রাজনীতির উর্ধ্বে থাকা উচিত, রাজ্যপালদের ভূমিকা নিয়েই বড়সড় প্রশ্ন ‘সুপ্রিম’ বিচারপতির

পশ্চিমবঙ্গ-সহ দেশের বিভিন্ন অ-বিজেপি শাসিত রাজ্যের রাজ্যপালদের (Governor) নিরপেক্ষতা নিয়ে এবার বড়সড় প্রশ্ন তুলে দিলেন সুপ্রিম কোর্টের (Supreme Court of India) বিচারপতি বিভি নাগরত্ন (BV Nagratna)। শনিবার বেঙ্গালুরুতে একটি অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়ে তিনি বলেন, ইদানীং দেখা যাচ্ছে, দুভার্গ্যজনক ভাবে কয়েকজন রাজ্যপাল যেখানে তাঁদের মাথা ঘামানোর দরকার নেই, সেখানে সক্রিয় হয়ে উঠছেন আর যেখানে তাঁদের ভূমিকা বেশি প্রয়োজনীয়, সেখানে নিষ্ক্রিয় হয়ে থাকছেন।’ শীর্ষ আদালতের বিচারপতির এমন মন্তব্যে রীতিমতো শোরগোল পড়ে গিয়েছে। উল্লেখ্য, অবিজেপি রাজ্যগুলিতে রাজ্যপালদের তিক্ততা ক্রমশই মাত্রা ছাড়াচ্ছে। এমন আবহে বিচারপতি নাগরত্নের মন্তব্য বেশ অর্থবহ বলেই মনে করা হচ্ছে।


অবিজেপি রাজ্যগুলিতে রাজ্যপালরা বিজেপির মুখপাত্র হিসেবে কাজ করছেন! বিরোধীদের এই অভিযোগ দীর্ঘদিনের। রাজ্য প্রশাসনের সঙ্গে সেখানকার রাজ্যপালদের বিমাতৃসুলভ আচরণের ঘটনা অজানা কিছু নয়। সেই লড়াই সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত গড়িয়েছে। রাজ্যপালরা বিজেপির হয়ে অ-বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলিতে কাজ করছেন বলে বারবার অভিযোগ তুলেছে বিরোধী জোট ইন্ডিয়া। এদিন রাজ্যপালের নিরপেক্ষতা প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে প্রয়াত স্বাধীনতা সংগ্রামী তথা সংবিধান সভার সদস্য জি দুর্গাবাইয়ের একটি বক্তব্যকে উদ্ধৃত করে বিচারপতি নাগরত্ন বলেন, রাজ্যপালের উচিত কোনও রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যোগসাজশ না রাখা। পাশাপাশি দলীয় কাজকর্মের মধ্যে তাঁর না জড়ানোই কাম্য। কিন্তু বাংলা, তামিলনাড়ু, কেরল, তেলেঙ্গানা, পাঞ্জাব-সহ একাধিক রাজ্যেই রাজ্যপালের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ একেবারেই নতুন নয়।

বাংলার রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোসের বিরুদ্ধে যেমন রাজ্যের বেশ কয়েকটি বিল আটকে রেখে প্রশাসনিক কাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে, ঠিক তেমনই সম্প্রতি বিধায়কদের শপথগ্রহণ নিয়েও রাজ্যপালের গাজোয়ারির বিরুদ্ধে সরব হয়েছে তৃণমূল। পাশাপাশি সম্প্রতি বাংলায় রাজভবনে শ্লীলতাহানির অভিযোগে মুখ পুড়েছে রাজ্যপাল বোসের। ইতিমধ্যে এই বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টে মামলা দায়ের হয়েছে, যেখানে রাজ্যপালের সাংবিধানিক রক্ষাকবচের এক্তিয়ার কতটা, তা নিয়ে প্রশ্নও উঠেছে। এছাড়াও রাজভবনে জোর করে বিল আটকে রাখা নিয়ে কিছুদিন আগেই শীর্ষ আদালত বাংলা ও কেরালার রাজ্যপালকে নোটিশ পাঠিয়েছে। এমন আবহে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতির মন্তব্য বেশ তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করা হচ্ছে।

তবে বিচারপতি নাগরত্নের মন্তব্যকে হাতিয়ার করে রাজ্যপালকে নিশানা তৃণমূল কংগ্রেসের। দলের প্রাক্তন সাংসদ কুণাল ঘোষের বক্তব্য, ‘মাননীয় বিচারপতি ঠিকই তো বলেছেন। যে রাজ্যগুলিতে বিজেপি দুর্বল, সেখানে রাজ্যপালদেরই বিজেপির সভাপতি হিসাবে ব্যবহার করা হচ্ছে।’ তবে তৃণমূলের স্পষ্ট জবাব, উনি যদি রাজনীতির ঊর্ধ্বে উঠে সাংবিধানিক কাঠামোর মধ্যে থেকে কাজ করেন, তাহলে ভালো। সেটা না-হলে আমরা প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করব।