রামমোহন সম্মিলনীর দুর্গাপুজোয় এবার স্বনির্ভর গোষ্ঠীর নারীদের শিল্পকথা – ‘সম্পন্না’ 

আসছে পুজো, বাঙালির শ্রেষ্ঠ উৎসবের কাউন্টডাউন শুরু হয়ে গেছে। ‘ধর্ম যার যার কিন্তু উৎসব সবার’, তাই দুর্গাপুজো (Durgapuja 2024) সাধারণ কোনও পুজো নয় এ যেন মহোৎসব, যার আশায় সারা বছর অপেক্ষা করে থাকেন আপামর বাঙালি। থিম বনাম সাবেকিয়ানার লড়াই এর মাঝে উত্তর কলকাতার (North Kolkata) ঐতিহ্যবাহী ক্লাব রামমোহন সম্মিলনী (Rammohan Sammilani)বরাবরই একটু ভিন্নধর্মী ভাবনায় বিশ্বাসী। ‘জঙ্গলকন্যা’ এবং ‘সাগরকন্যা’র পর তাদের এবছরের থিম ‘সম্পন্না’ – বাংলার স্বনির্ভর নারীদের শিল্পকথা।স্বনির্ভর গোষ্ঠীর দ্বারা যেভাবে বাংলার বিপুল সংখ্যক মহিলারা নিজের পায়ে দাঁড়াচ্ছেন তাকে কুর্নিশ জানিয়েই এ বছর মাতৃ আরাধনার ভাবনা।

বৃহস্পতিবার প্রেসক্লাবে আয়োজিত থিম প্রকাশ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন নারী ও শিশু কল্যাণ দফতরের মন্ত্রী শশী পাঁজা (Sashi Panja), বন দফতর তথা রাজ্যের স্বনির্ভর গোষ্ঠীর দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী বীরবাহা হাঁসদা(Birbaha Hansda), তৃণমূল নেতা তথা রাজ্যসভার প্রাক্তন সাংসদ কুণাল ঘোষ(Kunal Ghosh) সহ ক্লাবের সভাপতি শ্যামল দত্ত সহ-সভাপতি অয়ন চক্রবর্তী (Ayan Chakrabarty) সহ অন্যান্যরা। এবছর এই পুজোর পরিকল্পনার দায়িত্বে কুণাল। সাংবাদিক সম্মেলনে তিনি বলেন, দুর্গাপুজো ধর্ম আর উৎসবের মেলবন্ধন। দুর্গোৎসব একদিকে যেমন শিল্পের কথা বলে পাশাপাশি এই মহোৎসবকে কেন্দ্র করে একটা বিকল্প অর্থনীতি গড়ে ওঠে বাংলার বুকে। রামমোহন সম্মিলনী সেই ধারাকে বিগত বছরগুলিতে বহন করেছেন। কখনও এই পুজোতে জঙ্গলের মহিলাদের গল্প উঠে এসেছে কখনও মৎস্যজীবী পরিবারের সংগ্রামের কথা পূজোর থিম হিসেবে স্থান পেয়েছে। আগে একটা সময় বাংলার মহিলাদের হাতে নানা জিনিস উৎপাদন হতো। কিন্তু বর্তমানে বাংলার সরকার বিপণনের সমান সুযোগ করে দিয়েছে। তিনি জানান এই মুহূর্তে সরকারের থাকা তৃণমূল কংগ্রেস এমন একটি দল যারা মহিলাদের সবথেকে বেশি সম্মান করে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়(Mamata Banerjee) প্রতিমুহূর্তে নারী উন্নয়নের দিকে সজাগ দৃষ্টি দিচ্ছেন। সেই কারণে কাউন্সিলর থেকে পঞ্চায়েত সদস্য হোক বা বিধায়ক -সাংসদ তৃণমূল সরকারের মহিলা আধিক্য বারবার নারী শক্তি জয়গান গেয়েছে। এ বছর রামমোহন সম্মিলনীর পুজো মণ্ডপে মহিলাদের স্বনির্ভর হওয়ার কাহিনী থেকে শিল্প উদ্ভাবনের ভাবনা প্রতিফলিত হবে বলে জানিয়েছেন উদ্যোক্তারা।

কর্মবিরতিতে ছুটির মেজাজ আর জি করে, স্বাস্থ্যকর্মীরা কেউ মোবাইলে খেলছেন গেম, কেউ দিচ্ছেন ভাতঘুম

স্বনির্ভর গোষ্ঠীর দায়িত্বে থাকা মন্ত্রী বীরবাহা হাঁসদা জানান, মুখ্যমন্ত্রীর অনুপ্রেরণায় যেভাবে গ্রামের ঘরে ঘরে মহিলারা নিজেদের তৈরি জিনিস আজ বাজারজাত করার ফলে স্বনির্ভর হয়ে উঠছেন এবং বিশ্বের বিভিন্ন দেশে তাদের খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ছে তা যথেষ্ট প্রশংসনীয়। পাশাপাশি এই পুজোতে শনিবার গোষ্ঠীর মহিলাদের তৈরি জিনিস কেনার জন্য অনুরোধও করেন তিনি। ফোরাম ফর দুর্গোৎসবের তরফে শাশ্বত জানান, ইউনেস্কোর সম্মান পাওয়ার পর থেকে দায়িত্ব অনেক বেড়েছে। রামমোহন সম্মিলনী যেভাবে বাংলার সর্বশ্রেষ্ঠ উৎসবকে রাজ্যের শিল্পকলা এবং নারী ক্ষমতায়নের ভাবনার সঙ্গে মিলিয়ে দিতে এ বছর স্বনির্ভর গোষ্ঠী নারীদের শিল্প কথাটি থিম হিসেবে বেছে নিয়েছে সেটা এক কথায় অনন্য উদ্যোগ।

থিম প্রকাশ অনুষ্ঠানে রাজ্যের মন্ত্রী শশী পাঁজা বলেন, দুর্গাপুজো সৃজনশীল অর্থনীতির কথা বলে। তাই বাংলা ৪৩ হাজার পুজোতে প্রত্যক্ষভাবেই এক কোটির বেশি মানুষ স্বনির্ভর হওয়ার স্বপ্ন দেখেন, সুযোগ পান। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নারী স্বশক্তিকরনের জন্য যা যা উদ্যোগ নিয়েছেন তাকে পাথেয় করে আগামীতে মহিলাদের স্বাবলম্বী হওয়ার পথ প্রশস্ত হবে বলেও জানান তিনি। মন্ত্রীর কথায়, প্রান্তিক অঞ্চল থেকে মহানগরীর বড় বড় পুজো মণ্ডপের পরিচালনার দায়িত্বে যেভাবে মহিলারা এগিয়ে এসেছেন তা নিঃসন্দেহে নজিরবিহীন। মহিলাদের স্বাবলম্বী হওয়ার কথা আইন বলে, কিন্তু তার বাস্তব রূপায়ন করে দেখিয়েছে বাংলা। তাই আজ কন্যাশ্রী দিবস থেকে সবলা মেলায় মহিলাদের শিল্প শক্তির বিকাশ ঘটছে। আর এই সবটাই সম্ভব হয়েছে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অদম্য ইচ্ছের ফলে। বাংলার সচেতন নারীর স্বনির্ভরতার কথাই তুলে ধরছে রামমোহন সম্মিলনীর এ বছরের থিম ‘সম্পন্না’। কুণাল জানিয়েছেন এ বছর রামমোহন সম্মেলনের মণ্ডপে স্বনির্ভর গোষ্ঠীর তৈরি বিভিন্ন শিল্পকলা স্থান পাবে। পাশাপাশি তাঁর অনুরোধ, পুজোয় যাঁরা কেনাকাটা করেন তাঁরা যদি স্বনির্ভর গোষ্ঠীর তৈরি জিনিস কিনতে আগ্রহ দেখান তাহলে এই উপকারটা সরাসরি গ্রামে বিভিন্ন প্রান্তে থাকা মহিলাদের উন্নয়নের সরাসরি যুক্ত হবে এবং মাতৃ বন্দনায় হাসি ফুটবে বাংলার মা বোনেদের মুখে।


Previous articleআর জি কর নিয়ে মুখে কুলুপ অনির্বাণের, পথে প্রতিবাদে স্ত্রী মধুরিমা
Next article“আমরা চিকিৎসকদের পাশে, কিন্তু ওনরা আমাদের পাশে নেই”! পরিষেবা না পেয়ে ক্ষোভ রোগীর পরিজনের