Saturday, August 23, 2025

মালা রায়

১ জানুয়ারি দিনটা এলেই মন কেমন করে ওঠে। ফিরে যাই ২৭ বছর আগের কতশত ঘটনাবহুল স্মৃতিতে। আজ আমি সাংসদ, কলকাতা কর্পোরেশনের (Kolkata Corporation) চেয়ারম্যান-সবই মমতাদির জন্য। কিন্তু একটা সময় শুধুই কাউন্সিলর ছিলাম। কলকাতা কর্পোরেশনের ৮৮ নং ওয়ার্ড থেকে সেই ১৯৯৫ সালে কাউন্সিলর হিসেবে যাত্রা শুরু। ১৯৯৮ সালে ১ জানুয়ারি নতুন দল হিসেবে রেজিস্ট্রেশন পায় তৃণমূল কংগ্রেস। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে (Mamata Banerjee) ভরসা করে তাঁর উপর আস্থা বিশ্বাস রেখে কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূল কংগ্রেসে পথচলা শুরু করি। তার আগে ১৯৯৭ সালের মার্চে ঘটে গিয়েছে বিখ্যাত সেই ইনডোর-আউটডোর মিটিং। তিতিবিরক্ত হয়ে ১৯৯৭-এর মার্চে কংগ্রেস (Congress) ছাড়লেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ওই বছর ৮ মার্চ নেতাজি ইনডোরে সীতারাম কেশরী কনফারেন্স করছেন। আর ওইদিন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে মেয়ো রোডে আউটডোর মিটিং করলাম আমরা। আমার এখনও মনে পড়ে, মমতাদির নির্দেশে আমার কাউন্সিলরের প্যাডে জিওসি ইস্টার্ন কম্যান্ড (ফোর্ট উইলিয়ম)-কে চিঠি লিখেছিলাম মিটিংয়ের অনুমতির জন্য। চিঠি পাঠিয়েছিলাম তৎকালীন পুলিশ কমিশনারকেও। মমতাদি বলেছিলেন, শুধু আমার নামটা লিখে পাঠাও, ওরা অনুমতি দিয়ে দেবে। বাস্তবে তাই হল। দু’জায়গা থেকে অনুমতি পেয়ে গেলাম। বিশাল মিটিং হল মেয়ো রোডে। সেদিন অজিত পাঁজা ইনডোর কনফারেন্স ছেড়ে হেঁটে এসে মেয়ো রোডে মমতাদির আউটডোর মিটিংয়ে যোগ দিলেন। এর কিছুদিন পরে সুব্রত বক্সিকে সভাপতি, সঞ্জয় বক্সি যুব সভাপতি এবং আমাকে তৃণমূল মহিলা কংগ্রেসের সভানেত্রী করে কমিটি করে দিলেন মমতাদি। ১৯৯৮-এর ১ জানুয়ারি রেজিস্ট্রেশন পেয়ে গেল তৃণমূল কংগ্রেস। বাংলার বুকে আত্মপ্রকাশ করল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নতুন দল। গোটা বাংলাজুড়ে সে কী উন্মাদনা! এখনও চোখের সামনে ভাসে সেসব দিন। এরপর শুরু হল অন্য লড়াই। সেসময় আমাদের সঙ্গে ছিল ১৬ জন কাউন্সিলর। কিন্তু এই সংখ্যা থাকলে দলত্যাগ আইনের গেরোয় পড়ে যাব। সে এক কঠিন সময়। নিয়মানুযায়ী অন্তত ২৩ জন কাউন্সিলর লাগবেই। শুরু হল খোঁজ। সেসময় কেউই প্রায় আনকোরা তৃণমূলের সঙ্গে আসতে রাজি হচ্ছিল না। অনেকেই বলেছিলেন প্রিয়রঞ্জন দাশমুন্সি, প্রণব মুখোপাধ্যায়ের মতো বড় বড় নেতারা দল ভেঙে বেরিয়ে গিয়ে কিছু করতে পারেননি। নতুন দল করে দাঁড় করাতে পারেননি। ব্যর্থ হয়েছেন। তৃণমূল কংগ্রেসও পারবে না টিকতে। কিন্তু মমতাদির একরোখা মনোভাব, সাহস, জেদ আর সিপিএমের বিরুদ্ধে অদম্য লড়াইয়ের শক্তি নিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে আমরা লড়ে গেলাম। আমাদের লড়াই শুরু হল। টালা থেকে টালিগঞ্জ ঘুরে ২৩ জন কাউন্সিলর পেয়ে গেলাম। সেসময় আমাদের সঙ্গে ছিলেন রুবি দত্ত, দিলীপ মজুমদাররা। কলকাতা কর্পোরেশনে তাঁদের সই করা চিঠি জমা পড়ল। কিন্তু তৎকালীন বিরোধী দলনেতা প্রদীপ ঘোষ চেয়ারম্যান পূর্ণেন্দু সেনগুপ্তকে বললেন, এগুলো জাল সই। এরা কেউ যোগ দেয়নি তৃণমূলে। এদের প্রমাণ করতে বলুন সশরীরে। এরপর মমতাদির নির্দেশে নিজাম প্যালেসে জড়ো হয়ে সেখান থেকে কর্পোরেশনে এসে সশরীরে সই করা হল। দলত্যাগ বিরোধী আইনের কবল থেকে আমরা বেঁচে গেলাম।

১৯৯৯ সালে তৃণমূলে এলেন সুব্রত মুখোপাধ্যায়। এবার লড়াই শুরু হল কর্পোরেশনে (Kolkata Corporation) বিরোধী দলনেতার (LoP) পদ নিয়ে। অন্তত ৩৭ জন কাউন্সিলর না থাকলে এই পদ পাওয়া যাবে না। শুরু হল নতুন লড়াই। পরে আড়াই মাস ধরে ঘুরে সবমিলিয়ে জোগাড় হল ৩৭ জন। এবারও তাদের সই করা চিঠি জমা পড়ল। একইভাবে অস্বীকার করা হল জাল সইয়ের তকমা দিয়ে। কর্পোরেশনে সশরীরে হাজিরার নির্দেশ দিলেন পূর্ণেন্দু সেনগুপ্ত। তখন মেয়র ছিলেন সিপিএমের প্রশান্ত চট্টোপাধ্যায়। ফের নিজাম প্যালেস, সেখান থেকে মিনিবাসে ৩৭ জন গেলাম কলকাতা কর্পোরেশনের। হাসিল করলাম বিরোধী দলনেতার পদ। মমতাদি বিরোধী দলনেতা করলেন ৮৬ নং ওয়ার্ড থেকে জিতে আসা দুর্গা মুখোপাধ্যায়কে। আর আমাকে করলেন চিফ হুইপ। এরপর ২০০০ সালের কলকাতা কর্পোরেশনের নির্বাচন চলে এল। হইহই করে আমরা জিতলাম। মেয়র হলেন সুব্রত মুখোপাধ্যায়। আমিও মেয়র পারিষদের দায়িত্ব পেলাম। একাধিক গুরুত্বপূর্ণ দফতর সামলেছি। যে চেয়ারম্যান আমাদের সশরীরে হাজির হওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন, এখন তাঁর সেই ঘরে আমি বসি। কারণ, মমতাদি আমাকে কর্পোরেশনের চেয়ারম্যান করেছেন।

আজও মনে পড়লে গায়ে কাঁটা দেয়। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে সিপিএমের অত্যাচারের বিরুদ্ধে চোখে চোখ রেখে লড়াই করে আমরা জয় ছিনিয়ে এনেছি। কলকাতা পুরসভার মতো কঠিন জায়গা থেকে বামেদের হঠাতে পেরেছি। এখনও মমতাদির নেতৃত্বে আমাদের লড়াই চলছে। দেশ থেকে সাম্প্রদায়িক শক্তিকে সম্পূর্ণ নির্মূল না করা পর্যন্ত এই লড়াই চলবে।

Related articles

ডেঙ্গি সংক্রমণ রুখতে তৎপর রাজ্য! জেলাগুলিকে একগুচ্ছ কড়া নির্দেশ মুখ্যসচিবের 

রাজ্যে ডেঙ্গি সংক্রমণ ক্রমশ বাড়তে থাকায় শনিবার নবান্নে জেলাশাসক ও স্বাস্থ্য দফতরের আধিকারিকদের নিয়ে জরুরি বৈঠকে বসেন মুখ্যসচিব...

দায় বেসরকারিকরণ নীতির! মোদিরাজে পাঁচ বছরে চাকরি হারিয়েছেন লক্ষাধিক কর্মী

মোদি সরকারের আমলে বিগত পাঁচ বছরে চাকরি হারিয়েছেন লক্ষাধিক সরকারি কর্মী। সম্প্রতি লোকসভায় এমনই চাঞ্চল্যকর তথ্য দিল কেন্দ্র।...

পুজোর আগে প্রায় দ্বিগুণ দুধ উৎপাদনে বাংলার ডেয়ারি 

কলকাতা এবং সংলগ্ন জেলাগুলিতে প্যাকেটজাত দুধের জোগান বাড়াতে রাজ্য সরকারি ব্র্যান্ড বাংলার ডেয়ারি বড় পদক্ষেপ নিতে চলেছে। পুজোর...

পিছনে দৌড়! স্নাতক স্তরে বৈদিক গণিত আনার চেষ্টা UGC-র

গোটা বিশ্ব গণিতের ক্ষেত্রে যেখানে নতুন উদ্ভাবনী ধারণা নিয়ে আসছে, সেখানে ভারতের শিক্ষা ক্ষেত্রে পিছন দিকে হাঁটা শুরু...
Exit mobile version