দুঃস্বপ্নের রেলসফর, মুম্বইগামী ট্রেন দুর্ঘটনায় স্টেশন মাস্টারের উপরেই দায় চাপাচ্ছে রেল!

করমণ্ডল দুর্ঘটনা হোক বা কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেস, কাঞ্চনকন্যা হোক বা হাওড়া মুম্বইগামী মেল ট্রেন – দুর্ঘটনার তদন্ত শুরু হতে না হতেই অন্যের ঘাড়ে দায় চাপানোর খেলা শুরু ভারতীয় রেলের (Indian Railway)। নিজেদের গাফিলতি, উদাসীনতা ঢাকতে কখনও ট্রেন চালক আবার কখনও স্টেশন মাস্টারকে কাঠগড়ায় দাঁড় করায় কেন্দ্রের অধীনস্থ রেল। ঝাড়খণ্ডের ট্রেন দুর্ঘটনায়ও সেই একই ছবি। মালগাড়ির বেলাইন হওয়ার খবর স্টেশন মাস্টার জানা সত্ত্বেও কেন তিনি মুম্বই মেলকে (12810 Howrah-CSMT Mail) কিছু জানালেন না তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।

দুর্ঘটনার সময় প্রায় ১১৫-১২০ কিলোমিটার বেগে ছুটছিল হাওড়া-সিএসএমটি এক্সপ্রেসের (12810 Howrah-CSMT Mail)। সেক্ষেত্রে কেন গতিবেগ কমানোর সংকেত দেওয়া হয়নি তা নিয়েও আলোচনা শুরু হয়েছে। চারিদিকে তখনও ভোরের আলো ফোটেনি। কেউ মোবাইলে সময় দেখছেন কেউ আবার বাথরুমে যাবেন বলে প্রস্তুতি নিচ্ছেন। আচমকা তীব্র ঝাঁকুনি, বিকট শব্দের পরই হেরে গেল কম্পার্টমেন্ট। যাত্রীরা কিছু বুঝে ওঠার আগেই আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ল। এই ট্রেনে বড় সংখ্যায় ক্যানসার আক্রান্ত রোগী এবং তাঁদের পরিবার-পরিজনেরা যাতায়াত করেন। মারণ রোগ থেকে বাঁচার জন্য যে মরিয়া চেষ্টা, ট্রেন সফরের মধ্যেই কি সব শেষ হয়ে যাবে? দুর্ঘটনার সঙ্গে সঙ্গেই ট্রেনের মধ্যে হুড়োহুড়ি পড়ে যায়। কান্নাকাটি শুরু করেন অনেক যাত্রী। ভয় ট্রেন থেকে লাফিয়ে নেমে পড়েন যাত্রীরা। আস্তে আস্তে ভোরের আলো ফুটতে শুরু করেছে। চারপাশে শুধুই হাহাকার, ছুটোছুটি করছেন। থিকথিক করছে পুলিশ, রেলকর্মীদের ভিড়। যাত্রীদের বর্ণনার সঙ্গে সহমত ট্রেন ম্যানেজার মহাম্মদ রেহান। কিন্তু কী করেই দুর্ঘটনা? রেলের সাফাই, স্টেশন মাস্টার তাঁর দায়িত্ব পালন করেননি। মালগাড়ি লাইনচ্যুত হওয়ার খবর সঠিক সময়ে যদি মুম্বই মেলের কাছে পৌঁছে যেত তাহলে এমন কাণ্ড ঘটতো না। কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে রেলের সুরক্ষা, যাত্রী নিরাপত্তা, ‘কবচ’ – এর কার্যকরী প্রয়োগ নিয়ে কোনও কথা বলা হচ্ছে না। এক একটা দুর্ঘটনায় এর ওর ঘাড়ে দোষ চাপিয়ে তদন্ত কমিটির রিপোর্ট জমা পড়ছে। এবারেও সেই একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি। মুম্বই মেলের ১৮টি আমরা লাইনচ্যুত হয়েছে। এখনো পর্যন্ত দুজনের মৃত্যু সংবাদ মিললেও এই সংখ্যাটা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। স্থানীয় সূত্রে জানা যাচ্ছে রেল ট্র্যাকে আগেই মালগাড়ির বগি ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়েছিল। এখানেও প্রশ্ন, তাহলে যে রেলের তরফে বারবার কুইক রেসপন্স টিমের কথা বলা হয়, তাদের ভূমিকা কোথায়? জানা যাচ্ছে মাল গাড়ির লাইনচ্যুত হওয়া এবং মুম্বই মেলের ওই দুর্ঘটনাস্থলে পৌঁছানোর মাঝে ৫ মিনিট ১৯ সেকেন্ডের সময় ছিল। অথচ এই সময়ের মধ্যে কেন কোন পদক্ষেপ করা হলো না? যারা সিগনাল সিস্টেম সামলানোর দায়িত্বে আছেন তারাই বা কেন কোন সংকেত দিলেন না? মঙ্গলবারের দুর্ঘটনায় ফের একগুচ্ছ প্রশ্ন উঁকি দিচ্ছে।

দুর্ঘটনা গ্রস্থ ট্রেনে বাংলার অনেক যাত্রী থাকায় ইতিমধ্যেই প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করেছে রাজ্য সরকার। সকলেই বাংলা থেকে রাজ্য পুলিশের বিশেষ টিম ঝাড়খণ্ডের দিকে রওনা দিয়েছে। মুখ্যসচিব ঝাড়খণ্ডের আধিকারিকদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন। খোলা হয়েছে হেল্প ডেস্ক।দুর্ঘটনার খবর মিলতেই হাওড়া-সিএসএমটি এক্সপ্রেসের যাত্রীদের আত্মীয়েরা হাওড়া স্টেশনে এসে জড়ো হয়েছেন। দুর্ঘটনার জেরে কাঁটাভাজি ইস্পাত এক্সপ্রেস এবং হাওড়া বারবিল জনশতাব্দী এক্সপ্রেস আজকের মত বাতিল করা হয়েছে। বাতিল থাকছে ইস্পাত এক্সপ্রেস, টাটানগর-ইটায়ারি এক্সপ্রেস, এলএলটি এক্সপ্রেস, হাওড়া-যশবন্তপুর স্পেশ্যাল, আপ-ডাউন টাটানগর-এর্নাকুলাম, সিএসএমটি মুম্বই-হাওড়া মেল। ডাউন গীতাঞ্জলি এক্সপ্রেস, আমদাবাদ এক্সপ্রেস-সহ একাধিক দূরপাল্লার ট্রেনের যাত্রাপথ ঘুরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। নির্ধারিত সময় থেকে প্রায় সাত আট ঘন্টা দেরিতে হাওড়া ঢুকেছে দূরপাল্লার ট্রেন। ভোগান্তি যাত্রীদের।


Previous articleশীর্ষ আদালতে এবার এসএসসি অনুতীর্ণরা! ২৬ হাজার চাকরি মামলার সঙ্গেই শুনানি
Next articleবিদেশিনী স্ত্রীকে জঙ্গলে গাছে বাঁধলেন স্বামী! পরিবারের সন্ধানে পুলিশ