শর্ত দিয়ে খোলা মনে আলোচনা হয় না: জুনিয়র ডাক্তারদের কাজে ফেরার আর্জি চন্দ্রিমা-মনোজদের

বারবার সরকারের তরফ থেকে আলোচনার প্রস্তাব ফেরাচ্ছেন আন্দোলনরত জুনিয়র ডাক্তাররা। দিচ্ছেন শর্ত। বুধবার, সন্ধেয় নবান্ন থেকে সাংবাদিক বৈঠক করে এই বিষয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করলেন রাজ্যের স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য (Chandrima Bhattacharya)। তাঁর কথায় সরকারের তরফে খোলা মনে আলোচনার প্রস্তাব দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু শর্ত চাপাচ্ছেন আন্দোলনকারীরা। শর্ত দিয়ে খোলা মনে আলোচনা হয় না-মন্তব্য চন্দ্রিমার। মুখ্যসচিবের মনোজ পন্থের (Manoj Panth) আবেদন, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ মেনে কাজে ফিরুন জুনিয়র ডাক্তার। রাজ্য পুলিশের ডিজি রাজীব কুমারের (Rajiv Kumar) আর্জি, ”জুনিয়র ভাই বোনেদের বলবো ওদের সব রকম সেফটি ও সিকিউরিটির ব্যবস্থা আমরা করবই।” এই আন্দোলনের পিছনে রাজনৈতিক মদতের অভিযোগ তোলেন চন্দ্রিমা। যদিও সেই অভিযোগ অস্বীকার করে জুনিয়র ডাক্তাদের দাবি, শর্ত মানলে তাঁরা বৈঠকে বসবেন।২৭ ঘণ্টা  পেরিয়ে গেলেও, স্বাস্থ্য ভবনের বাইরে এখনও ধর্নায় বসে রয়েছেন জুনিয়র ডাক্তারেরা। দফায় দফায় ই-মেইল চালাচালি হয়েছে নবান্ন ও আন্দোলনকারীদের মধ্যে। কিন্তু বারবার নানা শর্ত দিয়ে বৈঠক এড়াচ্ছেন জুনিয়র ডাক্তারেরা। বুধবার, মুখ্যসচিবের পাঠানের চিঠির জবাবেও শর্ত না মানলে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত জানান আন্দোলনকারী। এই পরিস্থিত, এদিন সন্ধেয় নবান্নে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন চন্দ্রিমা, মনোজ ও রাজীব। স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী জানান, ”আজকে একটা খোলা মনে আলোচনা চাই। গতকাল থেকে এই আলোচনা নিয়ে একটা টানাটানি চলছে। গরিব মানুষ যেন পরিষেবা পাওয়া থেকে বঞ্চিত না হন, তার জন্য‌ই আমরা চেষ্টা করছি, আলোচনায় বসার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। প্রত্যেককে সুপ্রিম কোর্টের রায় কে মান্যতা দিতে হবে যারা আইন মেনে চলেন। গতকাল স্বাস্থ্য দফতরের প্রধান সচিবের মেইল গেছে। সেই মেইলকে কেন্দ্র করে নানা আলোচনা করা হয়েছে।” এরপরেই চন্দ্রিমার প্রশ্ন, ”কেন সিএম‌ও তে ভোর ৩.৪৫ এ মেইল করা হলো। এটা কি খুব স্বাভাবিক ঘটনা ? এর মধ্যে কি কোনো রাজনৈতিক উদ্দেশ্য রয়েছে। মনে হচ্ছে তেমন‌ই।” অভিযোগ রাজ্যের মন্ত্রীর। তিনি বলেন, ”আজকের মেইলের উত্তরে যে মেইল ওনারা করলেন সেখানে কিছু শর্ত দেওয়া হল। রাজ্য সরকার খোলা মনেই আলোচনায় বসতে চায়। আমরা চাই ওই মেয়েটির পরিবার বিচার পাক। কিন্তু যেভাবে শর্ত আরোপ করা হয়েছে তাতে মনে হচ্ছে পিছনে কোনো রাজনীতির খেলা রয়েছে।”চন্দ্রিমা জানান, ”গতকাল বিকাল পাঁচটায় সুপ্রিম কোর্টের সময় শেষ হয়েছে। তাও মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেন নি‌। তবে আমরা সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ মতো কি করা যায় না যায় সেটা ভাবছি। জুনিয়র ডাক্তারদের বলব আপনারা রাজনীতির মধ্যে না গিয়ে এই নোবেল প্রফেশনের কথা মাথায় রেখে সিদ্ধান্ত নিন। আসুন খোলা মনে, শর্ত দিয়ে নয়, শর্ত দিলে কিছু হবে না। আপনারা যদি খোলামনে আলোচনা করে কাজে ফিরে যান তাহলে বোধহয় সকলেরই ভালো হয়।”

মুখ্যসচিব মনোজ পন্থ বললেন, “দুর্ভাগ্যজনক ভাবে ওঁরা এখনও আসেনি। আলোচনার জন্য ওঁদের আসা উচিত ছিল।” তাঁর কথায়, “আমরা জুনিয়র ডাক্তারদের অনুরোধ করেছিলাম, কাজে ফিরতে। মানুষকে পরিষেবা দেওয়া তাঁদের দায়িত্ব। আমি বলেছিলাম, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ মানার জন্য।” মুখ্যসচিবের অভিযোগ, ”আজকে ওদের যে মেইল পেয়েছি তাতে খোলামেলা আলোচনার পরিবেশ ছিলো না। কোনো শর্ত রেখে আলোচনা হতে পারে না। যদি মনে করা হয় যে শর্ত মেনেই আলোচনা হবে, সেটা বোধহয় ঠিক নয়। আমরা এখনও মনে করি ওনারা সুপ্রিম কোর্টের রায়কে মান্যতা দিয়ে খোলামেলা আলোচনা করুক। আজকের মেইলের যে রেসপন্স আমরা পেয়েছি সেটা আমাদের আহত করেছে। এটা উচিত ছিল না।”

রাজ্য পুলিশের ডিজি বলেন, ”একটাই কথা পুলিশের পক্ষ থেকে বলব আমরা জুনিয়র ভাই-বোনেদের বলবো ওদের সব রকম সেফটি ও সিকিউরিটির ব্যবস্থা আমরা করবই।

ওনারা যেন ভুল পথে না গিয়ে যদি সত্যি স্বাস্থ্য ক্ষেত্রের সমস্যা দূর করতে চান তাহলে খোলামেলা পরিবেশে আগাম শর্ত আরোপ না করে আলোচনায় আসুন।”

আন্দোলনকারী জুনিয়র ডাক্তারদের তরফে অনিকেত মাহাত বলেন, ”যে মুহূর্তে আমাদের দাবি মেনে নেওয়া হবে, সেই মুহূর্তে আমরা আলোচনায় যোগ দেব।” রাজনীতির দাবি উড়িয়ে তিনি বলেন, ”আমাদের আন্দোলন সম্পূর্ণ ভাবে অরাজনৈতিক।”