Wednesday, May 7, 2025
উৎপল সিনহা

মেয়েটি একটার পর একটা সিগারেট ধরায় । ফুঁকতে থাকে , টান দেয় , সুখটান , দুখটান । কখনো অনেকটা টেনে , কখনো বা একটুখানি টেনেই ছুঁড়ে ফেলে সিগারেট । আবার ধরায় নতুন একটা । আবার কিছুটা ধোঁয়া ফুসফুসে নিয়ে ফেলে দেয় অবহেলায় । তৎক্ষণাৎ আরেকটা ধরায় । কখন এত সিগারেট ফোঁকে মেয়েটি ? যখন তার প্রেমিকের সঙ্গে দেখা করতে আসে সে । প্রেমিকা ফুসুন । প্রেমিক কেমাল।

‘ দ্য মিউজিয়াম অফ ইনোসেন্স ‘ একটি উপন্যাস । এই উপন্যাসের জন্য নোবেল পুরস্কার পান তুর্কি লেখক ওরহান পামুক । এই উপন্যাসের নায়িকা ফুসুন যখন তার প্রেমিক কেমালের সঙ্গে দেখা করতে আসতো , একটার পর একটা সিগারেট ধরাতো ।

তখন প্রেমিক কেমাল কী করতো ? কেমালের কাজটা আরও অদ্ভুত । প্রেমিকার আধপোড়া লিপস্টিক মাখানো ফেলে দেওয়া সিগারেটের টুকরোগুলো কেমাল অতি গোপনে পরম মমতায় প্রতিদিন সংগ্রহ করে রাখতো প্রেমিকা চলে যাবার পর । ফুসুনের ফেলে যাওয়া সিগারেটের টুকরোগুলো এতো যত্ন করে নিজের সংগ্রহে রাখতো কেন কেমাল ? কারণ , কেমাল মনে করতো , প্রতিটি সিগারেটের টুকরোর মধ্যে তার প্রেমিকার উষ্ণ কোমল ঠোঁটের চাপের তারতম্যের হেতু , প্রেমিকার মেজাজ , স্মৃতি ও আসক্তি জড়িয়ে আছে । প্রেমিকার লালা ও লিপস্টিক মাখানো নানা আকারের সিগারেটের অবশিষ্টাংশগুলি তখন অত্যন্ত মহার্ঘ্য হয়ে উঠতো কেমালের কাছে । এগুলোর মধ্যে দিয়ে প্রেমিকা ফুসুনের বিভিন্ন দিনের ও বিভিন্ন সময়ের মনের হদিশ কিছুটা হলেও পাওয়া যেতো বৈকি ।

তার উদ্বেগ , তার উৎকণ্ঠা , তার ব্যথা-যন্ত্রণা , তার প্রসন্নতা ইত্যাদির চিহ্ন ধরা থাকতো ফেলে দেওয়া সিগারেটের ছোট-বড় অংশগুলোয় । প্রেমিকার বুকের হাপরে কোন বেদনার মায়া বুলিয়ে যেতো তাল তাল ধোঁয়া , তার কিছু হদিশ কি পেতো কেমাল ? পাক আর না পাক , আহা , তবু বেঁচে থাক এমন প্রেম !

এবার সরাসরি পাঠ করা যাক প্রেমিক কেমালের জবানবন্দী ।” কেসকিনে সান্ধ্য খাবার খেতে যাওয়ার আট বছরে , আমি ফুসুনের ফেলে দেওয়া ৪২১৩ টা সিগারেটের অবশিষ্টাংশ জোগাড় করতে পেরেছিলাম । এগুলোর প্রত্যেকটি তার গোলাপী ঠোঁট ছুঁয়েছিলো , আর তার মুখে প্রবেশ করেছিল , এমনকি কয়েকটি তার জিভ স্পর্শ করেছিল আর ভিজে গিয়েছিল । ও সিগারেট নিভিয়ে দেওয়ার পর আমি ফিল্টারে আঙুল রাখলে সেটা বুঝতে পারতাম । সিগারেটের অবশিষ্টগুলি , যা তার সুন্দর লিপস্টিকে লাল হয়ে যাওয়া , এমন কোনো মুহূর্তে তার ঠোঁটের অনন্য ছাপ বহন করছিল , যার স্মৃতি যন্ত্রণা অথবা পরম সুখের ছিল , যা এই অবশিষ্টগুলিকে অনন্য অন্তরঙ্গতার বস্তু করে তুলেছিল … ”

‘ দ্য মিউজিয়াম অফ ইনোসেন্স ‘ উপন্যাসটি পড়তে পড়তে কেমন যেন গুলিয়ে যায় বাস্তব আর অবাস্তবের সীমারেখা । ফেলে দেওয়া সিগারেটের অসংখ্য টুকরো থেকে কীভাবে ভেদ করা যেতে পারে নির্দিষ্ট কোনো একজনের মনের রহস্য , তা এক রোমাঞ্চকর অনুভূতি । এক অপার্থিব উপলব্ধি যেন । এ কি শুধুমাত্র এক প্রেমিকার মনের জটিল ওঠাপড়ার তথ্য অনুসন্ধান মাত্র ? এ কি ভালোবাসার অতলে তলিয়ে যাওয়ার ছবি নয় ? এ কি টুকরো করে কাছি , প্রেমিকার খোলা হাওয়া পালে লাগিয়ে পাগল প্রেমিকের ডুবতে রাজি হওয়ার অনির্বাণ গান নয় ?

একি স্বপ্ন , একি মায়া ! আর কখন একাকার হয়ে যায় বাস্তব – অবাস্তব – পরাবাস্তব ? এ প্রসঙ্গে গৌতম মিত্র লিখেছেন , ” লেখক নিজেই যদি এমন ভালোবাসায় না ডুবতে পারেন তবে তাঁর সৃষ্ট চরিত্রকে কীভাবে আকণ্ঠ ভালোবাসায় ডোবাবেন ? কাউকে ভালোবাসলে এভাবেই তো দুকূল ছাপানো লাগামহীন উদ্দাম ভালোবাসতে হয় , যাতে বাস্তব ও অবাস্তবের মাঝখানে কোনো কাঁটাতার না থাকে ” ।
জয় কেমাল । জয় ফুসুন ।
জয় ওরহান পামুক ।

আরও পড়ুন- স্বচ্ছতা আনতে কড়া পদক্ষেপ কমিশনের! এবার সেট পরীক্ষার পরীক্ষার্থীদের এডমিটে থাকছে কিউআর

 

Related articles

রাতেই POK-তে হামলা, বুধের সকালে দেশজুড়ে অসামরিক মহড়া 

কাশ্মীরের পহেলগামে জঙ্গি হামলার প্রায় দু সপ্তাহ পর মঙ্গলবার মধ্যরাতে পাক অধিকৃত কাশ্মীরে হামলা চালালো ভারত (Indian Army...

আজ শীর্ষ আদালতে DA মামলার শুনানি, সুপ্রিম রায়ে নজর সরকারি কর্মচারীদের

আজ দেশের শীর্ষ আদালতে (Supreme Court) পশ্চিমবঙ্গ সরকারি কর্মচারীদের ডিএ মামলার শুনানি। গত বাজেটে রাজ্য সরকার (Government of...

লস্করের হেডকোয়ার্টার গুঁড়িয়ে দিল ভারত, ‘মোক্ষম জবাব’ সোশ্যাল মিডিয়ায় দাবি ভারতীয় সেনার

মধ্যরাতে পাকিস্তান এবং পাক অধিকৃত কাশ্মীরের ৯ জায়গায় ভারতীয় সেনার প্রিসিশন স্ট্রাইক (Precision Strike)। পহেলগাম হামলার (Pahelgam Attack...

‘অপারেশন সিন্দুর’কে ‘লজ্জা’ দাবি ট্রাম্পের! কথা ডোভাল-রুবিওর

ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক নিয়ে সাম্প্রতিককালে পাকিস্তানের দোষ ঢাকার চেষ্টা দেখা গিয়েছে মার্কিন রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্পের (Donald Trump) মুখে। পহেলগাম...
Exit mobile version