‘ফ্রাঙ্কেনস্টাইন’, উৎপল সিনহার কলম

উৎপল সিনহা

ছিল ইঁদুর , হয়ে গেলো বিড়াল । ছিল বিড়াল , হয়ে গেলো কুকুর । ছিল কুকুর , হয়ে গেলো বাঘ । এ সবই সম্ভব হলো তপস্বীর দয়ায় । শেষে বাঘ যখন তার স্রষ্টা তপস্বীকে হত্যা করতে উদ্যত হলো তখন তপস্বী বললেন ,’ আবার তুই ইঁদুর হ ‘ । তৎক্ষণাৎ বাঘ রূপান্তরিত হলো ইঁদুরে । বেঁচে গেলেন স্রষ্টা ।

এক্ষেত্রে বেঁচে গেলেও ফ্রাঙ্কেনস্টাইনের স্রষ্টা কিন্তু নিহত হয়েছিলেন তাঁর সৃষ্ট দানবের হাতেই ।’ এখন কেঁদেকেটে কী লাভ ? ও তো তোমারই হাতে গড়া ফ্রাঙ্কেনস্টাইন ‘ , অথবা ‘ সাবধান , এখনও সময় আছে , ফ্রাঙ্কেনস্টাইন বানানো থেকে বিরত হও , নইলে ওরই হাতে একদিন বধ হবে তুমি … ‘ ; এমন সব কথা আধুনিক নাগরিক সমাজে হামেশাই শোনা যায় । এই সাবধানবাণী কেউ মানে , কেউ মানে না । অনেকেই বলেন , ফ্রাঙ্কেনস্টাইন বানানো সাংঘাতিক ভুল , কোনো স্বার্থেই বানানো উচিত নয় । তবুও অনেকেই নানা স্বার্থে এর অন্যথা করেন এবং পরে কৃতকর্মের জন্য অনুতপ্ত হন । আবার অনেকে অনুতপ্ত হবার সুযোগ পর্যন্ত পান না ।

কিন্তু , ফ্রাঙ্কেনস্টাইন ব্যাপারটা কী ? আসলে এটা একটা জার্মান শব্দ । ‘ Frank ‘ মূলত জার্মানির একটি উপজাতির নাম , আর ‘ Stein ‘ অর্থ পাথর । ফ্রাঙ্কেনস্টাইন নামে একটি ক্যাসেল রয়েছে জার্মানিতে ।

মেরি শেলী রচিত উপন্যাসের একটি বিখ্যাত চরিত্র ফ্রাঙ্কেনস্টাইন । উপন্যাসের নাম ‘ ফ্রাঙ্কেনস্টাইন ; অর দ্য মডার্ন প্রমিথিউস ‘ । এক জার্মান গবেষক , যাঁর নাম ফ্রাঙ্কেনস্টাইন , নিরলস গবেষণার মাধ্যমে একটি বিশেষ ধরনের বিজ্ঞান আয়ত্ব করতে সমর্থ হন , যার দ্বারা মৃত ব্যক্তির মধ্যে প্রাণ সঞ্চার সম্ভব । তিনি তাঁর এই পরীক্ষাটি এক মৃত ব্যক্তির উপর করলে সেই মৃত ব্যক্তি বেঁচে ওঠে , কিন্তু পরিণত হয় এক ভয়ঙ্কর দানবে । প্রচণ্ড শক্তিশালী এই দানবটা দেখতে কুৎসিত । ভয় পেয়ে ফ্রাঙ্কেনস্টাইন এই দানবের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করলে দানবটা হয়ে ওঠে হিংস্র ও প্রতিশোধপরায়ণ । সে বনে গিয়ে আশ্রয় নেয় । তার প্রতিশোধ সে নিতে শুরু করে ফ্রাঙ্কেনস্টাইনের সহকারী ডক্টর নীল এবং একজন আয়াকে হত্যার মাধ্যমে । এরপর সে হত্যা করে তার সৃষ্টিকর্তার ভাইকে । তারপর শতশত সাধারণ মানুষকে হত্যা করতে থাকে । তার স্রষ্টার বিয়ের রাতে সে হত্যা করে তাঁর স্ত্রী ও পরিবারের সকলকে । শেষে হত্যা করে ফ্রাঙ্কেনস্টাইনকে । হায় স্রষ্টা!

এরপর সেই সাংঘাতিক দানব আত্মহত্যার চেষ্টা করে । তারপর একদিন উধাও হয়ে যায় । আর কোথাও তার সন্ধান পাওয়া যায় না । ১৮১৮ সালে লেখা এই বিখ্যাত উপন্যাস । উচ্চাকাঙ্ক্ষা , সৃষ্টি এবং ধ্বংসাত্মক পরিণতির কাহিনি।

ঝড়বৃষ্টির এক গভীর রাতে মরদেহে প্রাণ সঞ্চার হয়েছে , বিশাল তার দেহ , ঘোলাটে হলুদ চোখ , অশুভ ইঙ্গিত যেন তার গোটা চেহারায় , বিভৎস সেই শরীর নিয়ে ধেয়ে আসছে যেন এক দানব নিরীহ বিজ্ঞানীর দিকে … ,এমনই এক অদ্ভুত স্বপ্ন দেখেছিলেন মেরি শেলী ।

আজ থেকে ২০০ বছর আগে। তারই পরিণতিতে সৃষ্টি হয় বিশ্বের প্রথম সায়েন্স ফিকশন ‘ ফ্রাঙ্কেনস্টাইন ‘ । মাত্র ১৯ বছর বয়সী এক তরুণী মেরি শেলী-র মাথায় এমন এক অভূতপূর্ব আইডিয়া কীভাবে এসেছিল তা বেশ রহস্যময় । ১৮১৬ সালে গ্রীষ্মের ছুটিতে সুইজারল্যান্ডে অবসর যাপনের সময় তিনি মন দেন সাহিত্যচর্চায় । এই সময় মেরি ও তাঁর স্বামী পার্সি বিশি শেলী , কবি লর্ড বায়রন এবং ডাক্তার জন পলিডরি বেশ মজার এক বাজি ধরেন । কে কত ভালো ভূতের গল্প লিখতে পারেন তা নিয়েই বাজি । এই ভুতুড়ে গল্পের প্লট নিয়ে ভাবতে ভাবতেই ঘুমিয়ে পড়েন মেরি এবং অদ্ভুত স্বপ্নটি দেখেন । মেরি শেলী বাজিটি জেতেন । এরপর সৃষ্টি হয় ‘ ফ্রাঙ্কেনস্টাইন ‘ ।

আরও পড়ুন- কতটা গুরুতর বুমরাহর চোট ? মুখ খুললেন দলের বোলিং কোচ ?