বিনা প্ররোচনায় ভারতীয় জাতীয় পতাকার অবমাননা বাংলাদেশে। ভারতের সম্পর্কে ভালো কথা বলায় হামলার শিকার মহিলা সাংবাদিক। সেই আক্রান্তকে উদ্ধারের বদলে তাঁকেই গ্রেফতার করে বাংলাদেশ পুলিশ। এরপরই ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে বাংলাদেশ বিরোধী আওয়াজ উঠতে থাকে। তবে ত্রিপুরার (Tripura) রাজধানীতে বাংলাদেশ ডেপুটি হাই কমিশনার দফতরের (Dy High Commissioner Department) বাইরে হামলা চালানো হলে বিদেশ মন্ত্রকের তরফে তার নিন্দা করা হয়। যদিও প্রতিহিংসা পরায়ন প্রতিবেশী দেশ থেমে থাকেনি। মঙ্গলবার বাংলাদেশ বিদেশমন্ত্রক তলব করল ভারতীয় হাই কমিশনার (High Commissioner) প্রণয় ভর্মাকে (Pranay Verma)।

সোমবার আগরতলায় (Agartala) বিক্ষোভ দেখায় সনাতন ধর্মাবলম্বী সংগঠন। সেই বিক্ষোভ থেকে বাংলাদেশ হাই কমিশনারের দফতরে হামলা চালানোর অভিযোগ। এই ঘটনার পরই ভারতের বিদেশমন্ত্রকের (MEA) তরফ থেকে বিবৃতি প্রকাশ করে জানানো হয় ভারত এই ধরনের হামলা কোনওভাবেই সমর্থন করে না। হাই কমিশনার (High Commissioner) দফতর ও দূতাবাসের (Embassy) নিরাপত্তা বাড়ানোর প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয় বিদেশ মন্ত্রকের তরফে। ত্রিপুরা সরকার (Tripura Govt) এই ঘটনায় কর্তব্যে গাফিলতির অভিযোগে তিন আধিকারিককে সাসপেন্ড করে। এছাড়াও অ্যাসিস্ট্যান্ট কমান্ডান্টকে পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। সাতজন বিক্ষোভকারীকে আটকও করা হয়।

যদিও এরপরেও চুপ থাকেনি বাংলাদেশ। পর্যাপ্ত নিরাপত্তার প্রতিশ্রুতির পরেও আগরতলায় বাংলাদেশ ডেপুটি হাই কমিশনারের দফতর (Dy High Commissioner Office) বন্ধই করে দিল বাংলাদেশ সরকার। মঙ্গলবার দফতরে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানিয়ে দেওয়া হয় দফতরে কোনও ভিসা দেওয়া নেওয়ার কাজ অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ থাকবে। তবে এরপরেও ভারতে জারি বাংলাদেশ বিরোধী বিক্ষোভ। শিলিগুড়িতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান মহম্মদ ইউনুসের (Mohammed Yunus) ছবি মাটিতে ফেলে তাতে অবমাননার নির্দেশ দেখা যায় মঙ্গলবার সকালে। যেভাবে ভারতের পতাকার অবমাননা হয়েছিল, কার্যত সেই ঢঙে ইউনুসের অবমাননা দেখা যায়। যদিও রাজ্য পুলিশ দ্রুত সেই পোস্টার (poster) সরিয়ে দেয়।

তবে বাংলাদেশের তরফ থেকে যে দুইদেশের মধ্যে সৌহার্দ্র বজায় রাখা হবে না, তা স্পষ্ট করে দিল ইউনুস সরকার। ভারতের বিদেশমন্ত্রক (MEA) পর্যাপ্ত পদক্ষেপের প্রতিশ্রুতি দিলেও মঙ্গলবার ডেকে পাঠানো হল ভারতের হাই কমিশনার প্রণয় ভার্মাকে (Pranay Verma)। এরপরই প্রতিবেশী দেশে শান্তি ফিরিয়ে আনতে ফের কেন্দ্র সরকারকে দ্রুত কড়া পদক্ষেপের দাবি জানানো হয় রাজ্যের শাসক দলের পক্ষ থেকে। রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ প্রশ্ন তোলেন, কেন্দ্রীয় সরকার কেন এখনও নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করছে। রাজ্য এই আন্তর্জাতিক ইস্যুতে কেন্দ্রের সরকারকে সবদিক থেকে সমর্থন জানাবে। কিন্তু কেন্দ্র সরকার নীরব হয়ে বসে থেকে বাংলাদেশের ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের মার খাওয়া ভোটের হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহার করছে। বাংলাদেশের সংখ্যালঘুদের মার খাওয়াকে বাংলার বিজেপি নেতারা ভোটের হাতিয়ার করছেন, অভিযোগ কুণালের।


বাংলাদেশ বিদেশ মন্ত্রক ভারতীয় হাই কমিশনারকে তলব করে সম্মানহানির মতো পথে গেলেও এখনও ভারত বাংলাদেশের প্রতি সৌহার্দ্রপূর্ণ অবস্থানেই রয়েছে তা স্পষ্ট করে দেন বাংলাদেশে নিযুক্ত হাই কমিশনার প্রণয় ভর্মা। বিদেশ মন্ত্রকের সঙ্গে সাক্ষাতের পরে তিনি দাবি করেন, সম্প্রতি কয়েকমাসে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক বিভিন্ন ক্ষেত্রে এগিয়েছে যার মধ্যে বাণিজ্য, বিদ্যুৎ বা নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য রয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গেও সব ধরনের সহযোগিতা করার জন্য প্রস্তুত ভারত সরকার। একটি মাত্র ঘটনায় সেই সম্পর্কে কোনও প্রভাব পড়বে না বলেই দাবি হাই কমিশনারের।
