সমবায় ভোটে (cooperative election) হেরে খুনের রাজনীতি শুরু করল বিজেপি (BJP)। নৃশংসভাবে পিটিয়ে ও কুপিয়ে খুন (murder) করা হল তৃণমূল (TMC) কর্মীকে। রবিবার সমবায় ভোটের ফলাফল প্রকাশের আগে থেকেই শুরু হয়েছিল হিংসা। বিজেপি পরাজয়ের পর সেই হিংসায় প্রাণ গেল তৃণমূল কর্মী বিষ্ণুপদ মণ্ডলের। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে উত্তপ্ত নন্দীগ্রাম। দফায় দফায় বিক্ষোভ চালাচ্ছেন তৃণমূল কর্মী-সমর্থকরা। প্রতিবাদে ছড়িয়ে পড়ে রাস্তায়। দফায় দফায় পথ অবরোধ করা হয়।

এই ঘটনায় অভিযোগের তির বিজেপির দিকে। অভিযোগ, রবিবার রাতে নন্দীগ্রাম এক নম্বর ব্লকের ৭ নম্বর জলপাই গ্রামে বিজেপি কর্মীদের সশস্ত্র বাহিনী চড়াও হয় এলাকা তৃণমূল কর্মী বিষ্ণুপদ মণ্ডলের বাড়িতে। বাড়ি থেকে টেনে এনে ভোজালি দিয়ে কোপানো হয় তাঁকে। বেধড়ক মারধর করা হয় বিষ্ণুর দাদা গুরুপদ মণ্ডলকেও। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় বিষ্ণুপদর। গুরুতর জখম গুরুপদকে ভর্তি করা হয় নন্দীগ্রাম সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে।
রবিবার তমলুক কো-অপারেটিভ এগ্রিকালচার অ্যান্ড রুরাল ডেভেলপমেন্ট ব্যাঙ্কের ভোটে ৫৭৩ ফলে হারে বিজেপি। শুধু নন্দীগ্রামে বোমাবাজি করে সন্ত্রাস করে জয় পায়। বাকি সর্বোচ্চ গোহারা হয় বিজেপি। নন্দীগ্রাম এক নম্বর ব্লকের কাঞ্চননগর হাইস্কুলে ভোটগ্রহণ কেন্দ্রে বোমাবাজির ঘটনা ঘটে। উত্তেজনার পরিবেশ ছিল নন্দীগ্রামে। ভোটে হারার পর সেই উত্তেজনার পারদ আরও ছড়িয়ে পড়ে। শুধুমাত্র নন্দীগ্রাম এক এবং দুই নম্বর ব্লকে বিজেপি ১৩টি আসনে জয়ী হয়। সেই জয়ের দম্ভ পর্যবসিত হয় ভোট পরবর্তী প্রতিহিংসায়। আর সেই তাণ্ডবের শিকার হন নন্দীগ্রাম এক নম্বর ব্লকের ৭ নম্বর জলপাই গ্রামের তৃণমূল কর্মী বিষ্ণুপদ মণ্ডল। সোমবার সকাল থেকে দফায় দফায় প্রতিবাদ মিছিল চলছে নন্দীগ্রামে। নন্দীগ্রামের গড়চক্রবেড়িয়া, সোনাচূড়া, হাজরাকাটা-সহ বিভিন্ন জায়গায় পথ অবরোধ করে তৃণমূল। নন্দীগ্রাম এক নম্বর ব্লক তৃণমূল কংগ্রেস কমিটির সহ-সভাপতি শেখ আল রাজি জানিয়েছেন, সামান্য সমবায় ব্যাঙ্ক শাখায় জয়ী হয়ে বিজেপির কর্মীরা ক্ষমতা জাহির করতে নন্দীগ্রামে বিভিন্ন জায়গায় তাণ্ডব শুরু করেছে। আমাদের সক্রিয় কর্মী বিষ্ণুপদ মণ্ডলকে খুন করেছে বিজেপি কর্মীরা। এই ঘটনায় এফআইআর দায়ের হয়েছে প্রশান্ত মণ্ডল,মানস সেন,দিব্যেন্দু দাস, রাজকুমার মণ্ডল-সহ বেশ কয়েকজন বিজেপি কর্মীর নামে। খুনিদের গ্রেফতার করে কঠিন শাস্তির দাবি করেছে তৃণমূল। স্থানীয় তৃণমূল কংগ্রেস কমিটির সভাপতি বাপ্পাদিত্য গর্গ বলেন, বিজেপি আশ্রিত দুষ্কৃতী ও খুনিরা নন্দীগ্রামের শান্ত পরিবেশকে অশান্ত করেছে। নন্দীগ্রামের মানুষ এবার হাড়ে হাড়ে বুঝতে বিজেপি একটা সাম্প্রদায়িক শক্তি ও খুনিদের দল। পঞ্চায়েত এবং লোকসভা ভোটে নন্দীগ্রাম ১ নম্বর ব্লকে বিজেপিকে কোণঠাসা করেছে তৃণমূল। সেটা ওরা মেনে নিতে পারছি না। সামান্য একটি কো-অপারেটিভ ব্যাঙ্কের নির্বাচনে জয়ী হয়ে তাই প্রতিহিংসার পথ ধরেছে। আগামী দিনে তার খেসারত দিতে হবে ওদের। বিজেপির তমলুক সাংগঠনিক জেলার সাধারণ সম্পাদক মেঘনাদ পাল জানান, এই খুনের ঘটনার সঙ্গে আমাদের কোনও কর্মী জড়িত নেই। পারিবারিক দ্বন্দ্বে এই খুন।
এই ঘটনায় ক্ষোভ উগড়ে দেন তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ। সোশ্যাল মিডিয়ায় তিনি লেখেন, নন্দীগ্রামে বিজেপির মদতপুষ্ট দুষ্কৃতীদের হামলায় খুন তৃণমূল কর্মী বিষ্ণুপদ মণ্ডল। বুথ সভাপতি গুরুপদ মণ্ডলের ভাই। ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ করি। সব দোষীকে গ্রেফতারের দাবি জানাই। বিজেপি যে হামলা করবে, সেই আশঙ্কা ছিল। পুলিশকে লিখিতভাবে জানানোও হয়েছিল। তারপরেও বড়সড় তাণ্ডব করেছে বিজেপি। একাধিক সাংবাদিকও জখম। দোষীদের ধরুক পুলিশ।


