অধ্যক্ষেরাই রোগী কল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যান, স্বাস্থ্যক্ষেত্রে নিরাপত্তায় বরাদ্দ ১০০ কোটি নিয়ে আলোচনা: মুখ্যমন্ত্রী

পূর্বঘোষণা মতো রাজ্যের সব মেডিক্যাল কলেজের রোগী কল্যাণ সমিতি ভেঙে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee)। অধ্যক্ষেরাই এখন রোগী কল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যান। বৃহস্পতিবার বিকেলে নবান্ন সভাঘরে স্বাস্থ্য বিষয়ক বৈঠক সেরে বেরিয়ে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে মুখ্যমন্ত্রী জানান, বিভিন্ন হাসপাতালে (Hospital) চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করার বিষয়ে এদিনের বৈঠকে আলোচনা হয়েছে। স্বাস্থ্যক্ষেত্রে নিরাপত্তার জন্য বরাদ্দ ১০০ কোটি টাকা কী ভাবে কাজে লাগানো হবে, তা নিয়েও আলোচনা হয়েছে বৈঠকে।মুখ্যমন্ত্রী জানান, বৈঠক সদার্থক হয়েছে। বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মীদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে কী কী পদক্ষেপ হবে, তা নিয়ে বিভিন্ন হাসপাতালের সুপার ও মেডিক্যাল কলেজে অধ্যক্ষ-সহ স্বাস্থ্যকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। আগের ঘোষণা মতোই রোগী কল্যাণ সমিতি ভেঙে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। জানান, এবার থেকে সরকারি হাসপাতালের রোগী কল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যানের দায়িত্বে থাকবেন অধ্যক্ষ বা সুপার। এছাড়াও কমিটিতে থাকবেন একজন জুনিয়র ডাক্তার, সিনিয়র ডাক্তার, নার্স ও একজন জনপ্রতিনিধি।একই সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী জানান, জুনিয়র ডাক্তারদের অভিযোগ প্রেক্ষিতে যে যে বিষয়ে আশ্বাস দেওয়া হয়েছে তার কাজ শুরু হয়েছে। তবে, মমতা (Mamata Banerjee) জানান, “এখন বন্যার কাজে সকলে ব্যস্ত। তাই কাজে দেরি হচ্ছে।“

হাসপাতালে বায়োমেট্রিক সিস্টেম চালু করতে অধ্যক্ষদের নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। বলেন, যাঁরা বাইরে থেকে কাজ করতে আসছেন, তাঁদের বিস্তারিত তথ্য রাখতে হবে, হাসপাতালগুলিকে নির্দেশ দিয়েছেন মমতা।

হাসপাতালগুলিতে পর্যাপ্ত সিসিটিভি, পানীয় জল, রেস্ট রুম, ওয়াশ রুম-সহ পরিকাঠামোগত উন্নয়নের কাজে পিডব্লউডির পাশাপাশি এখন থেকে হাসপাতালের অধ্যক্ষদেরও টেন্ডার ডেকে বাকি কাজ দ্রুত শেষ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে জানান মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, হাসপাতাল ও মেডিক্যাল কলেজগুলি নিরাপত্তা সংক্রান্ত সংস্কারের কাজে গতি আনতে পূর্ত দফতরের পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট কলেজের অধ্যক্ষদেরও সক্রিয় হতে বলা হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী এও জানান, হাসপাতালের সুরক্ষায় এখন থেকে বায়োমেট্রিক হাজিরা চালু করার জন্যও তাঁদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। নির্মাণ সংক্রান্ত কাজ-সহ বিভিন্ন কারণে হাসপাতালে যেসব বহিরাগতরা আসছেন তাঁদের বিস্তারিত তথ্যও রাখতে হবে। সমস্ত সরকারি মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের সুরক্ষা ব্যবস্থা খতিয়ে দেখতে আগেই কলকাতার প্রাক্তন পুলিশ কমিশনার সুরজিৎ কর পুরকায়স্থর নেতৃত্বে একটি কমিটি গড়া হয়েছিল। সেই কমিটি হাসপাতালের সুরক্ষা বিষয়টি চূূড়ান্ত করবে বলে জানিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “১২ হাজার পুলিশের রিক্রুটমেন্ট আটকে ছিল। সম্ভবত সোমবার এর অর্ডার আসবে। সেক্ষেত্রে হাসপাতালের সুরক্ষায় আরও জোর দেওয়া যাবে।” হাসপাতাল ও মেডিক্যাল কলেজের প্রতিটি বিল্ডিং ও ফ্লোরে অ্যালার্মিং অ্যাপ সিস্টেম চালুর বিষয়েও এদিনের বৈঠকে আলোচনা হয়েছে বলে জানান মুখ্যমন্ত্রী।

সামনে পুজোর মরসুম। তার আগে রাত্তিরে সাথী অ্যাপ কীভাবে দ্রুত চালু করা যায়, তা নিয়েও এদিনের বৈঠকে আলোচনা হয়েছে।

এদিনের বৈঠকে জেলা ভিত্তিক ম্যালেরিয়া, ডেঙ্গুর পরিসংখ্যানও সংগ্রহ করেন মুখ্যমন্ত্রী। বন্যা পরিস্থিতির জেরে বাড়তে পারে সাপের উপদ্রব। ফলে প্রতিটি স্বাস্থ্য কেন্দ্রে অ্যান্টি ভেনাম ইঞ্জেকশন, ম্যালেরিয়া প্রতিরোধের ওষুধ পর্যাপ্ত পরিমাণে রয়েছে কিনা খোঁজ নেন। পরে মমতা বলেন, বন্যা পরিস্থিতির মাঝে কিছু এলাকায় ম্যালেরিয়া প্রকোপ দেখা দিলেও ডেঙ্গির সংক্রমণ এখনও অনেকটাই কম।

পূর্ব ঘোষণা মতো রাজ্যের সব মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের রোগী কল্যাণ সমিতিও যে ভেঙে দেওয়া হয়েছে, সেকথা স্পষ্ট করে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, অধ্যক্ষেরাই এখন ওই সমিতির সভাপতি। সমিতিতে জুনিয়র ডাক্তার, সিনিয়র ডাক্তার, নার্সের এক জন করে প্রতিনিধি এবং জনগণের এক জন করে প্রতিনিধি থাকবেন। বন্যা প্রসঙ্গে এদিনও ডিভিসিকে একহাত নিয়েছেন তিনি। মুখ্যমন্ত্রীর কথায়, “বন্যার মধ্যেও ওরা জল ছেড়ে চলেছে। আর দুদিন বৃষ্টি হলে কি হবে তা জানি না।”