সুদেষ্ণা ঘোষাল, নয়াদিল্লি

”পেয়েছি ছুটি বিদায় দেহো ভাই
সবারে আমি প্রণাম করে যাই”
হাতজোড় করে সবাইকে নমস্কার জানিয়ে কর্মজীবনের শেষ দিনে এজলাস ছাড়লেন শীর্ষ আদালতের (Supreme Court) প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড় (D Y Chandrachur)৷ এদিনেও ৪৫টি মামলার শুনানি করেন প্রধান বিচারপতি চন্দ্রচূড়। সরকারি হিসেবে ১০ নভেম্বর তাঁর অবসর গ্রহণের দিন৷ কিন্তু সেটি রবিবার হওয়ায়, শুক্রবারই ছিল তাঁর শেষ কাজের দিন৷ সেদিনই সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতির এজলাসে সেরিমনিয়াল বেঞ্চে বসে। অবসরের প্রাক মুহূর্তে কিছুটা আবেগপ্রবণ হয়ে পড়লেন প্রধান বিচারপতি৷ বলেন, “যদি কাউকে কোনওদিন আঘাত দিয়ে থাকি, তাহলে ক্ষমা করে দেবেন। আমি ইচ্ছে করে কাউকে আঘাত দিতে চাইনি।” একথা যখন বলছেন তখন প্রধান বিচারপতির গলা ধরে এলো। গোটা এজলাসে পিন পড়ার নিস্তব্ধতা। মাথা নীচু করে চোখের জল মুছতে দেখা গেল অনেক প্রবীণ আইনজীবীকেও।
এর পরেই বিদায়ী প্রধান বিচারপতি চন্দ্রচূড় (D Y Chandrachur) বললেন, ”আগামিকাল থেকে আর রায়দান করব না- এটা ভেবে কিছুটা অবাক লাগছিল৷ তবে এটুকু বলতে পারি, আমি সন্তুষ্ট।” এরপরে স্মৃতিতে ঢুব দেন প্রধান বিচারপতি। বলেন, ”যেদিন প্রথম এই আদালতে এসেছিলাম, সেদিন একেবারে শেষ সারিতে বসে দেখেছিলাম আমার চোখের সামনে বার অ্যাসোসিয়েশনের প্রবীণ বিখ্যাত আইনজীবীরা কীভাবে একটার পর একটা মামলায় সওয়াল করছেন৷ তাঁদের থেকে শিখেছি কীভাবে আদালতে আচরণ করতে হয়। তারপরে আপনারা, আমাদের বার অ্যাসোসিয়েশনের সদস্যরা আমাকে শিখিয়েছেন জীবন বোধ। আপনাদের থেকে আমি প্রত্যেক দিন শিখেছি। বুঝেছি, একটা মামলা অন্য মামলার থেকে পুরো আলাদা। কোনও মামলার সঙ্গে অন্য একটি মামলার হুবহু মিল খোঁজা ঠিক নয়।” আইনজীবীদের ভিড়ে ঠাসা এজলাসের দিকে তাকিয়ে প্রধান বিচারপতি চন্দ্রচূড় বলেন, ”আমার অবসরের মুহূর্তে এত লোক জড়ো হয়েছেন দেখে আমি অভিভূত, কৃতজ্ঞ৷”

তাৎপর্যপূর্ণ হল, শুক্রবার বিদায়ী প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়ের বিদায়লগ্নে তাঁকে সম্মান জানিয়েছেন অ্যাটর্নি জেনারেল আর বেঙ্কটরামানি, সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা থেকে শুরু করে কপিল সিব্বল, অভিষেক মনু সিংভি, কে সি বেণুগোপালের মত প্রবীণ আইনজীবীরা৷

কপিল সিব্বল জানান, তাঁর ৫২ বছরের আইনজীবী জীবনে তিনি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়ের মতো কোনও বিচারপতি দেখেননি।

গোটা এজলাসকে হাসিয়ে অভিষেক মনু সিংভি বলেন, ”আপনার তারুণ্যের রহস্য কি? বিদায় বেলায় এটা অন্তত বলে যান৷” অভিষেক সিংভির কথার সূত্র ধরে পরবর্তী প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খান্না বলেন, ”বিচারপতি চন্দ্রচূড়ের তারুণ্যের রহস্য নিয়ে দেশের পাশাপাশি বিদেশেও প্রবল কৌতুহল আছে৷ একবার অষ্ট্রেলিয়াতে আমাকে লোকজন ছেঁকে ধরে বিচারপতি চন্দ্রচূড়ের বয়স ও তারুণ্য নিয়ে প্রশ্ন তুলে বিপাকে ফেলে দিয়েছিল প্রায়৷” এই কথোপকথনে হেসে ওঠে গোটা এজলাস৷

বিদায়লগ্নে প্রতিদিনের মতোই সবাইকে হাতজোড় করে নমস্কার করে শেষবারের মতো এজলাস ছাড়েন প্রধান বিচারপতি ধনঞ্জয় যশবন্ত চন্দ্রচূড়৷
