২০২১-এর বিধানসভা নির্বাচনে বাংলার ভরাডুবির পর থেকেই MGNREGS অর্থাৎ ১০০ দিনের কাজে টাকা দেয়নি মোদি সরকার। বারবার এই অভিযোগ তুল সরব হয়েছেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। লোকসভার বাজেট বক্তৃতাতেও এই নিয়ে শ্বেতপত্র প্রকাশের দাবিও জানান তিনি। এবার কেন্দ্রীয় সরকার মেনে নিল, ২০২১-এর নির্বাচনের ফল প্রকাশের পর থেকে বাংলাকে এই খাতে কোনও টাকা দেওয়া হয়নি। এই বিষয়ে তৃণমূল সাংসদ সৌগত রায়, মালা রায়, খলিলুর রহমন, দীপক অধিকারী (দেব) লিখিত প্রশ্নের জবাবে তথ্য দিয়ে মোদি সরকার স্বীকার করল, এই প্রকল্পে বাংলার বকেয়া লক্ষ কোটি টাকা।

বাংলায় একের পর এক নির্বাচনে ভরাডুবি গেরুয়া শিবিরের। আর প্রতিহিংসামূলক রাজনীতির কারণে বাংলার মানুষের প্রাপ্য আটকে রেখেছে কেন্দ্র। এই নিয়ে বারবার সরব হয়েছেন অভিষেক। সংসদের ভাষণেও এই নিয়ে শ্বেতপত্র প্রকাশের দাবি তোলেন তিনি। এবার তৃণমূল সাংসদরা এই নিয়ে লিখিত প্রশ্ন তোলেন লোকসভায়। তার জবাবে গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রকের প্রতিমন্ত্রী কমলেশ পাসওয়ান তথ্য দিয়ে স্বীকার করে নেন, একমাত্র বাংলাকে MGNREGS-এ কোনও অর্থ বরাদ্দ করা হয়নি।
সাংসদদের প্রশ্নের উত্তরে কেন্দ্র যে তথ্য দিয়েছে তাতে দেখা যাচ্ছে ২০২১ সালে একশো দিনের প্রকল্পে ১০.৯০ লক্ষ টাকার কিছু বেশি বরাদ্দ করেছিল বাংলার জন্য। ওই বছরই মার্চ মাসে রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। মোদি সরকার বাংলার মাটিতে প্রভাব ফেলতে না পেরে তারপর থেকেই টাকা বন্ধ করে দেয় বাংলার বরাদ্দ। কেন্দ্র সরকারের হিসাব বলছে ২০২১-২২ সালে বাংলার বকেয়া টাকার পরিমাণ ৪,১৩৭ কোটি টাকা। এই খাতে ২০২২-২৩ সালে বাংলার বকেয়া ১,৪১৬ কোটি টাকা। তিনটি আর্থিক বর্ষ মিলিয়ে বাংলার শ্রমিকদের বেতন হিসাবে বকেয়া টাকা পরিমাণ ২ হাজার ৭৬৫ কোটি টাকা। সেই সঙ্গে কাজের জন্য কাঁচামাল কেনার জন্য় বরাদ্দ টাকাও বকেয়া। তার পরিমাণ ২ হাজার ৭৮৮ কোটি টাকা।

কেন্দ্র সরকার নিজের রিপোর্টেই দাবি করেছে বাংলা থেকে এই প্রকল্পে বিভিন্ন ধরনের অভিযোগের সংখ্যা ৩৪৫৬টি। যেখানে বিজেপি শাসিত মধ্যপ্রদেশ ও উত্তরপ্রদেশে অভিযোগের সংখ্যা যথাক্রমে ৯ হাজার ও ১৭ হাজারের বেশি। সেই রাজ্যগুলিতে কোনওভাবে এক বছরও এই প্রকল্পে টাকা বরাদ্দ বন্ধ করেনি কেন্দ্রের বিজেপি সরকার। বাংলায় বারবার কেন্দ্রের তথ্য যাচাই করার প্রতিনিধিদল এসেছে। গোটা বাংলা জুড়ে তারা তদন্তও করেছে। এ পর্যন্ত কেন্দ্র বাংলা থেকেই এই অভিযোগের ভিত্তিতে ২৬ লক্ষ ৯১ হাজারেরও বেশি টাকা সংগ্রহ করার কথা ছিল। কেন্দ্রের রিপোর্ট বলছে পুরো টাকাটাই তাঁরা উদ্ধার করে ফেলেছেন। তারপরেও বাংলার জন্য বরাদ্দ তালিকা শূন্য থেকে গিয়েছে।

কেন্দ্রের বরাদ্দ ও বকেয়ার তালিকায় বারবার বাংলাকে বিশেষভাবে স্টার চিহ্ন দিয়ে রাখা হয়েছে। বারবারই দাবি করা হয়েছে বাংলা একটি বিশেষ ক্ষেত্র। যদিও সেই রিপোর্টই বলছে বাংলায় যদি কোনও অনিয়ম হয়েও থাকে তার কেন্দ্রীয় হিসাব অনুযায়ীই সব টাকা উদ্ধারও করে নিয়েছে কেন্দ্র। তারপরেও বাংলার সাংসদদের প্রশ্নের উত্তরে কেন্দ্র নিজেই স্বীকার করছে ২০২১ সালে থেকে মহাত্মা গান্ধী ন্যাশানাল রুরাল এমপ্লয়মেন্ট গ্যারান্টি স্কিমে বাংলার বরাদ্দ শুধুই শূন্য।
