জেইই অ্যাডভান্সড ক্র্যাক করে আইআইটি ধানবাদে পড়ার চান্স পেয়েছিল দলিত দিনমজুরের ছেলে। কিন্তু ‘দিন আনি, দিন খাই’ পরিবারে ভর্তির টাকা জোগাড় করা সহজ ছিল না। বহুকষ্টে ভর্তির টাকা জোগাড় করলেও নির্ধারিত সময়ের কয়েক মিনিট দেরি হয়ে গিয়েছিল, আর তাতেই থমকে যায় গরিব পরিবারের মেধাবী ছেলের আইআইটি-তে পড়ার স্বপ্ন। কিন্তু সে নাছোড়। আর তাই আইআইটি পড়তে চাওয়ার দাবি নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিল সেই পড়ুয়া।

সোমবার ওই অতুলের ত্রাতা হল সুপ্রিম কোর্ট। অনুচ্ছেদ ১৪২-এর অধীনে বিশেষ ক্ষমতা ব্যবহার করে ওই তরুণকে আইআইটি ধানবাদে ভর্তির ব্যবস্থা করে দিল আদালত। এই মামলায় প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড় জানালেন, ‘আমরা এমন প্রতিভাকে হারিয়ে যেতে দিতে পারি না।’

এসসি ক্যাটিগরির ওই ছাত্রের বাবা দিনমজুর। নিজের অধ্যবসায়ে দ্বিতীয় তথা অন্তিম বারের চেষ্টায় জেইই অ্যাডভান্সড ক্লিয়ার করেছিল সে। সুযোগ পেয়েছিল ধানবাদ আইআইটি-তে ভর্তির। সেখানে অ্যাডমিশন ফি ছিল ১৭,৫০০ টাকা। ফি জমা দেওয়ার সময়সীমা ২৪ জুন, বিকেল পাঁচটা। দিনমজুর পরিবারের ছেলের কাছে এই টাকা জোগাড় করা সহজ ছিল না।বহুকষ্টে টাকা জোগাড় করে সে যতক্ষণে পোর্টালে লগ-ইন করেছে, তখন ঘড়ির কাঁটায় বিকেল পৌনে পাঁচটা। কিন্তু নথিপত্র আপলোড করে ছেলেটি যতক্ষণে অনলাইন পেমেন্ট অপশনে পৌঁছয়, ততক্ষণে ঘড়ির কাঁটা পেরিয়ে গিয়েছে বিকেল পাঁচটার গণ্ডি। আর তাতেই বিপত্তি। আটকে যায় দলিত পড়ুয়ার অ্যাডমিশন।

দিন মজুরের সন্তান অতুল উত্তরপ্রদেশের মুজফফরনগরের বাসিন্দা। আদালতকে দেওয়া বয়ান অনুযায়ী তাঁর বাবার আয় দৈনিক ৪৫০ টাকা। এদিকে নামি শিক্ষাকেন্দ্রে ভর্তি হতে গেলে প্রয়োজন ১৭,৫০০ টাকা। যা জোগাড় করা রীতিমতো দুঃসাধ্য ছিল অতুলের পরিবারের কাছে।এই মামলার শুনানিতে আইআইটি ধানবাদের আইনজীবী জানান আইআইটি ধানবাদের তরফে টাকা জমা করানোর জন্য দুটি হোয়াটসঅ্যাপ চ্যাটও পাঠানো হয়। পাশাপাশি এনআইসির (ন্যাশনাল ইনফর্মেটিক সেন্টার) তরফে এসএমএসও করা হয়। অতুল প্রতিদিন আইআইটি-এর সাইটে লগইন করেও, টাকা জমা দেয়নি বলে দাবি করেন আইনজীবী। পালটা আদালত প্রশ্ন করে, ‘কেন আপনি সমস্যা সমাধানের উপায় না খুঁজে শুধু বিরোধিতা করছেন?

প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড় বলেন, ‘ওই তরুণ অত্যন্ত মেধাবী ছাত্র। মাত্র ১৭ হাজার টাকা তাঁকে আটকে দিয়েছে। শুধুমাত্র টাকা নেই বলে কাউকে এভাবে বাদ দেওয়া যায় না। আমাদের নির্দেশ ওকে ভরতির অনুমতি দেওয়া হোক। টাকা দিলে যে ব্যাচে ওর ভর্তি হওয়ার কথা ছিল সেই ব্যাচেই যে ভর্তি নেওয়া হয়। তবে এ জন্য ওই ব্যাচের কাউকে বাদ দেওয়া যাবে না। একটি সুপারনিউমারারি আসন তৈরি করতে হবে।’
