শুধু বামনদেরই বাস এ গ্রামে! জানেন, সাড়ে তিনফুটের মানুষদের নিয়ে ‘বামন-গ্রাম’ প্রতিষ্ঠার সেই মজার কাহিনি

শুধু বামনদের নিয়ে গড়ে উঠেছে আস্ত একটি গ্রাম। আমাদের দেশেই রয়েছে ছোট্ট সেই গ্রাম, যা আদতে পরিচিত বামন-গ্রাম নামে। চিনের ইয়াংসির মতোই ভারতের বামন গ্রাম, যে গ্রামে বাস করেন শুধু বামন বা খর্বকায় মানুষেরা।

বিশ্বে অনেক বামন মানুষ রয়েছেন। কিন্তু শুধু বামনদের একটি গ্রাম, তা কল্পনারও বাইরে। কিন্তু সত্যি সত্যিই এমন গ্রাম রয়েছে, যেখানে বামন মানুষ বাস করেন শুধু। বর্তমানে ক্রমে বেড়েই চলেছে এই বামন গ্রামের বাসিন্দার সংখ্যা। নয় নয় করে এখন ১০০ ছুঁই ছুঁই বামন শ্রেণির মানুষ বসবাস করেন ভারতের অসম প্রদেশের এই গ্রামে। এই গ্রামের বিশেষত্ব হল, পারস্পরিক ভালোবাসা। উচ্চতা খাটো হলেও এ গ্রামের বাসিন্দাদের চিন্তা-চেতনা পাহাড়ের মতো উঁচু। তাঁরা মাথা উঁচু করে বাঁচতেই যে এ গ্রামে বাসা বেঁধেছেন।

অসম প্রদেশের এই গ্রামটি ভারত-ভুটান সীমান্ত লাগোয়া। গ্রামের নামটি ‘আমার’। নামটির মধ্যেও রয়েছে বিশেষত্ব। ‘আমার’ নামে এই গ্রামটি সীমান্তরেখার প্রায় তিন থেকে চার কিলোমিটার ভিতরে। এই গ্রামের বাসিন্দাদের কারও উচ্চতাই সাড়ে তিন ফুটের বেশি নয়। কেউ কেউ নিজের ইচ্ছায় এই গ্রামে এসে বসবাস করছেন, কাদেরও আবার বাড়ির সদস্যরা এ গ্রামে রেখে গিয়েছেন।

তবে তাঁরা সবাই সুখী। কোনও আক্ষেপ নেই, কারও বিরুদ্ধে কোনও নালিশ নেই। মাথা উঁচু করে বাঁচার তাগিদে তাঁরা অসম প্রদেশের বিরল এই গ্রামে এসেছেন। প্রতিষ্ঠা পেয়েছে গ্রাম। কিন্তু হঠাৎ বামনদের নিয়ে আলাদা গ্রাম গড়ে উঠলই বা কীভাবে? কেই-বা এই উদ্যোগ নিলেন? বামনদের প্রধান পবিত্র রাভা সমস্ত বামন শ্রেণির মানুষের সম্মান ও অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য গড়ে তুলেছিলেন বামন-গ্গাম।

পবিত্র রাভা একজন থিয়েটার শিল্পী। ন্যাশনাল স্কুল অফ ড্রামা থেকে পাস করা এই শিল্পী প্রতিষ্ঠান ছাড়ার পর বামন বা কম উচ্চতাসম্পন্ন মানুষদের জন্য এক সংকল্প নেন। তিনি চান, বামনরা সবাই সম্মান নিয়ে বাঁচুন। তাঁদের শিল্পী করার উদ্যোগেই প্রতিষ্ঠা এই গ্রামের। ‘আমার’ গ্রামটি প্রতিষ্ঠা হওয়ার পরও স্থানীয় লোকজন তা নিয়ে মজা করত। কিন্তু পবিত্র রাভা সে সব কানে না তুলে বামনদের উৎসাহিত করতেন। সবাইকে প্রশিক্ষণ দিয়ে দক্ষ শিল্পী করে তুলেছিলেন তিনি। তারপর বামন মানুষদের নিয়ে তৈরি করেছিলেন একটি নাট্যদল। সেই নাট্যদলের উপস্থাপনায় প্রশংসার বন্যা বয়েছে। তারপর এ গ্রামে আসতে শুরু করে দেশের অনেক বামন শ্রেণির মানুষ। এভাবেই তৈরি হয়ে যায় বামন গ্রাম।
এ গ্রামে সবাই মনের সুখে থাকেন। শিল্পকর্ম নিয়ে বাঁচেন। সম্মানের সঙ্গে বসবাস করেন। কেউ তাঁদের কোঁটা দেন না। উল্লেখ্য, চিনেও রয়েছে এ ধরনের বামন গ্রাম। চিনের সিচুয়ান প্রদেশে ইয়াংসি নামে অখ্যাত গ্রামটিকে নিয়ে বিজ্ঞানীরা গবেষণা করছেন। এ গ্রামে আবার সবাই বামন হিসেবেই জন্মগ্রহণ করেন।

আরও পড়ুন- চাপে পড়ে সুর বদল বিএনপি’র! বাংলাদেশের বাজার ‘আগুন’

—

 

—

 

—