বাংলাদেশে সনাতন হিন্দুদের উপর ধারাবাহিক নির্যাতনের ঘটনায় উত্তপ্ত পরিস্থিতি বাংলাদেশে। তার রেশ আছড়ে পড়ল এবার শহর কলকাতাতেও।বাংলাদেশে হিন্দুদের ওপর হামলার প্রতিবাদ ও ইসকনের সন্ন্যাসী চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের মুক্তির দাবিতে কলকাতার রাজপথে একাধিক হিন্দু সংগঠন। এ প্রসঙ্গে তৃণমূল রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ বলেন, বাংলাদেশের ঘটনা একটি স্পর্শকাতর বিষয়। যা ঘটেছে তা কাম্য নয়। বিষয়টি আন্তর্জাতিক। যা বলার কেন্দ্রের তরফেই বলা হবে। আমাদের নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, সেনাপতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বিষয়টি নিয়ে মন্তব্য করেছেন। বাংলাদেশের বিষয়টি নিয়ে একটি সংগঠনের তরফে বৃহস্পতিবার যে মিছিল করা হলো এটা তো ঠিক, যে শুধুমাত্র গেরুয়া পড়লেই হিন্দু হওয়া যায় না। তার স্পষ্ট কথা, ৪০ জনের মিছিলে ৬ জন গেরুয়াধারীকে রেখে দিলে সেটা হিন্দু ধর্মের মিছিল হয়ে যায় না। এটা বিজেপি এবং তার সমর্থকদের একটা বিশৃঙ্খল মিছিল। বাংলাদেশের স্পর্শকাতর বিষয়ের গুরুত্বটাকে নষ্ট করে দিচ্ছে। সন্ন্যাসীদের মিছিলে কখনোও ‘তালে তালে জুতো মারো’ এরকম স্লোগান উঠতে পারে?প্রশ্ন কুণালের। মিছিলের নামে উগ্রতা। আমরা এই উগ্রতার বিরোধী।

যদিও বাংলাদেশের পাশাপাশি, ইসকনের কলকাতার সদর দফতর থেকেও বৃহস্পতিবার চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে বহিষ্কার করা হয়েছে। তার আনন্দোলনের সঙ্গে যে ইসকনের কোনও সম্পর্ক নেই, তা স্পষ্ট জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।এই পরিস্থিতিতে এদিন শিয়ালদা থেকে আচার্য জগদীশচন্দ্র বসু রোড ধরে বাংলাদেশ ডেপুটি হাই কমিশনের কাছাকাছি মিছিল পৌঁছতেই ধুন্ধুমার পরিস্থিতি তৈরি হয়। ভাঙা হয় পুলিশের ব্যারিকেড। আহত হন এক পুলিশকর্মী। বৃহস্পতিবার বেকবাগানের কাছে পুলিশ মিছিল আটকাতে ব্যারিকেড দিয়ে দেয়। এদিকে মিছিলে অংশগ্রহণকারীরা ব্যারিকেড ভেঙে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন।এরপরই বঙ্গীয় হিন্দু জাগরণের সদস্যদের সঙ্গে পুলিশের প্রথমে বচসা, তারপর ধস্তাধস্তি শুরু হয়ে যায়। তাতেই এক পুলিশকর্মী আহত হন। ব্যারিকেডের নীচে চাপা পড়ে আহত হন বেশ কয়েকজন। শেষ পাওয়া খবর অনুযায়ী, প্রথম ব্যারিকেড ভেঙে এগিয়ে যান বিক্ষোভকারীরা। মিছিল থেকেই হিন্দু নির্যাতনের বিরুদ্ধে উঠছে মুহুর্মুহু স্লোগান।

প্রসঙ্গত, কোটা বিরোধী আন্দোলনের জেরে চলতি বছরের এপ্রিল থেকে অস্থির পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে বাংলাদেশে। আন্দোলনের জেরে গত অগস্টে দেশ ছাড়তে বাধ্য হন বাংলাদেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।তিনি এখনও ভারতে আছেন। এরপরই বাংলাদেশে গঠিত হয় ইউনুসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বতী সরকার। সেই সরকারের বিরুদ্ধেই সেদেশের হিন্দুদের ওপর অত্যাচারে অভিযোগ উঠেছে।সম্প্রতি বাংলাদেশের সনাতন জাগরণ মঞ্চের অন্যতম মুখ সন্ন্যাসী চিন্ময়কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীকে গ্রেফতার করেছে ইউনুসের সরকার। এরপর থেকেই বিভিন্ন মহল থেকে বাংলাদেশের সরকারের প্রতি হিন্দুদের ওপর অত্যাচারের জোরাল অভিযোগ সামনে এসেছে।

এদিন প্রতিবাদে নেমেছে কলকাতার ইসকন কর্তৃপক্ষও। বৃহস্পতিবার বিকেলে আলবার্ট রোডে কীর্তনের মধ্যে দিয়ে প্রতিবাদ জানান ভক্তরা। ইসকনের ভাইস প্রেসিডেন্ট রাধারমণ দাস এদিন বাংলাদেশের পুলিশ ও সেনার ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন।এখনই ইসকনের কার্যকলাপে হস্তক্ষেপ করবে না বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছে বাংলাদেশ হাইকোর্ট। তাতে কিছুটা স্বস্তির পরিবেশ ফিরলেও চরম আতঙ্কিত সেখানকার ভক্তরা। কলকাতা ইসকন কর্তৃপক্ষের তরফে এনিয়ে চরম উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন ভাইস প্রেসিডেন্ট রাধারমন দাস।
