Saturday, August 23, 2025

‘জ্যাকসনের শেষ দিন’, উৎপল সিনহার কলম

Date:

Share post:

উৎপল সিনহা

জীবনেরে কে রাখিতে পারে

আকাশের প্রতি তারা

ডাকিছে তাহারে …

শোনা যায় , দেড়শো বছর বাঁচতে চেয়েছিলেন তিনি । অথচ মারা গেলেন মাত্র ৫০ বছর বয়সে । একাধিকবার প্লাস্টিক সার্জারি করিয়ে নিজের চেহারাটাই সম্পূর্ণ বদলে ফেলেছিলেন। গান তো ছিলই , সঙ্গে নাচ ।

সবটাই অভিনব । অদ্ভুত সব বিষয় । আশ্চর্য সব আইডিয়া । চমকের পর চমক । তার ব্যতিক্রম হয় নি মৃত্যুতেও । আধুনিক প্রযুক্তি ও টেকনোলজি কাজে লাগিয়ে আলো আঁধারির মায়ায় নিপুণ বাজিগরের দক্ষতায় যে সমস্ত অসামান্য কোরিওগ্রাফি বারবার তিনি উপস্থাপনা করে গেছেন বিশ্বজুড়ে , তা আজও আপামর সংস্কৃতিপ্রেমীদের বিস্ময় । মহাশিল্পী মাইকেল জ্যাকসন এখনও বেঁচে আছেন তাঁর একনিষ্ঠ অসংখ্য ভক্তদের হৃদয়ে । তাঁর ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে কৌতুহলের শেষ ছিল না ।তাঁর মৃত্যুও রয়ে গেছে রহস্যে ঢাকা । এত জনপ্রিয় , এত উঁচুমাপের একজন স্রষ্টার জীবনের শেষটা রয়ে গেল অন্ধকারাচ্ছন্ন ।

সারা পৃথিবী জুড়ে তাঁর ভক্তরা এখনও বিশ্বাস করেন তিনি মারা যান নি । তাঁদের বিশ্বাস , খ্যাতি ও স্টারডমের বিড়ম্বনায় , জীবনের চূড়ান্ত একঘেয়েমিতে অতিষ্ঠ হয়ে তিনি অন্য কোনো নির্জন দেশে চলে গেছেন অথবা কোথাও আত্মগোপন করে শান্তিতে জীবন কাটাচ্ছেন ।

তুমুল খ্যাতি ও জনপ্রিয়তা তাঁকে নিঃসঙ্গ করে দিয়েছিল। তবে তাঁর এই যাওয়া সাময়িক । ইচ্ছে হলেই তিনি একদিন আবার স্বমহিমায় ফিরে দেখা দেবেন ভক্তদের । কতদিন আর একা একা চোখের আড়াল কাটাবেন প্রিয় শিল্পী ?

সালটা ২০০৯ , তারিখ ২৫ জুন । সুদূর আমেরিকা থেকে একটা দুঃসংবাদ ছড়িয়ে পড়ে বিশ্বময় । মাইকেল জ্যাকসন আর নেই । পপ সাম্রাজ্যের একচ্ছত্র অধিশ্বর মাইকেলের মৃত্যুর খবরে থমকে যায় সাংস্কৃতিক বিশ্ব।

দীর্ঘমেয়াদে পেইনকিলার ওষুধের কারণেই কি এই অকাল মৃত্যু ? প্রথমে জানানো হয় , হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন তিনি । তারপর বলা হয় , ডেমারোল নামের একটি উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন ব্যথানাশক ইঞ্জেকশন নেওয়ার ফলেই তাঁর মৃত্যু হয় । বিশ্বজুড়ে প্রশ্ন ওঠে , তাহলে কি আত্মহত্যা করেছেন জ্যাকসন ? তাঁর মৃত্যুর জন্য তাঁর ব্যক্তিগত চিকিৎসক করনাড মুরকে দোষী সাব্যস্ত করে আদালত।

অনিচ্ছাকৃত হলেও ডাক্তারের গাফিলতিই পপস্টারের মৃত্যুর জন্য দায়ী বলে রায় দেয় আদালত । হত্যা নাকি আত্মহত্যা ? নাকি স্বেচ্ছায় অতিরিক্ত ওষুধ সেবন করে মৃত্যুকে ডেকে আনা ? এ বিতর্ক আজও রয়ে গেছে। তাঁর মৃত্যুর ১৫ বছর পরেও । নাচগানের বাইরে তাঁর যৌনজীবন নিয়েও নানা গুঞ্জন ছিল বিশ্বজুড়ে ।

নানা যৌন হয়রানির কারণে বারবার খবরের শিরোনামে এসেছেন জ্যাকসন । মৃত্যুতেও গুঞ্জন থেকে রেহাই পেলেন না । অবিস্মরণীয় এই শিল্পীর জীবনযাপন এবং মৃত্যু নিয়ে নানা মুনির নানা মত । তাঁর খুব ঘনিষ্ঠ কয়েকজনের মতে , মাইকেল মাদকাসক্ত ছিলেন । তাঁর আচরণ ঘন ঘন পাল্টে যেতো। তাঁর মৃত্যুভয় ছিল সাংঘাতিক । সবসময় ভাবতেন যে কোনো সময় তিনি খুন হয়ে যেতে পারেন । কাউকেই খুব একটা বিশ্বাস করতেন না । এমনকি তাঁর বিশ্বস্ত দেহরক্ষীরাও তাঁকে হত্যা করতে পারে যে কোনো দিন , যে কোনো সময় , এমনও ভাবতেন তিনি এবং আতঙ্কে থাকতেন । এই দুশ্চিন্তায় প্রায়ই সারারাত ঘুমোতে পারতেন না । অথচ বাঁচতে চেয়েছিলেন ১৫০ বছর !

কিছু একটা ঘটতে চলেছে এবং সেটা ঘটবে খুব শিগগিরই । আর সেটা ভয়ঙ্কর কিছু । এমন কথা প্রায়ই বলতেন জ্যাকসন । সবসময় একটা ঘোরের মধ্যে থাকতেন । একটা অজানা ভয় , একটা তীব্র আতঙ্ক তাঁকে তাড়া করে বেড়াতো প্রতিনিয়ত । খ্যাতি , সম্মান ও জনপ্রিয়তা তিনি অনেকের চেয়ে অনেক বেশি অর্জন করেছিলেন তাঁর পঞ্চাশ বছরের বর্ণময় ও বিতর্কিত জীবনে । অথচ শেষটা হলো অস্বাভাবিক ।

জ্যাকসনকে স্ট্যাপলস সেন্টারে একটি অভিজাত তারকাখচিত স্মৃতিসৌধে শোয়ানো হয় । যিনি জীবনের শেষদিনগুলিতে বলতেন , ‘ আমি খুব ক্লান্ত , আমার খুব ঘুম পায় , আমি অনেকক্ষন ঘুমোতে চাই ‘ , তিনি শেষ পর্যন্ত ঘুমিয়েই পড়লেন , চলেও গেলেন চির বিশ্রামে , তবে বড়ো অকালে । তাঁর শরীরে নাকি পাওয়া যায় অ্যানেস্থেটিক প্রপোফোল , যা প্রাণঘাতী । শেষ মুহূর্তে তাঁর কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হয় । তিনি শ্বাস নিতে পারছিলেন না । ‘ গোটা দুনিয়া শান্তিতে ঘুমোয় কিন্তু আমার কেন ঘুম আসে না ‘ , এই অভিযোগ তুলে তিনি নাকি তাঁর বিশ্বস্ত ডাক্তারদের চাপ দিতেন তাঁকে কড়া ডোজের ঘুমের ওষুধ দেওয়ার জন্য । সেই আপাত শান্তির ওষুধগুলোই যে তাঁকে চিরঘুমের দিকে ঠেলে দিচ্ছে তা সম্ভবত অনুমান করতে পারেন নি বিশ্ববরেণ্য মাইকেল জ্যাকসন ।

আরও পড়ুন- দুই নৌকায় পা নীতি কানাডার, অর্শকে জামিন দিয়ে খালিস্তানি বিক্ষোভ বন্ধে পদক্ষেপ

 

spot_img

Related articles

সঠিক পরিকল্পনাই ডায়মন্ডহারবারের সাফল্যের চাবিকাঠি, মনে করছেন আকাশ বন্দ্যোপাধ্যায়

মাত্র তিন বছরের ক্লাব। কিন্তু কী অসাধারণ সাফল্য। কলকাতা লিগ, আইলিগ থ্রি থেকে আইলিগ টু জিতে এবার আইলিগের...

অসংগঠিত শ্রমিক-ক্ষেত্রে পথ দেখাচ্ছে বাংলা: সাহায্য পেলেন ৭২০ শ্রমিক

একের পর এক নতুন প্রকল্প, অসংগঠিত শ্রমিকদের দাবিদাওয়া নিয়ে লাগাতার আলোচনা, তাঁদের পরিবারের প্রতি নজর রাখার ব্যাপারে তৎপর...

প্রাপ্য চায় বাংলা, উপহার না: মোদিকে জবাব তৃণমূলের

বাংলার মানুষ উপহার চায় না, প্রাপ্য চায়। উপহার দিয়ে বাংলার মানুষকে অপমান করবেন না। বাংলায় বরাদ্দ নিয়ে শুক্রবার...

অনুপ্রবেশ ঠেকাতে ব্যর্থ শাহ, শাক দিয়ে মাছ ঢাকার চেষ্টা মোদির: কটাক্ষ তৃণমূলের

অনুপ্রবেশ ইস্যুকে বার বার জাগিয়ে তুলে কেন্দ্রের বিজেপি সরকার আদতে নিজেদের ভুল নিজেরাই চোখ আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়।...