গরিবের পকেট কেটে ধনীর ঋণ মকুব! RBI রিপোর্টে ফাঁস ১৪ লক্ষ কোটি গায়েব মোদি জমানায়

২০১৪ সালের ১ এপ্রিল থেকে ২০২৪ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মোট ১৬ লক্ষ ৬১ হাজার ৩১০ কোটি টাকার অনাদায়ী (exempted) ঋণ রয়েছে

মোদি ক্ষমতায় এলেই না কি কালো টাকা উদ্ধার হবে। সেই টাকাই সরকারি পথে ঢুকবে দেশের সাধারণ মানুষের পকেটে। পকেটে হাত দিলেই ভারতবাসী টের পাচ্ছেন – নয়া পয়সাও পায়নি দেশবাসী। কালো টাকা উদ্ধার করতে রাতারাতি নোট-বন্দি করেছিলেন। কোনও কালো টাকা (black money) উদ্ধার হয়নি! বলেছিলেন আচ্ছে দিন আনবেন। কিন্তু কোথায় আচ্ছে দিন? দেশের সাধারণ মানুষ মূল্যবৃদ্ধির কোপে হাঁসফাঁস করছেন। সেই ২০১৪ থেকে ১১ বছর হতে চলল ক্ষমতায় নরেন্দ্র মোদি (Narendra Modi)। প্রতিশ্রুতিতে তো রক্ষা হয়ইনি, উপরন্তু মোদি জমানায় গায়েব হয়ে গিয়েছে দেশের ১৪ লক্ষ কোটি টাকা। সম্প্রতি এক আরটিআইয়ের (RTI) জবাবে এমনটাই জানিয়েছে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া (RBI)।

সাধারণ নিম্নমধ্যবিত্ত মানুষের জন্য আচ্ছে দিন আনতে পারেননি। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী মোদি দরাজহস্ত রাঘববোয়ালদের ঋণ মকুবে (loan exemption)। মোদি জমানায় বিগত ১১ বছরে তাঁর ঋণ মুকুবের ঠেলায় দেশের ব্যাঙ্কগুলি (banks) বঞ্চিত হয়েছে প্রায় ১৪ লক্ষ কোটি টাকার মুনাফা থেকে।

এই পরিসংখ্যান সামনে এসেছে তথ্য জানার অধিকার আইনে। পরিসংখ্যান দিয়েছে খোদ রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া (RBI)। তথ্য বলছে, ২০১৪ সালের ১ এপ্রিল থেকে ২০২৪ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মোট ১৬ লক্ষ ৬১ হাজার ৩১০ কোটি টাকার অনাদায়ী (exempted) ঋণ রয়েছে ভারতের সরকারি ও বেসরকারি ব্যাঙ্কে। এই অনাদায়ী ঋণের মধ্যে মাত্র ২ লক্ষ ৬৯ হাজার ৭৯৫ কোটি টাকা উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে। ১৩ লক্ষ ৯১ হাজার ৫১২ কোটি টাকা এখনো অনাদায়ী। এই অনাদায়ী ঋণ মুকুব করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে মোদি সরকার।

সম্প্রতি নাগরিক অধিকার আন্দোলনকর্মী প্রফুল্ল পি সারদা এই মর্মে একটি আরটিআই করেন। তার জবাবেই আরবিআই জানায়, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলিতে সবচেয়ে বেশি ঋণ অনাদায়ী। তার পরিমাণ হল ১২ লক্ষ ৮ হাজার ৬২১ কোটি টাকা। আর বেসরকারি ব্যাঙ্কগুলিতে অনাদায়ী ৪ লক্ষ ৪৬ হাজার ৬৬৯ কোটি টাকা ও আরবান কোঅপারেটিভ ব্যাঙ্কগুলিতে ৬ হাজার ২০ কোটি টাকা‌। হিসেবের খাতা থেকে এই ঋণ মুছে ফেলা হয়েছে মোদি জমানায়। মকুব করা এই টাকার বেশিরভাগই কর্পোরেট ঋণ। সরকার প্রত্যক্ষ কর বাবদ এক অর্থবর্ষে যে টাকা আয় করেছে, তার সমান অর্থই হারিয়েছে ব্যাঙ্কগুলি। এখানে বিরোধীরা প্রশ্ন তুলেছেন, প্রধানমন্ত্রীর নরেন্দ্র মোদি যে ইউপিএ সরকারকে দুর্নীতিগ্রস্ত বলে থাকেন, তো এখন নিজেদের ক্ষেত্রে কী বলবেন? ইউপিএ আমলে ব্যাঙ্কগুলির মকুব করা অনাদায়ী ঋণের পরিমাণ ছিল ২ লক্ষ কোটি টাকা। সেখানে মোদির রাজত্বে ৮ গুণ বেশি অনাদায়ী ঋণ। একই সঙ্গে মিথ্যাচার করতেও পিছপা নয় কেন্দ্রীয় সরকার। সরকার একদিকে বলছে, অনাদায়ী ঋণ আদায়ের প্রক্রিয়া চলবে। অন্যদিকে, ঋণ ‘রাইট অফ’ করা হয়েছে ব্যাঙ্কগুলিতে। লক্ষ্য, ব্যাঙ্কের ব্যালান্স শিটে ‘নন-পারফর্মিং অ্যাসেট’ কম দেখানো। ব্যাঙ্কের আর্থিক স্বাস্থ্য ভালো দেখানোর জন্য এই দ্বিচারিতা বলে অভিযোগ বিরোধীদের। আর তা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে এই আরটিআই।