জয়িতা মৌলিক

সিগনালে দাঁড়িয়ে বাস (Bus)। বিদ্যুৎগতিতে উঠল এক বালক। কন্ডাক্টরের হাত থেকে টাকা ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা। সমস্বরে চিৎকারে ব্যর্থ হয়ে বাস থেকে গায়েব। এই ঘটনা রাত ৮টা ৪০ নাগাদ মল্লিক বাজার ক্রসিংয়ের। ঘটনার আকস্মিকতায় তখন হতচকিত কন্ডাক্টর (Conductor) থেকে যাত্রী সবাই। তবে, এই ঘটনা নতুন নয়। কন্ডাক্টর ও বাসযাত্রী সবারই অভিযোগ কলকাতার (Kolkata) বিভিন্ন জনবহুল এলাকার মোড়ে এই ঘটনা ঘটছে। আর এতে ব্যবহার করা হচ্ছে বালক-কিশোরদের।পুজোর আগে মহানগরে পকেটমারি-ছিনতাইয়ের ঘটনা বাড়ে। এই বিষয় সতর্ক প্রশাসন। প্রতি বছরেই এর জন্য বাড়তি পুলিশ (Police) মোতায়ন করা হয়। কিন্তু সম্প্রতি ভয়ানক ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটছে কলকাতার বেশ কিছু সিগনালে। বাস দাঁড়ালে কন্ডাক্টরদের (Conductor) হাত থেকে কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে টাকা। গাড়ি থেকে টানা হচ্ছে চালক ও যাত্রীর মোবাইল ফোন।
পুজোর আগে পকেটমারের সংখ্যা বাড়ে কলকাতায়। এ বিষয়ে সম্যক ধারনা আছে পুলিশের। সেই কারণে এইসময় জনবহুল এলাকায় চলে কড়া নজরদারি। থাকেন সাদা পোশাকের পুলিশকর্মীরা। কলকাতা পুলিশের এক উচ্চ পদস্থ আধিকারিকের কথায়, এখন বাসে পকেটমারি কমেছে, কারণ ভিড় কম হয়। তুলনায় পকেটমারি বেড়েছে মেট্রোতে। আর পুলিশের অভিযোগ, সেই চৌর্যবৃত্তি করছেন সুবেশী মহিলারা। অবশ্য আগেও কলকাতায় সুন্দরী-তরুণীদের দিয়ে পকেটমারির চক্র ধরা পড়েছে।

তবে, ইদানীং অভিযোগ উঠছে বড় রাস্তার মোড়ে ট্রাফিক সিগনালে গাড়ি দাঁড়ালে মোবাইল ছিনতাইয়ের। কখন বাইকে চড়ে দু-তিনজন দুষ্কৃতী এসে গাড়ির জানলা গিয়ে হাতে ঢুকিয়ে হাত থেকে মোবাইল ছিনতাই করছে। কখনও গাড়ির ড্যাশ বোর্ডের উপরে রাখা মোবাইল ছিনিয়ে নেওয়া হচ্ছে। এই বিষয়ে অভিযোগ পেয়ে ইতিমধ্যেই কয়েকজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

কিন্তু এবার আরও ভয়ানক ঘটনা। বাস সিগন্যালে দাঁড়াতেই বিদ্যুৎগতি বাসে উঠে গেটের সামনে থেকে কন্ডাক্টরের হাতে থাকা টাকা ছিনিয়ে চম্পট দেওয়ার চেষ্টা। কখনও সফল, কখনও ব্যর্থ। কখনও আবার হাতে থাকছে নোটের অর্ধেক। আর অর্ধেক চোরবাবাজির হাতে। ফলে ম্যাচ ড্র। কোনও পক্ষই লাভবান নয়। যেমন হয়েছে আলিপুরে। সেখানে সিগনালে দাঁড়িয়ে থাকা রাজবাজার-বেহালা রুটের মিনিবাসে উঠে টাকা ছিনতাই করতে যায় দুষ্কৃতী। কন্ডাক্টরের হাতে তখন ৭০০টাকা। টানের চোটে নোটের অর্ধেক ছিনতাইবাজের হাতে, অর্ধেক কন্ডাক্টরের হাতে। আবার মল্লিক বাজারে বাসে উঠে নোট কাড়তে গিয়েও না পেরে পালায় দুষ্কৃতী। তবে, বেশি দূর যায়নি। কাছেই গিয়ে বসেছিল। সঙ্গে ছিল আরও শাগরেদ। ভয়ে আর বাস থেকে নামেননি কন্ডাক্টর।

এক্ষেত্রে শুধু কন্ডাক্টর নন, অন্য মনস্ক থাকলে যাত্রীর হাতের মোবাইল বা ব্যাগ ছিনিয়ে নেওয়ার আশঙ্কা থাকছে। বাসে টাকা ছিনতাইয়ের কোনও অভিযোগ পাননি বলে জানান থানার পুলিশ আধিকারিকরা। এই ধরনের অভিযোগ পেলে কড়া পদক্ষেপ কড়া হবে। তবে, কলকাতার ট্রাফিক পুলিশের এক উচ্চ পদস্থ আধিকারিকের কথায়, দুষ্কৃতীরা বালক-কিশোরদের ব্যবহার করে অপরাধ করলে, ধরাটা মুশকিল হয়। একে ছোটদের ধরে কেউ সেভাবে রাগ প্রকাশ করতে পারেন না। ধরা পড়লেও জুভেনাইল বোর্ডে গিয়ে অল্প দিনে এরা ছাড়া পেয়ে যায়। সেই কারণে দুষ্কৃতীরাও এদের ব্যবহার করছে। তবে, পুজোর আগে ভিড়ের সুযোগে যাতে কোনও অপরাধ সংগঠিত না হয়, তার জন্য পুলিশ মোতায়েনের পাশাপাশি থাকছেন সাদা-পোশাকের পুলিশ কর্মীরা। একই সঙ্গে যাত্রীদেরও সতর্ক থাকার পরামর্শ কলকাতা পুলিশের।
