আর জি কর-তদন্তে এখনই হস্তক্ষেপ নয়: মৃতার পরিবারের আর্জিতে জানাল হাই কোর্ট

আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে (RG Kar Medical College and Hospital) তরুণী চিকিৎসক-পড়ুয়ার ধর্ষণ-খুনের তদন্ত নিয়ে দায়ের হওয়া মামলায় হস্তক্ষেপ করল না কলকাতা হাই কোর্ট (Calcutta High Court)। ঘটনার নতুন করে CBI তদন্ত চেয়ে আদালতের দ্বারস্থ হন মৃতার বাবা। মঙ্গলবার শুনানিতে বিচারপতি তীর্থঙ্কর ঘোষ জানান, বর্তমানে উচ্চতর ২টি আদালতে এই মামলা বিচারাধীন। এখন একক বেঞ্চ তাতে হস্তক্ষেপ করলে বিচারবিভাগীয় শৃঙ্খলাভঙ্গ হবে। বিচারপতির কথায়, মামলার শুনানিতে অসুবিধা নেই। তবে, এই বিষয়ে হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির মত জানা প্রয়োজন। প্রধান বিচারপতি টি এস শিবজ্ঞানমের অনুমতি নিতে মামলারীর আইনজীবীকে নির্দেশ দিয়েছেন বিচারপতি ঘোষ। মামলার পরবর্তী শুনানি ১৫ জানুয়ারি।
আরও খবর: রেশন মামলায় আরও তিনজনকে গ্রেফতার ইডির 

মেয়ের ধর্ষণ-খুনের তদন্তে যে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাকে চেয়েছিলেন আর জি করের (RG Kar Medical College and Hospital) মৃতা ডাক্তার-পড়ুয়ার মা-বাবা। কিন্তু এবার সেই সিবিআই তদন্ত নিয়েই সন্দেহ প্রকাশ করে ফের আদালতের দ্বারস্থ হলেন তাঁরা। বৃহস্পতিবার, বাবা-মায়ের আবেদনের ভিত্তিতে বিচারপতি তীর্থঙ্কর ঘোষ ওই মামলা সংক্রান্ত নথি হাই কোর্টে পেশ করার নির্দেশ দেন সিবিআইকে। এই সেই মামলার শুনানি ছিল। সেখানে নির্যাতিতার পরিবারের আইনজীবী বলেন, “আমরা সবসময় চেয়েছি নিরপেক্ষ তদন্ত হোক। সুপ্রিম কোর্ট সিবিআইকে তদন্তের ভার দেয়। কিন্তু সুপ্রিম কোর্টের আগের দিনের শুনানিতে সিবিআই তদন্ত নিয়ে কোনও ইঙ্গিত নেই।” এর পাল্টা সিবিআইয়ের আইনজীবী জানান, তিনটি স্টেটাস রিপোর্ট জমা পড়েছে। হাই কোর্টে ৫ থেকে ৬টি স্ট্যাটাস রিপোর্ট আগেই জমা পড়েছে। সুপ্রিম কোর্টের নজরদারিতে তদন্ত চলছে কি না জানতে চান বিচারপতি ঘোষ। জবাবে নির্যাতিতার পরিবারের আইনজীবী দাবি করেন, সেটা হচ্ছে না। এর পরই এর ব্যাখ্যা চান বিচারপতি।

দুপক্ষের কথা শোনার পরে এখনই এই আবেদনে হস্তক্ষেপ করতে চাইল না হাই কোর্টের সিঙ্গল বেঞ্চ। বিচারপতি ঘোষের কথায়, সুপ্রিম নজরদারিতে তদন্ত চলছে কি না সেটা আগে আগে জানতে হবে। মৃতার পরিবারকে হাই কোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ অথবা সুপ্রিম কোর্টের ব্যাখ্যা নিয়ে আসার কথা বলা হয়েছে।

আর জি করের তরুণী চিকিৎসকের নৃশংস ধর্ষণ-খুনের ঘটনায় তদন্তে নেমে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে অভিযুক্তকে ধরে কলকাতা পুলিশ। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রথমে ফোনে ও পরে স্বয়ং গিয়ে দেখা করেন মৃতার পরিবারের সঙ্গে। সিআইডি তদন্তের জন্য এক সপ্তাহ সময় চান। কিন্তু তাতে ভরসা রাখেনি মৃতার পরিবার। তারা হাই কোর্টের দ্বারস্থ হয় সিবিআই তদন্তের আর্জি জানান। আদালত তার নির্দেশ দেয়। সেই মতো তদন্তভার যায় কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার হাতে। তারাও সেই সঞ্জয় রাইকেই মূল অভিযুক্ত বলে চার্জ গঠন করে, যাকে ধরে ছিল কলকাতা পুলিশ। এমনকী, তদন্তের ৯০দিন পরেও অপর দুই অভিযুক্ত আর জি করের প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষ ও টালা থানার প্রাক্তন ওসি অভিজিৎ মণ্ডলের বিরুদ্ধে চার্জশিট দিতে না পারায় তাঁরা এই মামলায় জামিন পান। অথচ রাজ্য ঘটা ধর্ষণ-খুনের একাধিক ঘটনায় অতি দ্রুত তদন্ত শেষ করে দোষীদের ফাঁসি সাজা দিইয়েছে রাজ্য পুলিশ। এর পর থেকে সিবিআই তদন্ত নিয়ে বিরক্ত প্রকাশ করেন মৃতার বা-বাবা। সিবিআই তদন্তে কোনও আস্থা নেই বলে এদিন চিকিৎসক তরুণীর ধর্ষণ খুনের ঘটনায় নতুন করে তদন্ত চেয়ে কলকাতা হাই কোর্টে (Calcutta High Court) মামলা দায়ের করে মৃতার পরিবার। তাদের কথায়, “বর্তমানে যে তদন্ত চলছে তাতে আস্থা নেই। তাই নতুন করে খুনের তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হোক।” তাদের অভিযোগ, “তদন্তের নামে তথ্যপ্রমাণ লোপাট হয়েছে। ইতিমধ্যেই ট্রায়াল শুরু হয়েছে। সাক্ষ্যগ্রহণ চলছে। এখনই আদালত হস্তক্ষেপ না করলে পরিস্থিতি হাতের বাইরে চলে যাবে।”