শরীরের কোথাও আঘাত বাকি নেই, নন্দীগ্রামের নির্যাতিতাকে দেখে বিচার চাইল তৃণমূল

আর জি করের দোষীদের শাস্তির দাবি তোলা বা পদত্যাগের কথা বলা হলে, এলাকার বিধায়ক শুভেন্দু অধিকারী ও সাংসদ অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় কেন ইস্তফা দেবে না

অকথ্য অত্যাচার মহিলার উপর। প্রমাণ লোপাটে গুঁড়িয়ে দেওয়া হল সিসিটিভি ক্যামেরা। মাকে রক্ষা করতে গিয়ে শ্লীলতাহানির শিকার নাবালিকা কন্যা। শুধুমাত্র তৃণমূল করার অপরাধে বিজেপির পার্টি অফিসে বসে তৈরি হয়েছিল হামলার ব্লুপ্রিন্ট, দাবি স্থানীয়দের। নির্যাতিতার জন্য বিচারের দাবিতে রবিবার নন্দীগ্রামে তৃণমূলের প্রতিনিধিদল। একদিকে দোষীদের শাস্তি, অন্যদিকে নাবালিকার শ্লীলতাহানিতে পকসো ধারার মামলা রুজুর দাবি জানান তাঁরা। বেগতিক দেখে নির্যাতিতার স্বামীকে ফোন করে প্রলোভন দেখানো শুরু বিজেপি নেতাদের। যদিও নির্যাতিতার স্বামী সেসব প্রলোভনে পা না দিয়ে নির্যাতিতার সুস্থতায় জোর দিয়েছেন। মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে মহিলাকে রবিবারই এসএসকেএম হাসপাতালে নিয়ে আসা হয় চিকিৎসার জন্য।

নন্দীগ্রামের গোকুল নগরের বাসিন্দা মহিলা মেয়ে ও ছেলেকে নিয়ে থাকতেন বাড়িতে। স্বামী চেন্নাইতে জীবিকার জন্য থাকেন। সেই সুযোগে ৪০ জনের দল দফায় দফায় আক্রমণ চালায় বাড়িতে। মারতে মারতে মহিলাকে রাস্তায় নিয়ে আসে। শরীরের একটা অংশ বাকি থাকে না যেখানে আঘাতের চিহ্ন নেই। মারতে মারতে বিবস্ত্র করে গ্রামের রাস্তা দিয়ে ঘোরায় বিজেপির দুষ্কৃতীরা। ১৩বছরের মেয়ে বাধা দিতে গেলে তার শ্লীলতাহানি করা হয়। ছোট ছেলেটি সবজির খেতে গিয়ে লুকিয়ে পড়ে।

এর আগেও দুবার বাড়ি ভেঙে দেয় এই বিজেপির নেতা কর্মীরা। এবারেও বিজেপির পঞ্চায়েত কর্তারা এর সঙ্গে জড়িত, দাবি স্থানীয়দের। বিজেপির পার্টি অফিসে বসে তৈরি হয়েছিল হামলার ব্লুপ্রিন্ট, জানান তাঁরা। তাই আক্রমণের আগে সিসিটিভি ক্যামেরা ভেঙে ঢোকে দুষ্কৃতীরা। ঘটনার খবর পেয়েই চেন্নাই থেকে বাড়ি ফিরে আসেন নির্যাতিতার স্বামী। মহিলাকে ভর্তি করা হয় নন্দীগ্রাম হাসপাতালে।

রবিবার নন্দীগ্রামে নির্যাতিতার সঙ্গে দেখা করতে যান তৃণমূলের প্রতিনিধিদল। ছিলেন মন্ত্রী শিউলি সাহা, মন্ত্রী বীরবাহা হাঁসদা, সাসংদ দোলা সেন, সাংসদ মমতাবালা ঠাকুর, সাসংদ সায়নী ঘোষ, উত্তরা সিং, দেবাংশু ভট্টাচার্য, কুণাল ঘোষ। প্রথমেই নন্দীগ্রাম হাসপাতালে মহিলার সঙ্গে দেখা করেন তৃণমূলের মহিলা প্রতিনিধিরা। কুণাল ও দেবাংশু ডাক্তারের সঙ্গে কথা বলেন। ডাক্তার জানান, ভয়ঙ্কর হামলা হয়েছে। দাগ থেকেই তার প্রমাণ মিলেছে। মেয়েকেও দলবেঁধে শ্লীলতাহানি করা হয়েছে। ডাক্তারের সঙ্গে কথা বলার পর ডাক্তারও জানান কলকাতায় নিয়ে গিয়ে চিকিৎসা করানো উচিত। মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলা হয়। মুখ্যমন্ত্রী সবুজ সংকেত দেন।

তৃণমূলের প্রতিনিধিদলের দাবি, মেয়েটির জন্য পকসো ধারায় মামলা রুজু করতে হবে। তাঁদের স্পষ্ট বক্তব্য, আর জি করের দোষীদের শাস্তির দাবি তোলা বা পদত্যাগের কথা বলা হলে, এলাকার বিধায়ক শুভেন্দু অধিকারী ও সাংসদ অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় কেন ইস্তফা দেবে না। আর জি করের ঘটনা সামাজিক ব্যাধি। কিন্তু নন্দীগ্রামে যে ঘটনা ঘটেছে সেটা সংগঠিত রাজনৈতিক প্রতিহিংসা। নন্দীগ্রাম থানায় গিয়ে ওসির সঙ্গে কথা বলা হয়। ওসি তাঁদের আশ্বস্ত করেন কয়েকজনকে ধরা গিয়েছে, বাকীদেরও ধরে ফেলব।

এরপরই চাঞ্চল্যকর দাবি করেন নির্যাতিতার স্বামী। তিনি বলেন, ঘটনার পর থেকে বিজেপির প্রভাবশালী ফোন করেন। বসে মিটমাট করার জন্য় নানা প্রলোভন দেওয়া হয়। যদিও তিনি দাবি করেন, “কিছুতেই সেই কাজ করব না। পারিবারিক মান মর্যাদা ধুলোয় মিশিয়ে দিয়েছে বিজেপির দল। বিচার চাই।” পরিবারটিকে নিরাপত্তা দেওয়ার ব্যবস্থা করে প্রশাসন।

Previous articleভিডিও কলে মহিলাদের “নগ্ন” হতে বলতো, সঞ্জয়ের নতুন কীর্তি ফাঁস!
Next articleঅরিজিতের নামে ভুয়ো পোস্ট! টুইটার অ্যাকাউন্টই নেই গায়কের