প্রিয় শতরূপ,
তুমি আমার থেকে অনেকটাই ছোট। তাই তুমি দিয়ে শুরু করলাম। লেখাটা লিখছি বিশ্ববাংলা সংবাদের সম্পাদক হিসাবে। আমার পোর্টাল নিয়ে তোমার উষ্মা এবং কিছু দুর্বিনীত শব্দ আমাকে এই লেখা লিখতে বাধ্য করল।
শুরুতেই বলি, আমার পোর্টালের কোনও চিত্র সাংবাদিক ওই ছবি দুটি তোলেননি। তোমার কোনও শুভানুধ্যায়ী তুলেছেন। এবং নানা পথে ঘুরতে ঘুরতে আমাদের হাতে আসে। আমরা ছবিটির সত্যাসত্য যাচাই করার পর খবরটি করার সিদ্ধান্ত নিই। ছবিটি যে যথার্থ তা তোমার পোস্টেই স্পষ্ট। ধরা পড়ে যাওয়ার পর অক্ষমের আস্ফালনের ভঙ্গিতে যা-যা বলেছ, যে-যে ভাষা ব্যবহার করেছ, তাতে নিজের চরিত্র, রুচি, শিক্ষার যথার্থ পরিচয় দিয়েছ। কমিউনিস্ট পার্টি কেন এখন শূন্য থেকে মহাশূন্যে বিচরণ করছে, তা তুমি নিজেই প্রমাণ করে দিয়েছ। আর একটা কথা বলি, হু ইজ শতরূপ? যার জন্য এত কষ্ট করতে বলব আমার চিত্র সাংবাদিককে!
দ্বিতীয়ত, বিচারের নামে রোজ মিছিল, রাস্তা জোড়া, ট্রাফিক জ্যাম, মানুষের হয়রানি। রাস্তায় বসা ছোট ছোট ব্যবসায়ীর মাথায় হাত। তাদের কথা ভেবেছ? তাদের বাড়ির ছোট ছোট ছেলে-মেয়ের কথা একবারও ভেবেছ যারা বছরের এই সময়টা বাবার মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে! একবারও তাদের সঙ্গে কথা বলেছ? তোমার দলের আসল উদ্দেশ্য তো বিচার নয়, ইস্যুটাকে কাজে লাগিয়ে অরাজনীতির ছদ্মবেশে কিছু ডিভিডেন্ড জোগাড় করা। দলের কিছু মার্কামারা ডাক্তারদের নিরপেক্ষ তকমায় বাজারে নামিয়েছে তোমার দল। কারণে অকারণে মিছিল। কিন্তু মানুষ এখন বুঝছেন, আসলে তোমরা ভেকধারী। বিনা চিকিৎসায় ২৯ জনের, বন্যায় ২৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। সেদিকে কে খেয়াল রাখে। ওসব থাক। কেন না আরজি কর এখন ডিভিডেন্ড দিচ্ছে, তাই না? যদি দলটাকে এই সুযোগে কিছু পাইয়ে দেওয়া যায়! তুমি সেই প্রতিবাদের উচ্চকিত স্বর। যে প্রায় রোজ নিয়ম করে এ কথাগুলো চ্যানেলে-চ্যানেলে বলে বেড়াচ্ছ। আর এই দ্বিচারিতা ধরিয়ে দিতেই এমন নিকৃষ্টমানের উষ্মা কেন? ধরা পড়ে যাওয়ার পর এছাড়া আর কীই বা বলার থাকে ভাই শতরূপ? আমরা বুঝি!
চতুর্থত, শপিং মলে জামা কিনতে গিয়েছ। লিখেছ, সৎ পথে আয়ের অর্থে কেনা। যতদূর জানি তুমি পার্টির হোলটাইমার। তোমরা যে অর্থ পাও, তাতে আর যাই হোক, শপিং মলে কেনাকাটা কী করা যায়? ধরে নিলাম পরিবারের কারওর উপার্জনের অর্থে কিনেছ। তাহলে সেটা বলে দিলেই তো ল্যাটা চুকে যেত। তাতে তথ্যগত বিভ্রান্তিও দূর হতো। বাড়ির লোকজনেও শান্তি পেতেন। একসময় পার্টির হোলটাইমার শতরূপের ২২ লাখ টাকার গাড়ি কেনার খবর প্রকাশ্যে এসেছিল। তুমিই দিয়েছিলে। স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠেছিল। বাবার কষ্টার্জিত অর্থে তোমার আয়েশের বাহন কেনার কথা জানার পরে আর তো কেউ প্রশ্ন করেননি!
শেষত, কটাক্ষ করতে গিয়ে লিখেছ, কার যেন অন্তর্বাস (পড়ুন আন্ডারপ্যান্ট) সারদার পয়সায় কেনা বলে সিবিআই নাকি বাজেয়াপ্ত করেছিল। কার উদ্দেশে এ কথা? হয়েছে নাকি? থাকলে জানাও। এ তো দারুন খবর। সংবাদ মাধ্যমে থেকেও তো জানতে পারলাম না! নাকি মনগড়া? মনগড়া কথা লিখলেও সেখানে রুচিবোধ থাকে। আমি নিশ্চিত, তোমার অভিভাবকও তোমার এই নিচ সংস্কৃতিতে বিশ্বাস করেন না! পারলে তাদের কাছ থেকে এই পোস্টটা আড়াল করে রেখ। ওঁরাও লজ্জা পাবেন।
শতরূপ, বিশ্ববাংলা সংবাদকে জড়িয়ে দ্বিতীয়বার এ ধরনের কথা আশা করি বলবে না। কোথায় থামতে হয়, সেটা তোমার জানা দরকার। প্রয়োজনে আমরাও অনেক কিছু লিখি না, বলি না, কারণ, সেখানেও থাকে রুচি ও সংস্কৃতির গণ্ডি। আগামী দিনে সেই কথাগুলো বলতে আশা করি বাধ্য করবে না।