কর্মবিরতিতে অনড় জুনিয়র ডাক্তাররা, চূড়ান্ত দুর্ভোগে রোগীরা

রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী থেকে সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি- বারবার আবেদন করা সত্ত্বেও আর জি কর-কাণ্ডের (R G Kar Medical College And Hospital) প্রতিবাদে ও প্রকৃত দোষীর সাজার দাবিতে কর্মবিরতিতে অনড় জুনিয়র চিকিৎসকরা। এর জেরে চরম দুর্ভোগে রোগীরা। এসএসকেএম (SSKM) থেকে এনআরএস (NRS)- ঘুরে ঘুরে হন্যে হয়ে পরিষেবা না পেয়ে ফিরে যেতে হচ্ছে রোগীদের। উদ্বেগে রোগীর পরিজনরাও।দক্ষিণ ২৪ পরগনার আমতলার বাসিন্দা আফসার আলির পেটে ব্যথা ও বমি হচ্ছিল। চিকিৎসার জন্য বৃহস্পতিবার এসএসকেএমের এমার্জেন্সিতে এসেছিলেন তিনি। প্রাথমিক চিকিৎসার পরে তিনি বাড়ি ফিরে গিয়েছিলেন। তবে রাতে ফের অবস্থার অবনতি হয়। শুক্রবার সকালে তাঁকে ফের এসএসকেএমে নিয়ে আসেন পরিবারের সদস্যরা। অভিযোগ, ডাক্তার নেই বলে ভর্তি নেওয়া হয়নি। রোগীর স্ত্রী সোনি খাতুনের দাবি, চিকিৎসকদের আন্দোলনের জন্যই পরিষেবা না পেয়ে ফিরে যেতে হচ্ছে।

এসএসকেএম হাসপাতাল চত্বরে হতাশাগ্রস্ত অবস্থায় দেখা গেল বারুইপুরের বাসিন্দা মহিউদ্দিন সাঁফুইকে। বর্তমানে তাঁর ক্যানসার আক্রান্ত স্ত্রী হাসপাতালেই চিকিৎসাধীন। শুধু তাই নয়, গলব্লাডারে পাথর ও টিউমারও আছে। আগে অবশ্য একটা অস্ত্রোপচার হয়েছে। তবে তারপর থেকে তেমন ভাবে চিকিৎসা এগোয়নি বলেই দাবি মহিউদ্দিনের। তিনি বলেন, এখনও অনেক অস্ত্রোপচার বাকি। স্বামীর প্রশ্ন, এভাবে রোজ আন্দোলন চললে রোগীরা পরিষেবা পাবে কী করে?

বাসন্তীর সোনাখালির বাসিন্দা উত্তম সরকার। তাঁর স্ত্রী গর্ভবতী। তবে হঠাৎ করে রক্তক্ষণ হওয়ায় সোমবার স্ত্রীকে উত্তম ভর্তি করেছিলেন এনআরএসে। বর্তমানে রক্তপাত বন্ধ হলেও স্ত্রী ও তাঁর গর্ভের শিশু কেমন আছে, হাসপাতাল থেকে তা নাকি জানানো হচ্ছে না উত্তমকে। শুধু জানতে পেরেছেন রক্ত পরীক্ষা ও আলট্রা সোনোগ্রাফি করা হয়েছে। তাঁর দাবি, চিকিৎসক বা নার্সরা রোগীর বেডের কাছে পর্যন্ত খুব একটা আসছেন না।

উত্তর ২৪ পরগনার বারাসতের বাসিন্দা দ্রৌপদী সরকার বলেন, এনআরএসে তাঁর মেয়ের সন্তান হয়েছে। তবে প্রসূতি মা ও সদ্যজাত কেমন আছে সেই খোঁজ পাচ্ছিলেন না তিনি। পরে জানতে পারেন দুজনেই ভালো আছে। দ্রৌপদীর দাবি, দিনে মাত্র একবার রোগীর কাছে আসছেন চিকিৎসকরা।

একই অবস্থা রাজ্যের প্রায় সমস্ত সরকারি হাসপাতালেই। রোগী ও তাঁদের পরিজনদের দাবি, চিকিৎসকদের আন্দোলনের প্রতি সমর্থন আছে। তাঁরা ডাক্তারদের পাশে থাকলেও তাঁদের পাশে থাকছেন না চিকিৎসকরা। যার ফলে চূড়ান্ত ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে। আত্মীয়দের প্রশ্ন, দিনের পর দিন এভাবে চলতে থাকলে অসহায় রোগীরা কোথায় যাবে? সকলেরই দাবি, আর জি কর হাসপাতালের (R G Kar Medical College And Hospital) তরুণী চিকিৎসকের খুন ও ধর্ষণে যে বাঁ যারা জড়িত সবাই চূড়ান্ত শাস্তি পাক। তবে চিকিৎসকরা কর্মবিরতি প্রত্যাহার করুক।

কর্মবিরতি প্রত্যাহার না করলেও জুনিয়র ডাক্তাররা শনিবার থেকে টেলি মেডিসিন পরিষেবা চালু করছেন। হেল্পলাইন মোবাইল ও হোয়াটসআপ নম্বর ৮৭৭৭৫৬৫২৫১, ৮৭৭৭৫৬৯৩৯৯, ৮৭৭৭৫৭৯৫১৭, ৬২৯০৩২৬০৭৯। প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে দুপুর ২টো পর্যন্ত চালু থাকবে অভয়া ক্লিনিক পরিষেবাও। তবে, তাতে খুব একটা আশ্বস্ত হতে পারছে না কোনও পক্ষই।







Previous articleনজরে ভোট! ছত্রপতির মূর্তি ভাঙা ইস্যুতে চাপে পড়ে ‘ক্ষমাপ্রার্থনা’ মোদির
Next articleবন্দে ভারতে বিজেপির দাদাগিরি! ধাক্কা সোশ্যাল মিডিয়া ইনফ্লুয়েন্সারকে