানেটা কী!” মমতার কথায়, ”বিরোধী দলগুলির একমাত্র প্রতিনিধি হিসাবে আমি গিয়েছিলাম। অথচ, আমার সঙ্গেই এই আচরণ করা হল। এটা সব বিরোধীদের অপমান। এখন মুখ বাঁচানোর চেষ্টা করছে। বাংলার বঞ্চনা মানছি না। বৈঠক বয়কট করে ঠিক করেছি।”
এদিনের নীতি আয়োগের বৈঠকে প্ল্যানিং কমিশন ফিরিয়ে আনার দাবি জানান মমতা। তাঁর কথায়, নীতি আয়োগের সেই অর্থে নীতি লাগু করার আর্থিক ক্ষমতা নেই, যেটা যোজনা কমিশনের ছিল। ফলে নীতিমালা তৈরি হলেও তা কী করে লাগু করবে নীতি আয়োগ- প্রশ্ন মমতার।
