সুপ্রিম কোর্ট বলার পরেও নেই হেলদোল। চিকিৎসার মতো জরুরি পরিষেবাতেও এমন নজিরবিহীন কর্মবিরতি (Doctor Strike) আগে দেখেনি দেশ। আর জি কর কাণ্ডের জেরে কর্মবিরতি চলছেই হাসপাতালে হাসপাতালে। শহর ছাড়িয়ে জেলায় জেলায় পড়েছে প্রভাব। নির্যাতিতার নির্মম পরিণতির বিচার সকলেই চায়, কিন্তু এভাবে? যেখানে আট থেকে আশি, নিরীহ, নিরপরাধ রোগীরা চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত! অসহায় রোগীর পরিবার, পরিজন! যার জেরে অকালে প্রাণ ঝরল এক কিশোরীর। অথচ, সঠিক সময়ে চিকিৎসা পেলে বাঁচানো যেত তাঁকে।

ঘটনা ঠিক কী? অসুস্থ কিশোরীকে বারাসাতের সরকারি হাসপাতালে নিয়ে এলে জানিয়ে দেওয়া হয়, সংশ্লিষ্ট বিভাগের চিকিৎসক নেই। এরপর পরিবারের সদস্যরা কিশোরীকে দেগঙ্গার একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করে। সেখানেই মৃত্যু হয় কিশোরীর। অভিযোগের তির বারাসত জেলা হাসপাতালের দিকে।

এদিকে ঘটনাকে ঘিরে চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে এলাকায়। এমনকী নার্সিংহোমের কয়েক লক্ষ টাকা বিল মেটাতে পারেনি কিশোরীর হতদরিদ্র পরিবার। স্থানীয়রা চাঁদা তুলে নার্সিংহোম থেকে মৃত কিশোরীর দেহ বাড়ি নিয়ে আসেন। এমনই মর্মান্তিক ঘটনার সাক্ষী রইল দেগঙ্গার বেড়াচাঁপা। পরিবারের সদস্যদের আক্ষেপ, “প্রতিবাদী চিকিৎসকরা পরিষেবা দিলে কালো দিন নেমে আসত না!”

দেগঙ্গার বেড়াচাঁপার দেবালয় এলাকার নবম শ্রেণির পড়ুয়া সঙ্গীতা আচার্য বেশ কিছুদিন ধরে জ্বরে ভুগছিল। গত ১৮ আগস্ট হঠাৎ করেই তাঁর জ্বর বেড়ে যায়। তড়িঘড়ি পরিবারের লোকজন প্রথমে দেগঙ্গার বিশ্বনাথপুর হাসপাতাল ও পরে বারাসত জেলা হাসপাতালে তাকে নিয়ে আসে। পরিবারের দাবি, ইমার্জেন্সি বিভাগ থেকে জানিয়ে দেওয়া হয়, সংশ্লিষ্ট বিভাগের চিকিৎসককে পাওয়া যাবে না। প্রত্যেকে কর্মবিরতি (Doctor Strike) পালন করছেন। তা শোনার পরেই তড়িঘড়ি শহর লাগোয়া একটি বেসরকারি নার্সিংহোমে ভর্তি করেন। সেখানে তিন দিন চিকিৎসা চলে তার। জানা গিয়েছে, কিশোরীর জ্বর, শ্বাসকষ্ট সহ একাধিক উপসর্গ তৈরি হয়। চিকিৎসকরা জানিয়েছিলেন জন্ডিস হয়েছে। সাড়ে তিন লক্ষ টাকা বিল করা হয় নার্সিংহোমের তরফে। পেশায় দিনমজুর কিশোরীর বাবা ধার করে লক্ষাধিক টাকা নার্সিংহোমে জমা দেন। এরপর বুধবার সকালেই মৃত্যু হয় কিশোরীর। বকেয়া থাকা টাকা দ্রুত মিটিয়ে দেহ নিয়ে যাওয়ার কথা বলা হয় নার্সিংহোমের তরফে। একদিকে সন্তান হারানোর যন্ত্রণা, অন্যদিকে বিল মেটানো নিয়ে কার্যত দিশাহীন হয়ে পড়েন পরিবারের সদস্যরা।


আরও পড়ুন:ক্যান্সার থেকে হাড়ভাঙা, ডাক্তারদের কর্মবিরতিতে যন্ত্রণায় কাতর অসহায় রোগীরা
